জলবৎ তরলং

জল যদি হয় জীবন তবে লিক্যুইড ডায়েট হল যৌবন। বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি-এর মতো এই ডায়েট ফলো করলে ছিপছিপে চেহারার সঙ্গে পেয়ে যাবেন সুন্দর ত্বকও। এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে। লিক্যুইড ডায়েট কী এবং কেন করা উচিত। কতটা উপকারী। এই সব নিয়ে বললেন ডায়েটেশিয়ান ময়ূরী রায়। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

শীত মানেই শুষ্কং কাষ্ঠং। শুকনো বাতাস, চামড়ায় টান, নেই আর্দ্রতার চিহ্ন। শরীরের সব জল লহমায় উধাও। ডিহাইড্রেটড ত্বক, হজমের সমস্যা, ওজন ঝপ করে বেড়ে যাওয়া। এই সময় ফিট অ্যান্ড ফাইন থাকতে লিক্যুইড ডায়েটের জুড়ি নেই। কিছু কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রেও তরল ডায়েট খুব জরুরি। পোস্ট অপারেটিভ কেয়ারে পেশেন্টদের লিক্যুইড ডায়েট দেন চিকিৎসকেরা।

আরও পড়ুন-শৌচাগারে উদ্ধার মানব ভ্রূণ, তদন্তে পুলিশ

লিক্যুইড ডায়েট কী
লিক্যুইড ডায়েটে হল লো ক্যালরি ফুড। লিক্যুইড অর্থাৎ রুম টেম্পারেচারে যা তরল। একে ক্লিনেস্ট ডায়েটও বলা হয়। যা আমাদের অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। ওজন কমাতে লিক্যুইড ডায়েটের জুড়ি নেই। তরল অর্থাৎ জল হতে পারে, স্মুদি, স্যুপ, গ্রিন টি, জ্যুস, শেক ইত্যাদি সবই। বিভিন্ন ফলের রস বা সবজিকে, চিকেন, টক দই সবকিছুই ব্লেন্ড করে তৈরি হতে পারে স্বাস্থ্যপোযোগী লিক্যুইড ডায়েট। এর মধ্যে নানা ধরনের ডিটক্সিফাইং ওয়াটারও থাকতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রোটিন পাউডার রাখা যেতে পারে যা লিক্যুইড ডায়েটের অন্যতম অংশ। জল বা দুধের সঙ্গে দেওয়া হয় প্রোটিন পাউডার। বেরিয়াট্রিক সার্জারি হয়েছে এমন পেশেন্টকে লিক্যুইড ডায়েট দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। তবে গোটা দিন লিক্যুইড ডায়েট না করে অন অফ পদ্ধতিতে করা যেতে পারে বা অড আর ইভন ডে করেও এতে ভাল কাজ হয়।
এছাড়াও শীতকাল মানেই পার্টিজ গোয়িং অন। শুরু হবে ব্যাক টু ব্যাক পার্টি আর সেলিব্রেশন। নাচা-গানা, নাইট আউট, ডে আউট, পিকনিক। থাকবে কেক, পেস্ট্রি, পিৎজা, কাবাবের দেদার আয়োজন। খানা আর পিনার ফাঁকতালেও দরকার একটু ব্যালান্সিং। লিক্যুইড ডায়েট তাই এই সময় বেস্ট অপশন। ওজন তো কমবেই, বাড়বে হজমশক্তি। এই সময় উইকএন্ড মানেই এক্সট্রা ক্যালরি গেইন। তাই সারা সপ্তাহ অড ডে বা ইভন ডে যদি আমরা এই ডায়েট করতে পারি তাহলে সব অনিয়মই ব্যালান্সড হয়ে উঠবে।

আরও পড়ুন-অসম-মেঘালয় সীমান্তে সন্ত্রাসের ফলে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, একাধিক জেলায় বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা

অড আর ইভন ডে
আমরা সপ্তাহে সাতদিনকে ভাগ করে নিতে পারি চারদিন ও তিনদিনে। চারদিন তরল খাদ্য বা ডায়েট ফলো করা যেতে পারে, তিনদিন সলিড। সোমবার, বুধবার, শুক্রবার সলিড এবং বাকি মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি ও রবিবার তরল। অথবা গোটা দিনে অর্ধেকটা তরল খাবার এবং বাকি অর্ধেকটা সলিড খাবার এইভাবেও হতে পারে।
ডিটক্স ওয়াটার
ভোরবেলা এক গ্লাস উষ্ণ জলে অর্ধেক লেবু চিপে খেয়ে নিলে শরীর থেকে টক্সিন ক্লিয়ার হবে। ডিটক্স টি যেমন আদা, কারিপাতা, দারচিনি জলে ফুটিয়ে ওর মধ্যে চা পাতা দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। ডিটক্স ওয়াটার তৈরি করা যেতে পারে আপেল ডিটক্স ওয়াটার খুব উপকারী। এতে থাকবে আপেল টুকরো এবং দারচিনি। ফুটিয়ে জলটা খাওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুন-এবার তেলেঙ্গানার শ্রমমন্ত্রীর বাড়িতে আয়কর হানা, বিজেপিকেই নিশানা মুখ্যমন্ত্রী কেসিআরের

