আমাদের বারো মাসে তেরো পার্বণের একটি বইমেলা অবশ্যই। বইমেলার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ অপেক্ষা করে থাকে। আর এই মেলার সূচনা তো আজকে নয়। অনেকদিন আগের কথা। যাঁরা শুরু করেছিলেন, তাঁরা সকলেই আমার বন্ধু ছিলেন। হঠাৎই তাঁরা ময়দানে বইমেলা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। ভাবতে ভাল লাগে, প্রথম বইমেলার গেটের ডিজাইন আমার করা ছিল। তখন তো এতবড় ছিল না। ক্রমশ বইমেলা বিপুল আকার ধারণ করল। কখনও ময়দানে, কখনও পার্ক স্ট্রিট পেরিয়ে একটি জায়গায় হয়ে, সবটাই ময়দানকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ময়দান তো জনসাধারণের অধীনে নয়, মিলিটারিদের অধীনে। ফলে নানারকম টানাপোড়েন পেরিয়ে বইমেলা স্থানান্তরিত হয় মিলনমেলা প্রাঙ্গণে। এখন সল্টলেকে হচ্ছে।
আরও পড়ুন-ছ’বছর বাদে ঘাসের কোর্টে ভারত, ডেভিস কাপে সামনে ডেনমার্ক
গোড়ার দিকে সাহিত্যিকরা খুব বেশি প্রাধান্য পেতেন না। পরবর্তীতে অবশ্যই সাহিত্যিকরা প্রাধান্য পেয়েছেন। তবে প্রথমদিকে বইমেলা, বাংলার প্রথমসারির সংবাদপত্রদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল নানাভাবে।
মনে পড়ে যাচ্ছে, যে বছর ময়দানে বইমেলা প্রাঙ্গণে আগুন লাগে, আমরা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম একটি কোণে। বইমেলা দেখব বলে। আর হঠাৎই আগুন লাগে। সেবছর বিখ্যাত দার্শনিক দেরিদা এসেছিলেন বইমেলা উদ্বোধন করার জন্য। তিনি এত বিপুল বইয়ের সম্ভার, অসংখ্য প্রকাশক দেখে অভিভূত, মুগ্ধ হয়েছিলেন। তা তিনি ব্যক্ত করেছিলেন। কারণ ইতিমধ্যেই কম্পিউটারে বা টেলিফোনে বইপড়া চালু হয়ে গেছিল। ফলে বইয়ের যে বাস্তবরূপ, তারই হয়তো অভাববোধ করেছিলেন দেরিদা! সেবছর সম্ভবত থিম দেশ ছিল ফ্রান্স।
আরও পড়ুন-মোহালিতে বিরাটের সেঞ্চুরি চাই : সানি
কিন্তু দুর্ভাগ্য সেবছর সামলাতে পারা যায়নি। হাজার হাজার বই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। প্যান্ডেল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিন্তু মানুষের সমর্থনে বইমেলা আবার পুনর্জীবন লাভ করে। মানুষ সব ভুলে মেলায় যোগদান করেন।
এরপর মানুষের চাহিদায়, মানুষের ভালবাসায়, মানুষের উদ্দীপনায় বইমেলার উজ্জ্বলতা বেড়েছে। বাঙালিজীবনে দুর্গাপুজো যে উন্মাদনায় পালিত হয়, বইমেলা তার থেকে কোনও অংশে কম নয়। এই বইমেলা এগিয়ে চলুক। আপামর মানুষ বইমুখী হোক।
আমরা সবাই তো দু’দণ্ড জিরিয়ে নিতে আশ্রয় খুঁজেছি বইয়েরই কাছে।