ভয়ে কাঁপছেন বিলকিস, ‘ন্যায়বিচারের প্রতি বিশ্বাস ধাক্কা খেয়েছে’

২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় বিলকিস বানোর তিন বছরের মেয়ে সহ তাঁর পরিবারের ১৪ সদস্যকে গণধর্ষণ ও হত্যার দায়ে ১১ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

Must read

নয়াদিল্লি : অবশেষে তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় তৈরি হওয়া নীরবতার ঘেরাটোপ ভেঙে বেরিয়ে এলেন গুজরাটের বিলকিস বানো। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় বিলকিস বানোর তিন বছরের মেয়ে সহ তাঁর পরিবারের ১৪ সদস্যকে গণধর্ষণ ও হত্যার দায়ে ১১ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সেই ১১ আসামিকে স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকীতে মুক্তি দিয়েছে গুজরাট সরকার। যে স্বাধীনতার সকালে লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে নারী সম্মানের পক্ষে বড় বড় কথা বলেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদি, সেদিন বিকেলেই নারী-ধর্ষণ ও খুনে দোষীদের মুক্তি দিয়েছে বিজেপি সরকার।

আরও পড়ুন-ঘুমন্ত শিশুকে তুলে মেঝেতে আছাড় জেঠিমার

মুখ আর মুখোশের আড়ালটা এভাবেই মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে। বিজেপি সরকারের সাধারণ ক্ষমা নীতির অধীনে মুক্তি অনুমোদিত হওয়ার পর এই ভয়ঙ্কর কাণ্ডের সমস্ত দোষী গোধরা জেল থেকে বেরিয়ে এসেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে তীব্র মানসিক যন্ত্রণা, হতাশা আর ক্রোধে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন স্বয়ং বিলকিস।

আরও পড়ুন-মহারাষ্ট্র উপকূলে ভেসে এল অস্ত্রবোঝাই নৌকা, ফিরল ২৬/১১-র আতঙ্ক

শেষপর্যন্ত ১১ আসামির মুক্তির বিষয়ে নীরবতা ভেঙে বিলকিস বানো বলেছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার বলার ভাষা নেই। আমার শান্তিতে, নিরাপদে ও নির্ভয়ে বেঁচে থাকার অধিকার ফিরে পাওয়া উচিত। আইনজীবী শোভা গুপ্তার মাধ্যমে জারি করা এক বিবৃতিতে বিলকিস বলেছেন, আজ আমি শুধু জানতে চাই, যেকোনও মহিলার জন্য এভাবেই কি বিচার শেষ হতে পারে? আমার দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আমার আস্থা ছিল। আমি এদেশের সিস্টেমের উপর আস্থা রেখেছিলাম এবং ধীরে ধীরে আমার মানসিক যন্ত্রণা ভুলে বাঁচতে শিখছিলাম। কিন্তু এই অপরাধীদের মুক্তি এবং তাদের উল্লাস আমার শান্তি কেড়ে নিয়েছে এবং ন্যায়বিচারের প্রতি আমার বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিলকিস বলেন, আমার দুঃখ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি নড়বড়ে বিশ্বাস শুধু নিজের জন্য নয়, প্রতিটি নারীর জন্য, যাঁরা বিচারের জন্য আদালতে লড়ছেন। এত বড় অন্যায্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কেউ আমার নিরাপত্তা ও আমার অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করেনি। বিলকিস বানো বলেন, গত ২০ বছরের মানসিক আঘাত ১৫ অগাস্ট, ২০২২-এ আবার ফিরে এল। আমি যখন জানতে পারি যে আমার জীবন যারা ধ্বংস করেছে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে, সেই ১১ আসামিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই আঘাতের প্রতিক্রিয়া জানানোর মতো কোনও শব্দ নেই, আমার ভাবনা অসাড় হয়ে যাচ্ছে। আমি গুজরাট সরকারের কাছে আবেদন করছি, দয়া করে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন। আমাকে শান্তিতে ও ভয় না পেয়ে বাঁচার অধিকার ফিরিয়ে দিন।

আরও পড়ুন-ভূমিপুত্র না হলেও মিলবে ভোটাধিকার

প্রসঙ্গত, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বুধবার গুজরাটে তাদের সংগঠনের অফিসে মালা দিয়ে বিলকিস বানো ধর্ষণ মামলায় মুক্তিপ্রাপ্ত আসামিদের স্বাগত জানায় ফুলমালা, জয়তিলকে। ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধরা ট্রেন পোড়ানোর ঘটনার পর থেকে গুজরাটে দাঙ্গা শুরু হয়। এরপর ৩ মার্চ বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ করা হয় এবং দাহোদের লিমখেদা তালুকে তাঁর পরিবারের ১৪ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছয়জনের লাশ আর পাওয়া যায়নি। বিলকিসের তিন বছরের শিশুকন্যাকে তাঁর সামনেই খুন করে এই অপরাধীরা। ২১ জানুয়ারি, ২০০৮ সালে বিশেষ সিবিআই আদালত ১১ দোষীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। এই বছরের জুনে, আজাদির অমৃত মহোৎসব উদযাপনের পরিপ্রেক্ষিতে, কেন্দ্রীয় সরকার বন্দিমুক্তি নিয়ে রাজ্যগুলিকে নির্দেশিকা জারি করেছিল। সেই নির্দেশিকাকে সামনে রেখে বিজেপি সরকার এই জঘন্য ধর্ষক ও খুনিদের মুক্তি দিল।

আরও পড়ুন-যোগীরাজ্যে বেতন অমিল স্বাস্থ্যকর্মীদের

তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, গর্ভবতী মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তার শিশুকে হত্যা করা হয়েছিল। এই ধর্ষক এবং খুনিরা স্বল্পতম সময়ের জন্যে জেলে থাকার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তারা উল্লাস করছে আর আমরা বক্তৃতা করছি কীভাবে নারীদের সম্মান করতে হয়! মহুয়ার প্রশ্ন, বিলকিস বানো একজন নারী নাকি মুসলমান তার কোন পরিচয় গুরুত্ব পেয়েছে?

Latest article