রক্তকরবী নাটকে নন্দিনী রাজাকে বলছে, ‘‘রাজা বেরিয়ে এসো। তুমি কি অন্ধ-বধির? কোথায় কি হচ্ছে? কিছুই বুঝতে পারো না?”
ভারতবর্ষেও এরকম এক রাজা আছে। যার নাম নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি। ইনি নিজে যা ভাবছেন তাই করছেন। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে খেয়াল মর্জিতে চলছেন। বহুবছর আগে ভারতবর্ষের সব রাজনৈতিক মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় শ্রদ্ধেয় অটলবিহারী বাজপেয়ী আপনাকে বলেছিলেন, ‘‘রাজধর্ম পালন করো।”
আরও পড়ুন-গরম থেকে বাঁচতে গন্তব্য দার্জিলিং
রাজা হওয়ার বাসনায় সত্যিই কি আপনি রাজধর্ম পালন করছেন মোদিজি?
ভারতবর্ষের খেলাধুলায় অলিম্পিকের মতো মঞ্চ থেকে পদক জিতে দেশকে বিশ্ব মর্যাদা এনে দিয়েছে যে ছেলেমেয়েগুলো তারা এক অভিযোগের জন্য রাস্তায় বসে থাকল কতদিন… আপনি দেখেও দেখলেন না!
যেদিন আপনি রাজদণ্ড হাতে রাজপ্রাসাদের মতো নতুন আইনসভা উদ্বোধন করলেন সেদিনই ওদের মেরেধরে ধর্না তুলে দেওয়া হল… আপনি সাধুদের সঙ্গে সেদিন ফটোসেশন করলেন।
আরও পড়ুন-অভিযোগে অপসারিত পঞ্চায়েত প্রধান, গ্রেফতার উপপ্রধান
অভিমানে কষ্টে তারা তাদের স্বপ্নের পদকগুলো হরিদ্বারের গঙ্গায় ভাসিয়ে দেবে বলল… আপনি কানে তুলো আর পিঠে কুলো বেঁধেই রইলেন।
এই আপনার রাজধর্ম?
আচ্ছা এই ছেলেমেয়েরা যখন পদক নিয়ে এল আপনি তাদের ডেকে গলা জড়িয়ে ছবি তুললেন। সেই আপনার নাতি-নাতনির বয়সি ছেলেমেয়েরা যখন একটা অভিযোগ করছে আপনার সময় না হলেও, অন্য কাউকে পাঠিয়ে ওদের সঙ্গে কি কথা বলা যেত না?
তাহলে বেটি বাঁচাও স্লোগানের অর্থ কী?
মানলাম আপনার কথামতো এরা ভুল করছে। ভাবার বিষয় কোনটা ভুল। বাবা-মায়ের কাছে পরিবারে ছেলেমেয়েরা ভুল করেই থাকে। বাবা-মা সেই ভুল শুধরে দেন। কিন্তু ভারতবর্ষ একটা পরিবার হলে আপনি তো এখন অভিভাবক, নাকি? কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ও দেশের অভিভাবক হিসেবে আপনাকে মানতে পারছি না।
আরও পড়ুন-করমণ্ডল দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ২৩৩, চলছে উদ্ধারকাজ, ঘটনাস্থলে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব
অভিভাবকরা বুঝি এমন হৃদয়হীন নির্লজ্জ হয়?
ওরা যে অভিযোগ করছে সেটা সত্যি না মিথ্যে তা তদন্ত-সাপেক্ষ। কিন্তু তাদের এই অভিযোগ আপনি যেভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন তাতে জেনে রাখুন আগামী দিনে আপনাকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।
ভুলে যাবেন না শুধু ভোটে জিতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য আপনাকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়নি। দেশের মানুষের মান-সম্মান জীবন-জীবিকা সুনিশ্চিত করাটাই আপনার একমাত্র কাজ। কিন্তু বিগত ৯ বছর ধরে আপনার দেশের প্রতি মন নেই। শুধু রঙচঙে সেজেগুজে ভাষণ দিতে পেলেই আপনি খুশি। এটা কি আপনার দেশ চালানো হচ্ছে? নাকি ফ্যাশন প্যারেড হচ্ছে!
