অনেকটা বাড়াইছেন বাবু, মোদের কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই গো…

এ-ছাড়া আর কী বলব! মিড-ডে মিলে বরাদ্দ বাড়ল। ৭৪ পয়সা বৃদ্ধিতে চিঁড়ে ভিজবে? বাড়ল, তাও দু’বছর বাদে। সেই বৃদ্ধির এমন বহর দেখে তাজ্জব বনে গেছি আমরা। লিখছেন সাগ্নিক গঙ্গোপাধ্যায়

Must read

মোদি জমানায় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। তার মধ্যেও কোনওরকমে নিজেকে টিকিয়ে রাখছে নিম্ন আর মধ্যবিত্ত মানুষ। এই আগুন-বাজারে নিত্যদিনের পুষ্টির কথা ভাবাও বিলাসিতা। সেখানে মিড-ডে মিলে ছাত্র-ছাত্রীদের মাথাপিছু নামমাত্র বরাদ্দ বাড়াল কেন্দ্রীয় সরকার। ‘পিএম পোষণ’ প্রকল্পে ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হতে চলেছে এই নতুন ধার্য মূল্য।

আরও পড়ুন-জঙ্গলমহলে হল বেলিয়াবেড়া থানার নতুন ভবন

কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রকের অধীন পিএম পোষণ বিভাগ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সরকারি এবং সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের দরুন মাথাপিছু বরাদ্দ ৬ টাকা ১৯ পয়সা এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির মাথাপিছু ৯ টাকা ২৯ পয়সা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে, ২০২২ সালের নভেম্বরে পূর্বের তুলনায় বরাদ্দ সামান্য বাড়ানো হয়েছিল। আগে বরাদ্দ ছিল যথাক্রমে ৫ টাকা ৪৫ পয়সা এবং ৮ টাকা ১৭ পয়সা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, যেখানে জিনিসপত্রের এত দাম, ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি কি পাবে? কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত নীতি অনুসারে সাধারণভাবে জম্মু-কাশ্মীর-সহ কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলগুলি (দিল্লি ও পুদুচেরি ছাড়া) এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি বাদে সব রাজ্যকেই এই অর্থের ৪০ ভাগ দিতে হয়। বাকি ৬০ ভাগ টাকা কেন্দ্রীয় অনুদান হিসাবে সে-রাজ্য পেয়ে থাকে।
যে কোনও মানুষ, যিনি রোজ স্থানীয় বাজারে যান, দরকারি তরকারি-সহ নানা জিনিস কেনেন ও সংসার চালান, তিনিই জানেন, এই মূল্য কোনওভাবেই যথাযথ নয়। বাজার অনুযায়ী প্রাক্ প্রাথমিক থেকে পঞ্চম পর্যন্ত মাথাপিছু অন্তত ১০ টাকা এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম পর্যন্ত মাথাপিছু অন্তত ১৫ টাকা করা উচিত। এমন অনেক প্রাথমিক স্কুল আছে, যেখানে মাত্র হাতে গোনা পড়ুয়া, সেখানে ১০ টাকাও যথেষ্ট হবে না। বর্তমান বাজারে একটি কাঁচা ডিমের মূল্য ৭ টাকার কাছাকাছি। সপ্তাহে অন্তত একটি গোটা ডিম ছাত্র-ছাত্রীদের মিড-ডে মিলে দেওয়ার কথা। ৬ টাকা ১৯ পয়সা দিয়ে কীভাবে পুষ্টিকর খাদ্য জোগান দেওয়া যায়? তাঁদের দাবি, অল ইন্ডিয়া প্রাইস ইনডেক্স (এআইপিআই) অনুযায়ী প্রতিবছর মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে মিড-ডে মিল পরিচালনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।
মিড-ডে মিল প্রকল্পে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুরা স্কুলে পুষ্টিকর খাবার পায়। ছুটির দিন বাদে সপ্তাহের প্রতিটা দিনেই সরকার নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী স্কুলের শিশুদের খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু এই মিড-ডে মিল বাবদ যে বরাদ্দ রয়েছে তা দিয়ে শিশুদের মুখে পুষ্টিকর খাবার তুলে দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে রাজ্যের স্কুলগুলিকে। মিড-ডে মিলে বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে কেন্দ্র। তাদের সৌজন্যে স্কুলে গিয়ে পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ছোট ছোট শিশুরা।

