প্রতিবেদন : হার নিশ্চিত বুঝে উসকানি ও হিংসার প্ররোচনা ছিল বিজেপির। কিন্তু তা সত্ত্বেও ছোটখাটো অশান্তির ঘটনা বাদ দিলে এ রাজ্যে চতুর্থ দফার (Lok Sabha Election 4th election) ভোট ছিল শান্তিপূর্ণ। প্রথম তিন দফার মতোই সোমবার চতুর্থ দফার ভোটে রাজ্যে বড় কোনও অশান্তির খবর নেই। কয়েকটি জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর মাস্তানি, বিজেপির নেতা-কর্মীদের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে ভোট দিলেন মানুষ। সোমবার ছিল এ-রাজ্যের কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বোলপুর, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল ও বহরমপুর কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। এই ৮ আসনে নির্বাচন মোটামুটি শান্তিতেই শেষ হয়েছে। এদিন সবচেয়ে বড় অশান্তির ঘটনা ঘটে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের অন্তর্গত মন্তেশ্বরের টুলা গ্রামের একটি বুথে। বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ সেখানে উপস্থিত হয়ে উত্তেজনা ছড়ালে মানুষ প্রতিবাদ করে। তারপর মারমুখী হয়ে উঠে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর মারে মাথা ফাটে এক তৃণমূল কর্মীর। স্থানীয় তৃণমূলকর্মী এবং গ্রামবাসীদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোটগ্রহণ (Lok Sabha Election 4th election) চলছিল৷ এলাকায় এসে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করেন দিলীপ ঘোষ৷ বিজেপি প্রার্থীকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভও শুরু হয়৷ উঠে গো ব্যাক স্লোগান৷ অভিযোগ, তখনই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা গ্রামবাসীদের উপরে লাঠিচার্জ শুরু করে৷ এরপর উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়৷ আহত ওই গ্রামবাসীকে বিজেপি প্রার্থীর গাড়ির সামনে শুইয়ে বিক্ষোভ শুরু করে গ্রামবাসীরা৷ পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। দুর্গাপুরে তানসেন রোডের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের ক্যাম্প অফিস ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠল বিজেপি ও সিপিএমের বিরুদ্ধে। তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, তারা যখন মধ্যাহ্নভোজে গিয়েছিলেন সেই সুযোগে বিজেপির বহিরাগত বাইকবাহিনী নিয়ে এসে তাদের মহিলাদের উপর হামলা চালায় এবং ক্যাম্প অফিসে ভাঙচুর করে। তৃণমূলের আরও অভিযোগ, এই ঘটনায় তাঁদের বেশ কয়েকজন মহিলা কর্মী আহত হয়েছেন। ঘটনার পর বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেলেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মেলেনি। বহরমপুর থেকেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর লাঠিচার্জের অভিযোগ এসেছে। বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ভরতপুর বিধানসভার কুলুরু গ্রামে ১৫৫ নম্বর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা সাধারণ ভোটারদের মারধর করে। ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। নদিয়ার পলাশিপাড়ার একটি বুথে অভিযোগ উঠে, সেখানে ইভিএমের বোতাম টিপলে ভোট বিজেপিতে চলে যাচ্ছে। এই নিয়ে তৃণমূল-সহ সাধারণ ভোটাররা তীব্র প্রতিবাদ করেন। পূর্বস্থলী ১ নম্বর ব্লকের বিদ্যানগর গয়ারাম দাস বিদ্যামন্দিরে ২৮ নম্বর বুথে আলো না থাকার অভিযোগ উঠে। অভিযোগ করেন স্বয়ং রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি ভোট দিয়ে বেরিয়েই গোটা বিষয়টি কমিশনে জানান। এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে এদিন। ভোট চলাকালীনই বীরভূমের জাজিগ্রামের ২০৩ নং বুথে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওই জওয়ানের। ওই জওয়ানের নাম মহেন্দ্র সিং, বাড়ি উত্তরাখণ্ডে। এএসআই পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। সোমবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। মেমারিতে সর্পদংশনের শিকার এক ভোটকর্মী। মেমারির ১২১নং বুথের থার্ড পোলিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। নাম ভোলানাথ রজক। বর্ধমান হাসপাতালে তিনি আপাতত চিকিৎসাধীন।
এদিন এ-রাজ্যের পাশাপাশি গোটা দেশের ৯টি রাজ্য ও ১টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ৯৬টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়। কমিশনের তথ্য বলছে, চতুর্থ দফায় বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এ-রাজ্যে ভোট পড়েছে ৭৫ শতাংশের কিছু বেশি। ভোট পড়ার নিরিখে এখনও পর্যন্ত বাংলাই দেশের মধ্যে একনম্বরে। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে।
আরও পড়ুন- বোরখা সরিয়ে পরিচয়পত্রের ছবি মেলাচ্ছেন! বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের