ভিন্ন ধারার দুটি ছবি

অ্যাকশন-রোমান্সের ককটেল ‘অ্যানিম্যাল’। রণবীর কাপুর অভিনীত ছবিটি বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে। পাশাপাশি প্রশংসিত হচ্ছে ভিকি কৌশল অভিনীত ‘শ্যামবাহাদুর’। ছবিটি ফিল্ড মার্শালের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত। দুটি ছবি ভিন্ন ধারার। মুক্তি পেয়েছে ১ ডিসেম্বর। আলোকপাত করলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

অ্যানিম্যাল (Animal)

পিতা-পুত্রের গল্প
ঝুলিতে মাত্র কয়েকটা হিট। তবু রণবীর কাপুরকে নিয়ে প্রবল আগ্রহ। কারণ তিনি দুর্দান্ত অভিনেতা। বিভিন্ন ধরনের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। উপহার দিয়েছেন একরাশ মুগ্ধতা। সেই মুগ্ধতার রেশ থেকে গেল তাঁর সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘অ্যানিম্যাল’-এও (Animal)। কী আছে গল্পে? বাবা ব্যস্ত শিল্পপতি। সময় দিতে পারেন না ছেলেকে। অন্যদিকে বাবাকে দেবজ্ঞানে পুজো করে ছেলে। গোটা দুনিয়ার সামনে নিজের পিতৃপ্রেম তুলে ধরতে চায়। যদিও একটা সময় মোহভঙ্গ হয় তার। বাবার কাছে নিগৃহীত হতে হতে, বড় হয়ে ওঠার সময়ে বাবার ধারাবাহিক অনুপস্থিতিতে সে নিজেই ফাদার ফিগার হয়ে ওঠে। স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নেয় পরিবারের রক্ষার ভার।

রোমান্স এবং অ্যাকশন
ছেলের চরিত্রে রণবীর কাপুর। তাঁর কাস্টিং নিয়ে কোনও কথা হবে না। তিনিও সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন। ফুটিয়ে তুলেছেন যথাযথভাবে। কিছু কিছু অংশ ফিরিয়ে আনতে পারে ‘সঞ্জু’র স্মৃতি। কয়েকটি স্তর রয়েছে তাঁর চরিত্রে। রোমান্সের পাশাপাশি ফাটিয়ে করেছেন অ্যাকশন। নায়িকা রশ্মিকা। যতটা সুযোগ পেয়েছেন, কাজে লাগিয়েছেন। অনিল কাপুরকে দেখা গেছে বাবার চরিত্রে। মার্জিত অভিনয়। কখনও দোর্দণ্ডপ্রতাপ, কখনও অসহায় বাবা। জড়িয়ে পড়ছেন অনুতপ্তের জালে। চমকে দিয়েছেন ববি দেওল। এক সময়ের রোমান্টিক নায়ক এখন খলনায়কের চরিত্রে। ভাবতে অবাক লাগে, এই ববিই কিছুদিন আগে প্রায় কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন।

আবারও রক্তারক্তি
ছবির পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গা। এর আগে তিনি বানিয়েছেন ‘কবীর সিং’। সেই ছবি কাঁপিয়ে দিয়েছিল বক্স অফিস। অপ্রাপ্তি, হিংসা, প্রতিহিংসার গল্প বলতে তাঁর জুড়ি নেই। ‘কবীর সিং’ এবং ‘অ্যানিম্যাল’-এর (Animal) মধ্যে রয়েছে রক্তের সম্পর্ক। হ্যাঁ, রক্ত। কারণ রক্তারক্তি-গুলিগোলা-হাতাহাতিই দুটি ছবির মূলধন। যদিও এই বিষয়ে সাম্প্রতিক ছবিটি কয়েকগুণ টেক্কা দিয়েছে আগের ছবিটিকে। লক্ষ্যে স্থির থেকে বৈতরণী পেরিয়েছেন সন্দীপ।

ভরপুর বিনোদন
প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যেই রয়েছে পশু প্রবৃত্তি। স্বাভাবিক অবস্থায় অবদমিত থাকে। সময় বিশেষে প্রকাশ পায়। প্রকাশ পেলে পরিস্থিতি কতটা ভয়ঙ্কর হয়, দেখিয়েছে এই ছবি। দর্শকদের ভরপুর বিনোদন দিচ্ছে। ফলস্বরূপ ৩ ঘণ্টা ২১ মিনিটের ছবিটি সাফল্যের মুখ দেখেছে। বক্স অফিস রিপোর্ট বলছে, এরমধ্যে ভালই ব্যবসা করেছে। আগামী দিনে আরও লক্ষ্মীলাভ হবে।

