দুটি অনবদ্য শারদ সংখ্যা

আসছে পুজো। প্রকাশিত হয়েছে ‘কথাসাহিত্য’ এবং ‘শতাব্দীর বাংলা’ পত্রিকার শারদ সংখ্যা। নানা বিষয়ের রচনায় সমৃদ্ধ। লিখেছেন বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিকেরা। আলোকপাত করলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

ঐতিহ্যবাহী প্রকাশন সংস্থা মিত্র ও ঘোষ। ৭৫ বছর ধরে প্রকাশ করছে ‘কথাসাহিত্য’ পত্রিকা। কিছুদিন আগেই বেরিয়েছে শারদীয় সংখ্যা। সবিতেন্দ্রনাথ রায়ের সম্পাদনায়। পত্রিকাটি মেলবন্ধন ঘটিয়েছে আভিজাত্যের সঙ্গে আধুনিকতার। স্থান পেয়েছে নানা বিষয়ের রচনা। লিখেছেন এই সময়ের বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিকরা।

আরও পড়ুন-সুরের ভেলায় সুরসাগর

শুরুতেই পুরাণকথা। ‘দেবী কৌশিকী’কে নিয়ে অনবদ্য রচনা উপহার দিয়েছেন পূর্বা সেনগুপ্ত। সহজ-সরল ভাষায় লেখা। রয়েছে গল্পের ধাঁচ। সৌম্যব্রত দাশগুপ্ত ও সৈকত নিয়োগী উপহার দিয়েছেন অসাধারণ একটি রচনা ‘টেগার্ট হত্যার প্রচেষ্টা এবং সুভাষচন্দ্র’। তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটির পিছনে রয়েছে যথেষ্ট পরিশ্রম।
আছে ভিন্ন স্বাদের পাঁচটি উপন্যাস। সায়ন্তনী পুততুণ্ডর লেখার শিরোনাম ‘জলসই’। সমস্যা-জর্জরিত একটি গ্রামের ছবি ফুটে উঠেছে। এমন একটি গ্রাম যেখানে ‘বারিশ হলেও খতরা, না হলেও খতরা’। ধরা পড়েছে সমাজের শ্রেণিবৈষম্য। চরিত্রগুলো বড়বেশি রক্তমাংসের।
জয়ন্ত দে-র ‘কানাকানি’ উপন্যাসটি বেশ মজার। একজন গুরুদেবকে কেন্দ্র করে দানা বেঁধেছে কাহিনি। উধাউ, নিমাই, গোবর্ধন, কুকি চরিত্রগুলো প্রাণবন্ত। লেখাটা একদমে পড়ে ফেলা যায়।

আরও পড়ুন-বিদেশ সফর সফল, আসছে বিনিয়োগ: কলকাতায় ফিরে বললেন মুখ্যমন্ত্রী

নারীপাচার সমাজের বড় সমস্যা। দীপান্বিতা রায়ের ‘ভদ্দরলোক’ উপন্যাসটিতে এই সমস্যার উপর আলোকপাত করা হয়েছে। বহু চরিত্রের ভিড়ে তাপসী চরিত্রটি উজ্জ্বল। লেখাটিতে অদ্ভুত টান রয়েছে।
শমীক ঘোষের ‘অপদার্থ’ এবং রাজা ভট্টাচার্যর ‘ঘরের বাইরে ঘর’ উপন্যাস দুটিও সুলিখিত। এগিয়েছে স্বাভাবিক গতিতে।
উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের নাটকের শিরোনাম ‘বিলিতি ভূত’। চন্দন এবং তার জীবিতা ও মৃতা স্ত্রীদের নিয়ে বাঁধা হয়েছে কাহিনি। সংলাপগুলো চমকপ্রদ। ছড়িয়ে রয়েছে মুচমুচে হাসির উপাদান।

আরও পড়ুন-বোনাসের দাবিতে চা-শ্রমিকদের লাগাতার আন্দোলন, পাশে তৃণমূল সাংসদ

মনোজ মিত্র, বিনোদ ঘোষালের বিশেষ রচনা, পদ্মনাভ দাশগুপ্ত, অরুণ মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। আছে চমৎকার তিনটি রম্য রচনা। প্রচেত গুপ্ত, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁরা নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করেছেন।
ভ্রমণ লিখেছেন পবিত্র সরকার। শিরোনাম ‘নিউ ইয়র্কে, প্রথম রবীন্দ্র উৎসবে’। লেখাটি পড়ে একটি মহতী আয়োজন সম্পর্কে জানা যায়। আছে আরও দুটি ভ্রমণ। পাঞ্চজন্য ঘটকের ‘বালি’ ও সফিউন্নিসার ‘চলুন নীল নদের দেশ মিশরে’।
পড়ার সুযোগ হল তিনটি বড় গল্প। শান্তনু বসুর ‘নেকলেস’, অমর মিত্রের ‘চব্বিশ-প্রহর’ এবং রামকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘সমুদ্রপথে কলকাতায় লেবেদেভ’। তিনটি তিন রকমের।
আছে কয়েকটি ছোটগল্প। মন ছুঁয়ে যায় হর্ষ দত্ত, কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়, অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী, জয়দীপ চক্রবর্তী, সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, অ্যাঞ্জেলিকা ভট্টাচার্যর লেখা।
সংখ্যাটি সমৃদ্ধ হয়েছে এই সময়ের কয়েকজন খ্যাতনামা কবির উপস্থিতিতে। জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার, শ্রীজাত, সুধীর দত্ত, ঋজুরেখ চক্রবর্তী, যশোধরা রায়চৌধুরী, বিভাস রায়চৌধুরী, সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায়, সুস্মেলী দত্ত প্রমুখর কবিতা পাঠকের কাছে এক-একটি স্বতন্ত্র যাত্রা। পাঠের পরেও বহুক্ষণ সঙ্গে সঙ্গে থাকে। সৌজন্য চক্রবর্তীর প্রচ্ছদ প্রশংসার দাবি রাখে। সবমিলিয়ে একটি অভিজাত শারদ সাহিত্যসম্ভার। দাম ২০০ টাকা।

