কবিরাজিতে বায়ু, পিত্ত, কফ এই তিনটির মধ্যে বায়ু বৃদ্ধি হয় বেশি বয়সে, পিত্ত বাড়ে মাঝবয়সে, কফ বৃদ্ধি পায় শৈশবে। বয়ঃবৃদ্ধি হল শরীরে বায়ু বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। নিউরো মাসকিউলো স্কেলিটল রিফ্লেক্ট বা আমাদের শরীরের যে গতি, ক্রিয়া, প্রতিক্রিয়া এই সবকিছুর জন্য বায়ু দায়ী। শরীরে স্নায়ু, মাংসপেশি, মাংসতন্তু, অস্থি, অস্থিসন্ধি সর্বত্রই এই বায়ু সঞ্চারিত হয়। শরীরের যতরকমের ব্যথা তার জন্য মুখ্যত দায়ী হল বায়ু।
আরও পড়ুন-কালো টাকা রুখতে প্রস্তাব দিল কমিশন
কেন বাড়ে বায়ু
অত্যধিক ব্যায়াম করলে বা পরিশ্রম করলে।
খুব বেশি ফাস্টিং বা উপোস করলে।
শরীরে কোনও অংশে আঘাত লাগলে।
শৈত্য ক্রিয়া খুব বেশি করলে অর্থাৎ শীতল জল, শীতল বাতাসের সংস্পর্শে যদি শরীর বেশি আসে সেক্ষেত্রে বায়ু বাড়ে।
ক্ষয় রোগ হলে অর্থাৎ হাড়ে ক্যালসিয়াম কমে যাচ্ছে। ভিটামিন, মিনারেলস কমে যাচ্ছে, মাসলগুলোর ক্ষতি হচ্ছে তাহলে বুঝতে হবে বায়ু বৃদ্ধি পেয়েছে।
খুব বেশি রাত জাগলে বায়ু বাড়ে।
প্রাকৃতিক ডাক অর্থাৎ মল-মূত্র জোর করে আটকে রাখা বা বেগ ধারণ করলেও বায়ু বাড়ে।
যাঁরা খুব শুচিবাই তাঁদের ক্ষেত্রে এমনটা হয়।
অনেকদিনের পুরনো মশলা রান্নায় ব্যবহার করলে সেই খাবার খেলে বা বাসি খাবার খেলে বায়ুবৃদ্ধি পায়।
খুব কষা জিনিস যেমন হরীতকী, কটু বা ঝাল জিনিস, তেতো খেলে বায়ু বৃদ্ধি পায়।
বিকেলবেলায় বায়ু বাড়ে। অত্যধিক জার্নি করে বা দ্রুতগামী যানবাহনে নিয়মিত চলাচল করলে বায়ু বৃদ্ধি পায়।
বর্ষা এবং শীতে শরীরে বায়ু বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন-মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে রাজ্য
কেন বাত
বায়ুবৃদ্ধির কারণেই যখন গাঁটে গাঁটে বা অন্য কোথাও ব্যথা শুরু হয়, তাকেই বলে বাত। যেমন অস্টিওআর্থ্রাইটিস, গাউটি আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস এমন কম করে আশি রকম বাত রয়েছে। এটা পুরোটাই লাইফস্টাইল ডিজঅর্ডার। লাইফস্টাইল মডিফিকেশন এর একমাত্র সমাধান। তা সে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে ব্যায়াম, খাওয়া-দাওয়া সব।
আরও পড়ুন-যোগীরাজ্যে খেলোয়াড়দের খাওয়ার ব্যবস্থা শৌচালয়ে!