আরও পড়ুন- অশালীন ভাষা, দিল্লি থেকে কলকাতা প্রতিবাদে উত্তাল

শ্যামবাহাদুর

সেনাবাহিনীর অনন্য চরিত্র
তারকা-ভজা বলিউড। শুধু আজ জয়, বরাবরই। তার মধ্যেই কয়েকজন অভিনেতা নিজেদের জাত চিনিয়েছেন। যেমন ওম, নাসির। সেই ধারা বজায় রয়েছে পরবর্তী সময়েও। গত এক দশকে উঠে এসেছেন বেশ কয়েকজন দক্ষ অভিনেতা। সলমন, শাহরুখ, আমিরের রাজত্বে হেঁটেছেন নিজের গতিতে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ভিকি কৌশল। সাদামাটা চেহারা। হাঁটাচলা, কথাবার্তা কোনওভাবেই নায়ক-সুলভ নয়। তবু তাঁর অস্বীকার করার উপায় নেই। তাঁকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে একটার পর একটা ছবি। সাফল্যও আসছে। সদ্য মুক্তি পেয়েছে ‘শ্যামবাহাদুর’। ফিল্ড মার্শাল শ্যাম মানেকসর-এর জীবন থেকে অনুপ্রাণিত। শ্যাম সেনাবাহিনীর এক অনন্য চরিত্র। একটি যুদ্ধের নায়ক। ছবির গল্প দানা বেঁধেছে তাঁকে ঘিরেই।

নিখুঁত অভিনয়
বলার অপেক্ষা রাখে না, নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ভিকি। ছবিতে তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। দেখতে দেখতে মাঝেমধ্যেই মনে হয়েছে, পর্দায় ভিকি? নাকি আসল শ্যাম? অভিনয় এতটাই নিখুঁত। দীর্ঘ প্রস্তুতি ছিল, বোঝাই যায়। দারুণ নকল করেছেন শ্যামের হাঁটাচলা, ভঙ্গি, আদবকায়দা। তারুণ্য থেকে বার্ধক্য চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছেন। আসলে এই ধরনের চরিত্রে তিনি যে দক্ষ, আগেও প্রমাণ করেছেন ভিকি। ‘সর্দার উধম সিং’-এর কথা মনে পড়ছে। মনে পড়ছে ‘উরি দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর কথাও। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে সেরা অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার। এই ছবির জন্য সেই সংখ্যাটা বাড়লে অবাক হওয়ার কিছু নেই। শ্যামের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সানিয়া মালহোত্রা। আটপৌরে চরিত্র। চিত্রনাট্যের দাবি মিটিয়েছেন যথাযথভাবে। ইন্দিরা গান্ধীর চরিত্রে ফতিমা সানা শেখ রেখাপাত করেছেন।

আলোকিত বিশেষ পর্ব
ছবিটি পরিচালনা করেছেন মেঘনা গুলজার। পরিচালক হিসেবে তাঁর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে না। তিনি কোনওভাবেই তথ্যচিত্র বানাতে চাননি। তাই তুলে ধরার চেষ্টা করেননি ব্যক্তি-জীবনের খুঁটিনাটি। আলোকপাত করেছেন শ্যামের জীবনের বিশেষ একটি পর্বের উপর। এই ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট সফল। তবে চিত্রনাট্য আরেকটু আঁটসাঁট হতে পারত।
গান লিখেছেন গুলজার। তাঁর গীতি কবিতায় সুরের রং লাগিয়েছেন শঙ্কর এহসান লয়। গানগুলি বেশ মনোগ্রাহী। মুখে মুখে ফিরছে।

অন্যরকমের ছবি
বাণিজ্যিক মালমশলা তেমন নেই। চড়ানো হয়নি রং। তাই এই ছবির জন্য দর্শকরা হুড়মুড়িয়ে প্রেক্ষাগৃহে ঢুকবেন, এমন প্রত্যাশা বৃথা। তবে যাঁরা একটু অন্যরকমের ছবি পছন্দ করেন, তাঁরা নিশ্চিন্তে যেতে পারেন। হলফ করে বলা যায়, এই শ্যামের বাঁশি হতাশ করবে না।

Latest article