বালিঝড়

স্টার জলসায় এই সপ্তাহে শুরু হয়েছে নতুন ধারাবাহিক ‘বালিঝড়’। লেখিকা লীনা গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর পরিচিত ছকেই বুনেছেন কাহিনি। তবে এবার ত্রিকোণ প্রেমের সঙ্গে রাজনীতির সংযোগ গল্পে এনে দেবে নতুন মাত্রা— এমনটাই মনে করা হচ্ছে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন প্রীতিকণা পালরায়

Must read

পুরনো বছরের ট্রেন্ড ধরে রেখেই শুরু হয়েছে নতুন বছর। গত বছর ছোটপর্দায় পাল্লা দিয়ে যেমন বন্ধ হয়েছে চলতি ধারাবাহিক, তেমনই দর্শক দেখতে পেয়েছেন একের পর এক নতুন কাহিনিও। শুধু এই নয়, প্রায়শই পরিবর্তিত হয়েছে টাইম স্লটও। নতুনকে সুযোগ দিতে সরে যেতে হয়েছে পুরনোকে। এ-নিয়ে হইচইয়ের মাত্রা যে শুধু চ্যানেল কিংবা প্রযোজকের ঘরেই সীমাবদ্ধ ছিল তা নয়, লাগাতার ছোঁয়া লেগেছিল দর্শক-মনেও। প্রিয় ধারাবাহিককে অভ্যস্ত সময়ে দেখতে না পেয়ে তাঁরা প্রতিবাদ করেছেন একাধিকবার। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে চ্যানেলের সিদ্ধান্তই শেষ কথা। সেই ধারাবাহিকতা সঙ্গে করেই শুরু হয়েছে ‘বালিঝড়’ও। সন্ধে ছটায় এতদিন সম্প্রচারিত হত ‘নবাব নন্দিনী’। রেজোয়ান রব্বানি ও ইন্দ্রাণী পাল অভিনীত ধারাবাহিকটি মোটের ওপর জনপ্রিয় ছিল প্রথম থেকেই। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেটিকে বিকেল পাঁচটার স্লটে পাঠিয়ে দিয়ে তার জায়গা দখল করল ‘বালিঝড়’।

আরও পড়ুন-আজ কোচবিহারে আসছেন অভিষেক

প্রথম থেকেই চর্চায় ছিল ‘বালিঝড়’-এর স্টার-কাস্ট। প্রোমো প্রচারিত হওয়া থেকেই দর্শক উত্তেজিত ছিলেন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দেখে। ‘বালিঝড়’-এর মুখ্য চরিত্রে আছেন কৌশিক রায়, তৃণা সাহা ও ইন্দ্রাশিস রায়। প্রথম দুজন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন ‘খড়কুটো’ ধারাবাহিকে সৌজন্য ও গুনগুন-চরিত্রে। দর্শক তাদের নিজস্ব নামও দিয়েছিলেন ‘সৌগুন’। অপর জন ইন্দ্রাশিস রায়, সদ্য শেষ হওয়া ‘ধুলোকণা’ ধারাবাহিকের হিরো লালনের ভূমিকায় ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন। এবার এই তিনজনকে একত্রে পেয়ে সকলে দারুণ খুশি। প্রোমোতেই স্পষ্ট ছিল ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্ক আবর্তিত হবে এদের ঘিরেই। কিন্তু ধারাবাহিকটি প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্পষ্ট, শুধু এরাই নয়, সম্পর্কের চোরাস্রোত আনাগোনা করবে অপর একটি মুখ্য চরিত্র ভরত কলকে ঘিরেও। ভরত এই ধারাবাহিকে তৃণার বাবার চরিত্রে। তাঁর চরিত্রটি একজন রাজনৈতিক নেতার। নাম সমুদ্র সেন।

আরও পড়ুন-পাকিস্তান ম্যাচে অনিশ্চিত মান্ধানা, কাল বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু ভারতের