আরও পড়ুন-১ জুলাই থেকে কলেজে ভর্তি
আপনি কীরকম অদ্ভুত টাইপ বুঝি না। একবার ভাবুন তো পদক গলায় জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে যখন এরা বিশ্বমঞ্চে দাঁড়ায় তখন কি আপনার গর্ব হয় না? আমাদের প্রত্যেকের গর্ব এই ছেলেমেয়েগুলো। আর আপনি সেখানে নীরব হয়ে মনে করছেন খুব বুদ্ধির পরিচয় দিচ্ছেন। আজ্ঞে না। আপনার এই কাজকর্মে আপনারই সম্মান ভূ-লুণ্ঠিত হচ্ছে।
আপনাকে পাঁচদিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে সোনার ছেলেমেয়েগুলো। গোটা বিশ্ব দেখছে আমাদের। মাথা হেঁট হয়ে গেছে। এ লজ্জার হাত থেকে কবে নিষ্কৃতি দেবেন দেশবাসীকে? আপনার সমর্থকরাই তো বলে যে আপনি নাকি বিশ্বগুরু হয়ে গেছেন! গুরুর এই নিদর্শন? এই আপনি পথ দেখাচ্ছেন দুনিয়াকে, যেখানে নিজের দেশের গৌরব বয়ে আনা উজ্জ্বল নক্ষত্রসম হিরোদের দুটো ভরসার কথা বলতে পারছেন না? এমন গুরুর প্রয়োজন নেই। দেশের যেখানে সন্তানসম ছেলেমেয়েদের মান-সম্মানের খেয়াল রাখতে পারেন না।
আরও পড়ুন-ডায়ালে মোবাইল
আমাদের বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে দেখেও তো কিছু শিখতে পারেন! দেশ-হিতে যেকোনও অন্যায়ে এই মানুষটি সর্বাগ্রে আওয়াজ তোলেন। এক্ষেত্রেও উনি প্রথম এর বিরুদ্ধে পদযাত্রা করলেন। পরপর দুদিন ওঁর কর্মসূচি পালন হয়ে গেছে কুস্তিগিরদের সমর্থনে। আপনি রাজনীতি বলুন কি সমাজনীতি… বারবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করার দম লাগে— বুঝেছেন। আপনি তো রাজনীতিও জানেন না। শুধু গলার শির ফুলিয়ে চিৎকার করে নিজের ঢাক নিজেই পেটান।
আর একটা কথা না বলে পারছি না— যে সকল ক্রীড়াবিদ বিভিন্ন খেলায় প্রতিনিধিত্ব করেন, যাঁদের সাধারণ মানুষ দেবতা ভাবেন তাঁরা এই বিষয়টায় এত চুপ কেন? আপনারা বেরিয়ে আসুন। এঁদের সঙ্গে কথা বলুন এঁদের পাশে দাঁড়ান। নাহলে আগামী মনে রাখবে আপনাদের মেরুদণ্ড শাসকের রাজদণ্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
আরও পড়ুন-এসি বিকল বন্দে ভারতে, গরমে চরম দুর্ভোগ যাত্রীদের
যা-ই হোক, শেষ করি একটা কথা বলে যে, আপনার তো রাজতন্ত্রের শখ ভালই বোঝা যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষের ইতিহাস থেকে ভূগোল— সবই আপনার অপছন্দের কারণে বদল হয়ে যাচ্ছে। হয়তো একদিন সত্য-সত্যই রাজতন্ত্রের সূচনা হবে এদেশে। কিন্তু আপনি কি জানেন রাজ্য শাসন করতে গেলে রাজা মন্ত্রীর চোখ দিয়ে প্রজাদের দেখেন না। সেখানে আপনি কেমন রাজামশাই? যেখানে নিজের মন্ত্রীদের কীর্তিকলাপের খবরই জানেন না? যিনি মিডিয়ায় বুক ফুলিয়ে দেশের গর্বদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘পয়সা ফেরত দেওয়া উচিত। মেডেল তো পনেরো টাকায় পাওয়া যাবে।”
আরও পড়ুন-কাকদ্বীপে ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে একমঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
তাই বলছি রাজামশাই, বেরিয়ে আসুন, একটু নিজের চোখে দেখুন… আপনার শাসনে আমরা ভাল নেই। আমরা ভাল না থাকলে আপনি রাজা কী করে থাকবেন। ভাবুন রাজামশাই ভাবুন। ভাবা প্র্যাকটিস করুন।