প্রতিবেদন : দুর্নীতির প্রশ্নে জিরো টলারেন্সের কথা বলে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিতে ইডি ও সিবিআইকে দিয়ে সাঁড়াশি আক্রমণ চালাচ্ছে মোদি সরকার। অথচ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেই দুর্নীতির পর্দাফাঁস যাঁরা করছেন তাঁদের শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। বিজেপি করলে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও নিষ্ক্রিয় থাকছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। বিজেপির এই চরম দ্বিচারিতার সর্বশেষ উদাহরণ মধ্যপ্রদেশের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ আনন্দ রাই। ২০১৩ সালে মধ্যপ্রদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা নিয়োগ দুর্নীতি ব্যাপম কেলেঙ্কারি সামনে আনা ‘হুইসেল ব্লোয়ার’ ছিলেন এই চিকিৎসক।
আরও পড়ুন-নৃশংসভাবে হত্যা একাধিক কুকুরকে,হাওড়ায় চাঞ্চল্য
বিজেপি জমানার নিয়োগ দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করা ইন্দোরের হুকুমচাঁদ সরকারি হাসপাতালের সেই চক্ষু বিশেষজ্ঞ আনন্দ রাইকে বরখাস্ত করেছে মধ্যপ্রদেশ সরকার। রাজ্যের বিজেপি সরকারের দাবি, চিকিৎসক আনন্দ রাই সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এবং অন্যান্য সরকারি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন। দুর্নীতির খবর প্রকাশ্যে আনার ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গী ছিলেন আশিস চতুর্বেদী।
আরও পড়ুন-বাড়ছে প্যান-আধার সংযুক্তিকরণের সময়সীমা
মধ্যপ্রদেশে যে বোর্ড বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় চাকরি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে থাকে তার সংক্ষিপ্ত নাম ব্যাপম। অভিযোগ, ওই সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ এবং অন্যান্য দুর্নীতির জাল ছড়িয়ে ছিল রাজ্যের প্রতিটি কোনায়। তদন্তে দেখা যায়, বিজেপির মন্ত্রী, নেতা, বিধায়ক সাংসদ, এমনকী, আমলারাও লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দেদার চাকরি বিক্রি করেছেন। অযোগ্য প্রার্থীদের প্রক্সি হিসেবে পরীক্ষায় ছদ্মবেশী পরীক্ষার্থী বসিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে। ওই কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ হবার পর এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত অন্তত ১৬ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। সেইসব খুন ধামাচাপা দিতে সক্রিয় বিজেপি সরকার।
আরও পড়ুন-সবরীমালা মন্দির থেকে ফেরার পথে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, জখম ৬২
ব্যাপম কেলেঙ্কারির সেই হুইসল ব্লোয়ার আনন্দ রাইকে বরখাস্ত করার নোটিশ পাঠিয়েছে শিবরাজ সিং সরকার। ওই নোটিশে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং ও কিছু সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন আনন্দ। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত চলাকালীন গতবছরই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। সম্প্রতি তদন্ত শেষের পর কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্টে রাইয়ের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সমস্ত অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। সেই কারণেই তাঁকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত।
আরও পড়ুন-সিঙ্গুর থেকে পথশ্রী-রাস্তাশ্রী প্রকল্পের সূচনা মুখ্যমন্ত্রীর, তৈরি হবে কর্মসংস্থান
বরখাস্ত হওয়ার খবর জানার পর আনন্দ বলেছেন, দুর্নীতির পর্দা ফাঁস করার জন্য তিনি পুরস্কার পেয়েছেন। আনন্দের দাবি, তিনি আদিবাসীদের মধ্যে তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছিলেন। যা সহ্য হয়নি রাজ্যের বিজেপি সরকারের। একইসঙ্গে এই বরখাস্ত হওয়া চিকিৎসক জানিয়েছেন, তিনি এবার নির্বাচনে লড়বেন। চক্ষু বিশেষজ্ঞ আনন্দের বিরুদ্ধে দু’টি ফৌজদারি মামলা চলছে। তাঁকে সবরকমভাবে হেনস্তা করছে বিজেপি সরকার।