আরও পড়ুন-শীতে চুলের যত্ন

স্কুলছুটের সংখ্যা কমাতে ২০০৬ সালে সারা দেশের স্কুলগুলিতে চালু হয় মিড-ডে মিল প্রকল্প। এই প্রকল্পে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুরা স্কুলে পুষ্টিকর খাবার পায়। ছুটির দিন বাদে সপ্তাহের প্রতিটা দিনেই সরকার নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী স্কুলের শিশুদের খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু এই মিড-ডে মিল বাবদ যে বরাদ্দ রয়েছে তা দিয়ে শিশুদের মুখে পুষ্টিকর খাবার তুলে দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে রাজ্যের স্কুলগুলিকে। নিয়ম অনুযায়ী এই মিড-ডে মিলের বরাদ্দের ৬০ শতাংশ দেয় কেন্দ্র, ৪০ শতাংশ দেয় রাজ্য। দুই সরকার মিলিয়ে এ-রাজ্যের স্কুলগুলিতে প্রাথমিকের জন্য বরাদ্দ ছিল মাথাপিছু ৫ টাকা ৪৫ পয়সা। উচ্চ প্রাথমিকের জন্য বরাদ্দ ছিল মাথাপিছু ৮ টাকা ১২ পয়সা। গত বুধবার কেন্দ্রীয় সরকার দু’টি ক্ষেত্রেই বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে। প্রাথমিকের ক্ষেত্রে মাথাপিছু ৭৪ পয়সা বরাদ্দ বৃদ্ধি করে তা করা হয়েছে ৬ টাকা ১৯ পয়সা। অন্যদিকে উচ্চ প্রাথমিকের ক্ষেত্রে মাথাপিছু ১ টাকা ১২ পয়সা বরাদ্দ বৃদ্ধি করে করা হয়েছে ৯ টাকা ২৯ পয়সা। কিন্তু, এই বরাদ্দ বৃদ্ধির পরেও চড়া দ্রব্যমূল্যের এই বাজারে পরিস্থিতির যে বিশেষ বদল হবে না তা বলাই বাহুল্য। চাল সরকার সরবরাহ করলেও জ্বালানি থেকে ডাল, আলু, ডিম, সবজি, সয়াবিন, মশলা, তেল— সবকিছুই কিনতে হয় স্কুলগুলিকে। বাজারে প্রতি পিস ডিমের দাম ৭ টাকা, আলু কিলো-প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, অগ্নিমূল্য সবজি, পাল্লা দিয়ে দাম বেড়েছে তেল, মশলা ও জ্বালানির। সামান্য ওই বরাদ্দে কোনওভাবেই মিড-ডে মিলে যথাযথ পুষ্টিগুণ বজায় রাখা সম্ভব নয়।
সোজা কথায় কেন্দ্র আর পাঁচটা প্রকল্পের মতো এই প্রকল্পেও বঞ্চনা করছে। সামান্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করে সাধারণ মানুষকে আসলে ধোঁকা দিচ্ছে কেন্দ্র।

আরও পড়ুন-জঙ্গলমহলে হল বেলিয়াবেড়া থানার নতুন ভবন

স্কুলের পড়ুয়াদের যে মিড-ডে মিল দেওয়া হয়, সেই খাবারে পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে চলতি বছরেই বিভিন্ন স্কুল চত্বরে ১৪ হাজারের মতো ‘পুষ্টি উদ্যান’ তৈরি করেছে রাজ্য পিএম পোষণ দফতর। মিড-ডে মিলের বরাদ্দ থেকে পাঁচ হাজার টাকা এই পুষ্টি উদ্যান তৈরির জন্য ১৬ হাজার স্কুলকে দেওয়া হয়েছে।
বলা হচ্ছে, যে পুষ্টি উদ্যান তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে, তা নাকি যথেষ্টই সফল। শুধু পুষ্টি উদ্যানই নয়, কয়েকটি স্কুল নিজেদের পুকুরে মাছ চাষও করছে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু সত্যিটা হল, এ-ভাবে শুধু পুষ্টি উদ্যান তৈরি করে সামগ্রিক ভাবে গোটা রাজ্যের পড়ুয়াদের মুখে পুষ্টিকর খাবার তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। হাতে গোনা কিছু স্কুলেই এ-ভাবে পুষ্টি উদ্যান তৈরি করা সম্ভব। পুকুর তো দূরের কথা, শহরাঞ্চলে বেশির ভাগ স্কুলে তো মাঠই নেই! তাই, মিড-ডে মিলের বরাদ্দ যেটুকু বাড়ল, তাতে এতদিন পড়ুয়াদের পাতে যতটা খাবার তুলে দেওয়া যেত, সেটুকুও দেওয়া যাবে কিনা, সন্দেহ আছে।

Latest article