আরও পড়ুন-নতুন সংসদ ভবনকে ‘মোদি মাল্টিপ্লেক্স’ বলা উচিত, তীব্র কটাক্ষ কংগ্রেস নেতার

চার বছরের নবীন হলেও বেশ সমাদৃত হয়ছে এই সময়ের সাহিত্য পত্রিকা ‘শতাব্দীর বাংলা’। প্রকাশিত হয়েছে শারদ সংখ্যা। প্রধান সম্পাদক তনুশ্রী ঘোষ। সংখ্যাটি বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর। লিখেছেন বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিকরা।
বিশেষ রচনায় ‘ভাষার শিষ্টাচার’ নিয়ে ভাবনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন পবিত্র সরকার। লেখাটি কয়েকটি পর্বে বিভক্ত। চমৎকার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ। নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর রচনার শিরোনাম ‘বিদ্যা নয়, বুদ্ধি’। গল্প দিয়ে শুরু। লেখাটি ধীরে ধীরে প্রবেশ করেছে বিষয়ের গভীরে।
শতবর্ষে বাঙালি বিভাগে আলি আকবর খাঁকে স্মরণ করেছেন শঙ্করলাল ভট্টাচার্য। পাশাপাশি ঋত্বিক ঘটককে নিয়ে লিখেছেন চণ্ডী মুখোপাধ্যায়। স্বল্প পরিসরে দুই অসামান্য ব্যক্তির জানা ও অজানা দিক উন্মোচিত হয়েছে। দুটি রচনাই মনোগ্রাহী।

আরও পড়ুন-অসামান্যা অসীমা

প্রণম্য বাঙালি বিভাগে স্মরণ করা হয়েছে বরেণ্য দুই সাহিত্যিককে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় লাভ করেছেন ছাত্র-অন্তপ্রাণ শিক্ষকদের সান্নিধ্য। সম্মানের সঙ্গে করেছেন শিক্ষকতার চাকরি। ‘বিভূতিভূষণের শিক্ষকরা, বিভূতিভূষণের শিক্ষকতা’ রচনায় লিখেছেন পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নানা সময় তিরবিদ্ধ হয়েছেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। জর্জরিত হয়েছেন সমস্যায়। জানা যায় অসীম গণের ‘তারাশঙ্কর কোথাও শান্তি পেলেন না’ লেখাটি পড়ে। দুটিই অতি মূল্যবান রচনা।
আছে একটি কিশোর উপন্যাস। মণিভূষণ দুয়ারীর ‘চল যাই লাল পাহাড়ের দেশে’। নাতি-নাতনি ও দাদুর গল্প। লেখাটি মনকে নিয়ে যায় কল্পনার জগতে। ছোটদের পাশাপাশি বড়দেরও ভাল লাগবে।

আরও পড়ুন-বিদেশ সফর সফল, আসছে বিনিয়োগ: কলকাতায় ফিরে বললেন মুখ্যমন্ত্রী

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় লিখেছেন গল্প। শিরোনাম ‘অপেক্ষা’। উদ্বিগ্ন এক নারীর মনে কীভাবে ঝলক দিয়ে যায় স্বার্থপরতা, দেখিয়েছে গল্পটি। এ-ছাড়াও ভাল লাগে তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়ন্তনী পুততুণ্ড, জয়ন্ত দে, অনীশ ঘোষ প্রমুখের গল্প। আছে কয়েকটি অণুগল্পও।
ছন্দছড়ার ঢেউ তুলেছেন দীপ মুখোপাধ্যায়, হাননান আহসান, সমর পাল, অশ্রুরঞ্জন চক্রবর্তী, শ্যামাপ্রসাদ ঘোষ, স্বপনকুমার রায় প্রমুখ। ছড়াগুলো শরতের ঝলমলে রোদ্দুরের মতো।
আছে দুই বাংলার প্রবীণ ও নবীন কবিদের কবিতা। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় অসীম সাহা, তসলিমা নাসরিন, কালীকৃষ্ণ গুহ, জয় গোস্বামী, শ্যামলকান্তি দাশ, সৈয়দ হাসমত জালাল, শংকর চক্রবর্তী, শ্রীজাত, বীথি চট্টোপাধ্যায়, দেবাশিস চন্দর নাম। কবিতাগুলো গভীর। ভাবায়। বারবার পড়তে বাধ্য করে। সবমিলিয়ে সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য এক আন্তরিক আয়োজন। প্রচ্ছদশিল্পী শ্যামল জানা। দাম ১০০ টাকা।

Latest article