কী করবেন
শরীরের বায়ু বাড়লে সবার আগে দরকার স্থিরতা। এর জন্য জরুরি হল ধ্যান বা মেডিটেশন করা।
বায়ু রুক্ষতার কারক অর্থাৎ রুক্ষতা বৃদ্ধি পেলেই বায়ু বাড়বে কাজেই ব্যথাস্থানে তেল মালিশ করলে দ্রুত উপকার মিলবে। যেমন, এর মধ্যে রয়েছে রসুন তেল, তিলের তেল, সরষের তেল, ক্যাসটর অয়েল। এই তেলগুলির মালিশ রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid arthritis)-এর সমস্যাও কমিয়ে দিতে পারে।
শীতলতাকারক দ্রব্য বায়ু বাড়ায় কাজেই উষ্ণ শেক দিতে হবে। তেল মালিশ করে তার উপর থেকে গরম সেঁক দিলে দ্রুত উপকার মিলবে।
গাউটি অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা বাতরক্ত শরীরে ছোট অংশ ফুলছে, ব্যথা হচ্ছে— সেক্ষেত্রে দানাশস্য, অ্যানিম্যাল প্রোটিন খাবেন না।
সন্ধিবাত বা অস্টিওআর্থ্রাইটিস অর্থাৎ যখন শরীরে ডিজেনারেশন হচ্ছে বা ক্ষয় হচ্ছে। হাঁটুর জয়েন্ট বা কোমরে ইত্যাদিতে ব্যথা হয়। বৃদ্ধরা যদি অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন তাহলে ক্ষয়রোগ বাড়বে।
কারও প্রেশার, কোলেস্টেরল বেশি বা ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি রয়েছে তখন চ্যানেলগুলো ব্লক হচ্ছে। তখন বায়ু বৃদ্ধি পায়। কাজেই বেশি ফ্যাটি ফুড খাওয়া যাবে না।
কতটা পরিশ্রম এবং কতটা বিশ্রাম তার মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে।
ঘুমেরও একটা নির্দিষ্ট সময় থাকবে।
ওজন অবশ্যই কমাতে হবে। ওজন বৃদ্ধি পেলে সন্ধিস্থলে চাপ পড়বে ফলে ক্ষয়রোগ বাড়বে।
শরীরে অগ্নিবল বা মেটাবলিক ফায়ার ঠিক রাখতে হবে। ফলে যা খাবেন তার পরিপাক এবং বিপাকীয় ক্রিয়া ঠিক হবে।
কী খাবেন না
ফ্রিজে রাখা ঠান্ডা খাবার খাওয়া উচিত নয় বাতের রোগীর।
লবণ কম খান। খাবারে লবণের মাত্রা কমাতে পারলেই হাড় ক্ষয়ের মাত্রাও কমতে পারে।
চিনি খাওয়া কমান। রক্তে সুগার বাড়লে প্রদাহ দেখা দেয় অস্থিসন্ধিতে যার ফলে আর্থ্রাইটিস আরও খারাপ অবস্থায় পৌঁছয়।
ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে ব্যথা, ফোলাভাব আসে। সেক্ষেত্রে অ্যানিম্যাল প্রোটিন খাওয়া কমাতে হবে সঙ্গে সবেদা এবং ঢ্যাঁড়শ, তেঁতুল ইত্যাদি বাদ দিন কারণ এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফ্রুকটোজ যা ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়। পালংশাক এবং টম্যাটোয় থাকে প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট, এটিও ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়।
আরও পড়ুন-হাতির খবর দিতে নিয়োগ হচ্ছে গজমিত্র চালু হচ্ছে অ্যাপও
কী খাবেন
টাটকা ফল, ঘি, মধু রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খান। পর্যাপ্ত পরিমাণে সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে।
পুরনো চালের ভাত খুব উপকারী বাতের রোগীর জন্য তাই পুরনো চালের ভাত খান।
এমন খাবার বেশি মাত্রায় খান, যেগুলি হাড়ের সংযোগস্থলগুলিকে স্থিতিস্থাপক রাখতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে ঘি, অলিভ অয়েল, তিল জাতীয় খাবার। এগুলি নিয়মিত খেলে ব্যথা কমবে।
দুধ খান রোজ। দুধ খেলে এই সমস্যা একবারে অনেকটাই কমে যেতে পারে। দুধে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি, ই, কে।
আদা হাড়ের সন্ধিস্থলের ব্যথা থেকে শুরু করে পেশির ব্যথা দূর করতে খুব কার্যকরী। তাই আদা খান। এক্ষেত্রে দুধের মধ্যে আদা ও এক চিমটে হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন।
দই খান রোজ। দই শরীরে ব্যথা দূর করতে খুব কার্যকরী। কারণ এতে আছে মাইক্রোফ্লোরা নামক একটি উপাদান।