মূল গল্প অবশ্যই স্রোত (ইন্দ্রাশিস), ঝোরা (তৃণা) ও মহার্ঘ (কৌশিক)-কে কেন্দ্র করে। হাসিখুশি, ছটফটে উচ্ছল মেয়ে ঝোরা। বাবা প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিক, তাই প্রভাবশালী ও উচ্চবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা তার। কিন্তু ঝোরা নিজে ভীষণ সাদামাঠা। সাদাসিধে জীবনই তার পছন্দ। নাচতে ভীষণ ভালবাসে। কিন্তু সমুদ্র সেন চান না মেয়ে নাচ নিয়ে কেরিয়ার করুক। কারণ তাঁদের আভিজাত্যের সঙ্গে এই পেশাটা মোটেই খাপ খায় না। শুধু তাই নয়, একমাত্র মেয়ের জন্য তিনি নিজে পাত্রও পছন্দ করে রেখেছেন। তাঁর পছন্দের পাত্র মহার্ঘ্য। কিন্তু ঝোরা নিজে ভালবাসে স্রোতকে। মনেমনে নিশ্চিত স্রোতই হবে তার জীবনসঙ্গী। ঝোরা ঝর্নার মতোই স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্রোতের সঙ্গে মিশতে চায়। এর অন্যতম কারণ, ঝোরার বড্ড ভাল লাগে স্রোতের বাড়ির মানুষগুলোকেও। স্রোত ঝোরাদের মতো বড়লোক না হলেও এক বিরাট বড় পরিবারের সদস্য সে। সেই পরিবারের সদস্যরা যেমন অমায়িক, খোলামেলা, আড্ডাবাজ তেমনই সাদামাঠা মনের ঠিক যেমনটি ঝোরা নিজে। স্রোতের বাড়ির পরিবেশ তাই ঝোরার খুব ভাল লাগে। এমন যৌথ পরিবার যারা সবাই সবার জন্য ভাবে, পাশে থাকে, আভিজাত্য যাদের সারল্য কেড়ে নেয়নি। ঝোরা-স্রোত তাই প্রেমে ছিল। প্রতিশ্রুতিতে ছিল। কিন্তু সব গোলমাল করে দিলেন ঝোরার বাবা সমুদ্র সেন।

আরও পড়ুন-মন্ত্রী ঘুরে দেখলেন মেলা-প্রাঙ্গণ

ইলেকশন জিতে এসে সবাইকে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেন, তিনি চান তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি হোক তাঁর মেয়ে ঝোরা, একই সঙ্গে মেয়ের বিয়ে তিনি যে মহার্ঘ্যর সঙ্গে দেবেন ঠিক করেছেন, তা-ও জানিয়ে দেন। কারণ মহার্ঘ্য এক মেধাবী প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন যুবক যার রাজনৈতিক বুদ্ধি ক্ষুরধার। সমুদ্র সেনের রাজনৈতিক জীবনে তার অবদান প্রচুর। তিনি তাই পরিবার ও পার্টি মিলিয়ে দিতে চান তাতে তাঁরই সুবিধে হবে। মুহূর্তে সব হিসেব পাল্টে যায়। শুরু হয় টানাপোড়েন।
তবে সম্পর্কের টানাপোড়েনে আছেন সমুদ্র সেন নিজেও। যেটা বোঝা গেছে কাহিনির শুরুতেই। স্ত্রীর পাশাপাশি তাঁর পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্টের সঙ্গেও যে বিশেষ বোঝাপড়ার সম্পর্ক রয়েছে তা স্পষ্ট। এই দুই চরিত্রে আছেন ময়না মুখার্জি ও প্রীতি বিশ্বাস। স্রোতের পরিবারকে দর্শকের ভীষণ ভাল লেগেছে শুরু থেকেই। এর অন্যতম কারণ লীনা গঙ্গোপাধ্যায় সব সময়েই যৌথ পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কগুলো বোনেন খুব জমাটভাবে। দর্শক তাই চরিত্রগুলোর সঙ্গে ভারি একাত্মবোধ করেন।

আরও পড়ুন-শিক্ষার মান নেমেছে স্বীকার করেও উপাচার্য আক্রমণেই

ধারাবাহিকের অন্যান্য মুখ্য চরিত্রে আছেন তথাগত মুখোপাধ্যায়, দুলাল লাহিড়ী, মাধবী মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। মাধবী মুখোপাধ্যায় বেশ কিছুদিন বাদে ফের ফিরলেন পর্দায়। প্রযোজনা সংস্থা ম্যাজিক মোমেন্টস-এর ব্যানারে এবং লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কলমে একাধিক ধারাবাহিক এই চ্যানেলে দর্শক-মন জয় করেছিল যেমন তেমনই দীর্ঘদিন চলেছিল টিআরপি টেবিলে উপরের দিকেই স্থান পেয়ে। তার মধ্যে আছে ‘ইষ্টিকুটুম’, ‘ইচ্ছেনদী’, ‘কুসুমদোলা’, ‘শ্রীময়ী’, ‘ধুলোকণা’, ‘খড়কুটো’ ‘মোহর’ ইত্যাদি। উভয়েই আশাবাদী ‘বালিঝড়’ও সেভাবেই দর্শক পছন্দ করবেন। একই সঙ্গে আশা করছেন প্রতিপক্ষ চ্যানেলের এক সময়ের এক নম্বর ধারাবাহিক ‘মিঠাই’-এর সঙ্গে টক্করেও ‘বালিঝড়’ বিজয়ী হবে। ‘বালিঝড়’ দেখা যাচ্ছে, সোম থেকে রবি সন্ধে ছটায়।

Latest article