কোন রোগে লিক্যুইড ডায়েট নয়
ডায়াবেটিক বা কিডনি রোগীরা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন লিক্যুইড ডায়েট করার আগে। কারণ এই ধরনের রোগীর ক্যালরি খুব মাপা থাকে সব খাবার, যে খাবারটা খান তা থেকে অনেক সময় সেই পর্যাপ্ত পুষ্টি শরীরে যায় না। ফলে দুর্বল লাগতে পারে।
মিল রিপ্লেসমেন্ট লিক্যুইড ডায়েট
কিন্তু যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁরা এটা রাখতেই পারেন খাদ্য তালিকায়। লিক্যুইড ডায়েটে মেটাবলিজম রেট উন্নত হয়। কারণ শীতকালে সিজনাল ভেরিয়েশনের শেষ নেই, দারুণ আবহাওয়া বলে সবাই ভাবেন এই সময় বুঝি প্রচুর খাওয়া-দাওয়া করা যায়। কিন্তু আসলে শীতেই খাবার হজম হওয়াটা চাপের হয়। আমাদের অ্যাপিটাইট এই সময় ঠিক থাকে না। একটু লেট নাইট পার্টি হলে সকালে খিদে পায় না বা খিদে পেলেও সলিড কিছু খাওয়া স্বাস্থ্যকর হয় না। তাই ওই সময়টা স্যুপ, ভেজিটেবল সেদ্ধ করে ব্লেন্ড করে সেই স্মুদি, ছাতুর শরবত খুব ভাল শরীরের জন্য। এতে এক্সট্রা ক্যালরি গেল না।

আরও পড়ুন-সংঘর্ষে নিহত ৭০

দুধ সহ্য না হলে বা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকলে পরিবর্তে সয়া মিল্ক বা আমন্ড মিল্ক চলতে পারে। কলা, ছাতু, আমন্ড, সয়া মিল্ক দিয়ে স্মুদি বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে। ওটসের স্মুদি খাওয়া যেতে পারে। ওটস, দুটো খেজুর, কলা একটু কিশমিশ মিক্সিতে ব্লেন্ড করে স্মুদি বানিয়ে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। দুপুরে বেশ অনেকটা সময় পেট ভরিয়ে রাখবে।
সয়া মিল্ক দ্রুত ওজন কমায়, এতে ক্যালরি কম, যাঁদের দুধ হজম হতে চায় না সয়া মিল্ক সহজপাচ্য। থাইরয়েড থাকলে সয়া মিল্কটা এড়িয়ে চলুন।
গাজর, বিট, শসা, আদা পেস্ট করে যদি একটা স্মুদি বানিয়ে নেওয়া যায় তাহলে এটা মিড মর্নিং মিল হিসেবে চলতে পারে। এছাড়া এই সময় ডাবের জল খুব ভাল।
লস্যি খাওয়া যেতে পারে। উপরে একটু বেদানা দিয়ে দিলে এক্সট্রা পুষ্টি। এরপর বিকেলের দিকে এক কাপ কফি বা গ্রিন টি খাওয়া যেতে পারে। এর ফলে বডিতে লোড বাড়বে না।

আরও পড়ুন-‘রাগের মাথায় শ্রদ্ধাকে খুন’, আদালতে আফতাবের সাফাই

পুরো লিক্যুইড ডায়েট অনেকের সহ্য নাও হতে পারে। দুর্বল লাগতে পারে, কনসেনট্রেশন ব্রেক হতে পারে। সেক্ষেত্রে রাতের খাবারটা যদি লিক্যুইড হয় ভাল। রাতের মেনুতে ভেজিটেবল স্যুপ বা চিকেন ক্লিয়ার স্যুপ, মাশরুম স্যুপ, পালং স্যুপ, টমেটো স্যুপ বা সবধরনের সবজি পালং, ফুলকপি, বাঁধাকপি সঙ্গে গাজর, বিট সব ভাপিয়ে জলটা ফেলে মিক্সিতে ব্লেন্ড করে নুন, লেবুর রস, গোলমরিচ দিয়ে বা পুরোটা ছেঁকে স্যুপটা খাওয়া যেতে পারে।
শুধু দুপুরে যদি কেউ সলিড খাবেন বলে ঠিক করে থাকেন সেক্ষেত্রে ওটস, সাবুর খিচুড়ি, চিল্লা খাওয়া যেতে পারে।
শিশু, বয়স্ক এবং যে মা সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করাচ্ছেন তাঁদের জন্য লিক্যুইড ডায়েট উপযুক্ত নয়। লিক্যুইড ডায়েট দেহকে টক্সিন মুক্ত করে। ডিটক্সিফাই করে। পেট পরিষ্কার রাখে। রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ে, মেটাবলিজম রেট বৃদ্ধি পায়।

 

Latest article