অসীম চট্টোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: কাজের সময় কাজি, কাজ ফুরোলেই পাজি। প্রবাদটার মর্ম হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন বিজেপির কর্মীরা। নেতারা তাঁদের নানা ধরনের টোপ দিয়ে কাজ গুছিয়ে নিয়ে, এখন আর চিনতেই পারেন না! ফলে মোহভঙ্গ হয়েছে দুর্গাপুরের বিজেপি কর্মীদের।
বিধানসভা ভোটের আগে অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। কাউকে চাকরি, কাউকে ব্যাঙ্কের ঋণ পাইয়ে দেওয়া থেকে সরকারি সংস্থার ঠিকা, নানা ধরনের টোপ ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় নেতারা। সেই মিথ্যে স্বপ্নের ঘোরে কয়েক মাস প্রাণপাত করেছেন শহরের কয়েকশো যুবক। কিন্তু নেতাদের গালভরা প্রতিশ্রুতির একটিও বাস্তবায়িত হয়নি গত আড়াই মাসে। আজ তাঁরা প্রবল হতাশ। বিজেপি-র মিছিলে বা জনসভায় গেলে মিলছিল নগদ টাকা। মোটরবাইকে পেট্রল ভরার টাকা ছাড়াও ছিল হোটেলে আহারের সুব্যবস্থা। ইস্পাতনগরীর শ্রীমন্ত দে, কৌস্তুভ পাল, প্রদীপ রাম, গুরদীপ সিং সানি-সহ বেশ কয়েকজন তরুণ একযোগে অভিযোগ করলেন, ভোটের আগে তাঁদেরকে নানান মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে দলে টেনেছিল পদ্মশিবির।
আরও পড়ুন-হোটেলেই ‘বন্দি’ প্রতিনিধিরা, আইপ্যাক কাজ চালাবে ত্রিপুরায় থেকেই
বিজেপি প্রার্থী দীপ্তাংশু চৌধুরির সমর্থনে তাঁরা প্রাণপাত করেছেন। পদ্ম শিবির রাজ্যে ক্ষমতাতে এসেই গিয়েছে এমন একটা মনোভাব নিয়ে দলের নেতারা তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। কিন্তু ২৬ এপ্রিল ভোট মিটে যাওয়ার পরই দীপ্তাংশুরা সেই যে গা-ঢাকা দিলেন, আজ অবধি টিকিটি মিলছে না। ছোটখাটো ঠিকাদারির কাজ করেন শিখ তরুণ গুরদীপ। তাঁকে ইন্ডিয়ান অয়েল এবং দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় বড় কাজের বরাত পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সেই আশায় নিজের কাজকর্ম ছেড়ে দীপ্তাংশুর সমর্থনে প্রচার করেছেন। কিন্তু নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকে আর নাকি ফোনই তুলছেন না এই দলবদলু বিজেপি প্রার্থী। প্রভাত মণ্ডল নামে এক তরুণ বলেন, বারবার দল বদলানো এই মানুষটাকে বিশ্বাস করেই বিরাট বড় ভুল করেছিলাম। যেদিন উনি দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রে বিজেপি-র টিকিট পেলেন, সেদিনই পুরো বিধানসভা এলাকা জুড়ে বিশাল বিক্ষোভ হয়েছিল দলেরই এক বড় অংশের। তারপরেও অনেক আশা নিয়ে ওঁর হয়ে খেটেছি, কিন্তু যে মানুষটার ন্যূনতম জনভিত্তি নেই, তাঁকে জেতানো কি সহজ ! এখন দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক ও জেলা বিজেপি সভাপতি লক্ষ্ণণ ঘোড়ুইও আমাদের ফোন ধরছেন না।
আরও পড়ুন-ট্যাক্সির ভাড়া বাড়ানোর দাবি বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের, না বাড়ালে ধর্মঘটের ডাক
এদিকে দীপ্তাংশু বাবুর বিরুদ্ধে তোলা তাঁরই দলের কর্মীদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে তাঁকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি, এমনকি এসএমএস-এরও জবাবও দেননি। তবে এই ধরনের অভিযোগ যে শুধু দীপ্তাংশুর বিরুদ্ধেই উঠছে, তা নয়। ভোটের মুখে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে নাম লেখানো জিতেন্দ্র তিওয়ারির বিরুদ্ধেও একই রকম অভিযোগে সরব হয়েছেন পাণ্ডবেশ্বর, লাওদোহা ইত্যাদি এলাকার বেশ কয়েকজন দলীয় কর্মী। বিজেপিতে গিয়ে তাঁদের মোহভঙ্গ হয়েছে। এদিকে ফের ঘাসফুল শিবিরে ফেরার রাস্তাটাও এই মুহূর্তে খুব একটা মসৃণ নয় বলেই তাঁদের ধারণা। দলত্যাগীদের ফের তৃণমূলে ফেরানোর প্রশ্নে দলের অবস্থান সম্পর্কে দলের তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক ভি শিবদাশন দাশু বলেন, ‘বেকার ছেলেদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দলে টেনেছিল বিজেপি, ওটাই ওদের সংস্কৃতি। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেভাবে মিথ্যা ভাঁওতা দিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছেন, সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই ওদের দলের সব ওজনের নেতাই শুধু মিথ্যার বেসাতি করে চলেছেন। তবে অনেক দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই যে বিজেপি নিয়ে ওদের মোহভঙ্গ হয়েছে এটাই মঙ্গল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সকলকেই রাজ্যের উন্নয়ন যজ্ঞে সামিল হতে হবে। বিজেপির দপ্তরগুলোতে বাতি জ্বালানোরও কেউ থাকবে না।’