ধর্ম নিয়ে শাসকের উন্মাদনা, শঙ্কা ও দোলাচলে সংখ্যালঘুরা

উপলক্ষ অযোধ্যা, মেরুকরণ গোটা দেশে চায় বিজেপি

Must read

প্রতিবেদন : একদিকে যখন রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠাকে ঘিরে উৎসাহ আর উন্মাদনার পরিবেশ গোটা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাইছে কেন্দ্রের শাসক দল, তখন অযোধ্যা জেলার ৪ লাখ মুসলিম মানুষের মনে দোলাচল আর আশঙ্কার মেঘ। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সংখ্যাগুরুর ধর্মীয় উদযাপনে যেভাবে গোটা সরকার সরাসরি যুক্ত হয়ে পড়েছে এবং শাসক দল লোকসভা ভোটের আগে সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক পুঁজি হিসাবে ব্যবহারের চেষ্টা করছে তাতে সংশয়ে বহু মানুষ। রামমন্দির (Ram Mandir ) প্রতিষ্ঠার কর্মসূচিকে স্বাগত জানিয়েও অযোধ্যার সাধারণ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ চাইছেন, ধর্মের ভিত্তিতে বিদ্বেষ আর বিভাজন যেন না বাড়ে, পারস্পরিক সৌহার্দ্য যেন অক্ষুণ্ণ থাকে।
রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান ঘিরে গোটা অযোধ্যায় তৈরি করা হয়েছে কঠিন নিরাপত্তা বলয়। চারদিকে খাকি পুলিশের ভারী বুটের আওয়াজ আর ধর্মীয় স্লোগান। প্রশাসন আশ্বাস দিলেও এখানকার বহু মানুষের স্মৃতিতে আজও রয়েছে ১৯৯২ সালের ভয়াবহতা এবং তার পরবর্তী ঘটনার ছবি।

আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে কলকাতায় সর্বধর্মের জনজোয়ার,  জেলাতেও তুমুল উদ্দীপনা

একথা অনস্বীকার্য যে রামমন্দিরকে (Ram Mandir ) ঘিরে গোটা অযোধ্যা এলাকায় ধর্মীয় পরিচিতির বাইরেও বিশেষ আবেগ কাজ করে। মন্দিরকে কেন্দ্র করে আর্থসামাজিক উন্নয়নের আশায় রয়েছেন বহু মানুষ। কিন্তু উৎসবের উন্মাদনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর রামমন্দিরকে দেখিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দল রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা করবে না, এমন কথা অযোধ্যার কোনও মানুষই হলফ করে বলতে পারছেন না। একটি আপাত-অকিঞ্চিৎকর মসজিদ আর তাকে ঘিরে তৈরি হওয়া হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কীভাবে পাল্টে দিয়েছিল ভারতের রাজনীতিকে, সেই তর্ক এখনও জারি রয়েছে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদের উপর আক্রমণ হয়। দাবি করা হয়েছিল, এই স্থানে রামমন্দির ছিল। তারপর গত ৩১ বছরে সরযূ নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। গত তিন দশক ধরে অযোধ‌্যাকেই হিন্দুত্বের রাজনীতির আঁতুড়ঘর হিসাবে তুলে ধরেছে বিজেপি। রামমন্দিরের আবেগ ব্যবহার করে অন্য সমস্ত সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার রাজনৈতিক চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। তড়িঘড়ি লোকসভা ভোটের আগে অসম্পূর্ণ মন্দির উদ্বোধনও সেই লক্ষ্য সামনে রেখে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দৌলতে বিতর্কিত জমিতে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে নতুন রামমন্দির। আরও একটি লোকসভা ভোটের মুখে অযোধ‌্যাকে ঘিরে হিন্দুত্বের রাজনীতির পুনর্জাগরণ হওয়া নিয়ে আশাবাদী গেরুয়া শিবির। আর তাদের এই উন্মাদনা দেখে সংখ্যালঘু মানুষের মনে প্রশ্ন, মেরুকরণের হাওয়ায় রাজনৈতিক লাভের রুটি সেঁকতে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিভেদের বিষ ছড়িয়ে দেওয়া হবে না তো?
ইকবাল আনসারি নামটা রামমন্দির মামলার সূত্রে অনেকের কাছেই পরিচিত। রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ জমি মামলায় তিনি ছিলেন অন্যতম মামলাকারী। আর সেই ইকবাল আনসারি জানালেন, সবই দেখছি, প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজে থাকছেন। অযোধ্যাও সেজে উঠেছে। এলাকার উন্নয়ন হচ্ছে সেটাও দেখছি। তবে সব মিটে গেলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে সেটা নিয়ে নিঃসংশয় নই। ইকবালের কথায়, এতদিন আমরা অযোধ্যাতে হিন্দু-মুসলিম সকলেই একসঙ্গে পাশাপাশি বসবাস করেছি। কিন্তু রামমন্দিরের উন্মাদনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতে থাকলে ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি বজায় থাকবে কিনা তা নিয়ে চিন্তা রয়েছে।

Latest article