প্রাঙ্গণ জুড়ে ব্যস্ততা
মাঝে মাত্র একটি দিন। তারপর ২৮ জানুয়ারি, মঙ্গলবার, বিধাননগর বইমেলা প্রাঙ্গণে শুরু হবে ৪৮তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। উদ্বোধন করবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারের থিম কান্ট্রি জার্মানি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জার্মানির বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত থাকবেন। পাশাপাশি থাকবেন পশ্চিমবঙ্গের কবি, সাহিত্যিক, গুণিজন এবং মন্ত্রীরা। এই মুহূর্তে তুমুল ব্যস্ততা মেলা প্রাঙ্গণ জুড়ে। জোরকদমে চলছে স্টল তৈরির কাজ। বইমেলায় থাকবে প্রায় ১০০০ স্টল ও টেবিল। অংশ নেবে ছোট, বড়, মাঝারি প্রকাশক ও লিটল ম্যাগাজিন। বেচা-কেনা, লেখক-পাঠক মুখোমুখি— সবমিলিয়ে এক আনন্দ আয়োজন। এই বইপুজো চলবে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
আরও পড়ুন-মোদিরাজ্যে কারখানা থেকে উদ্ধার ১০৭ কোটির মাদক
অতিরিক্ত বাস-মেট্রো
আয়োজক সংস্থা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে জানালেন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারি থেকেই বইপত্র মেলায় ঢুকতে শুরু করবে। আশা করি ২৮ জানুয়ারি, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগেই মেলা পুরোপুরি সেজে উঠবে। এবার কয়েকটি নতুন প্রকাশন সংস্থা অংশ নিচ্ছে। থাকছে ২০০-র বেশি লিটল ম্যাগাজিন। লিটল ম্যাগাজিনকে টেবিল দেওয়া হচ্ছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। বইপ্রেমীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য অন্যান্য বছরের মতো এবারও পরিবহণ দফতর অতিরিক্ত বাস চালাবে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ চালাবে অতিরিক্ত মেট্রো।
মেলায় প্রথমবার
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় জানালেন, কিছু পুরোনো প্রকাশন সংস্থা বাদ পড়েছে। জায়গা পেয়েছে বেশকিছু নতুন প্রকাশন সংস্থা। তারা মেলায় অংশ নিচ্ছে প্রথমবার। জার্মানির প্রায় পঞ্চাশজন প্রতিনিধি যোগ দেবেন। এটা আমাদের বড় প্রাপ্তি হতে চলেছে।
সাহিত্য সম্মাননা
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাহিত্য সম্মাননা প্রদান করা হবে সাহিত্যিক আবুল বাশারকে। প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানালেন, আমি আনন্দিত। মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে সম্মাননা গ্রহণ করব ভেবে ভাল লাগছে। আমার কাছে সৌভাগ্যের ব্যাপার। আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার পরিচালন সমিতি এই সম্মাননা দিচ্ছে। এর আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। প্রসঙ্গত, বইমেলায় দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর নতুন উপন্যাস ‘পোড়া মাটির ঘোড়া’।
শীর্ষেন্দু-সঞ্জীবের বই
সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কয়েকটি বই প্রকাশিত হচ্ছে। কথা হল তাঁর সঙ্গে। জানালেন, এবার বেশ কয়েকদিন বইমেলায় যাবেন। অনুষ্ঠান আছে। আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর তিনটি বই— ‘উপন্যাস সমগ্র’, ‘গত জন্মের বৌ’, ‘এক আশ্চর্য ফেরিওয়ালা’। সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের নতুন বই ‘আরো মামা’, ‘দক্ষিণেশ্বরে আমার সেই দিনগুলি’, ‘মা সারদা’, ‘আমি ও আমি’, ‘রাজনৈতিক রঙ্গব্যঙ্গ’ পাওয়া যাবে পত্রভারতী স্টলে।
সমরেশের গীতি-কবিতা
সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের গল্প, উপন্যাস, নাটক, ব্যক্তিগত গদ্যের সঙ্গে পরিচয় আছে সাধারণ পাঠকের। তবে তাঁর কবিতার সঙ্গে অনেকেরই বিশেষ পরিচয় নেই। তাঁর প্রয়াণের পরে প্রকাশিত হয়েছে কবিতার বই। কলকাতা বইমেলায় পত্রভারতী স্টলে পাওয়া যাবে তাঁর গোপন খাতা থেকে উদ্ধার হওয়া ১০০ গীতি-কবিতার আশ্চর্য সম্ভার ‘জলসা’।
মেলায় নতুন
বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত হচ্ছে বেশকিছু নতুন বই। কিছু ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স-এর স্টলে পাওয়া যাবে প্রচেত গুপ্তর ‘ফেসবুকে নেই’, সিজার বাগচীর উপন্যাস ‘হঠাৎ দেখা’। জয়ন্ত দে-র ‘মাতৃপক্ষ’ উপন্যাসে তুলে ধরা হয়েছে একদল মায়ের কথা। দে’জ পাবলিশিং-এর স্টলে পাওয়া যাবে বইটি। দিব্যেন্দু ঘোষের ‘রমণী গাঁয়ের রূপকথা ও অন্য গল্প’ পাওয়া যাবে অণিমা প্রকাশনীর স্টলে। বিতস্তা ঘোষালের ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘সার্কাস সম্রাট ও সুশীলা সুন্দরী’। আজকাল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট পরাধীন ভারতবর্ষ। চুমকি চট্টোপাধ্যায়ের ছোট গল্পের সংকলন ‘তস্কর’ পাওয়া যাবে টাইমলাইন প্রকাশনার স্টলে। গদ্যে-পদ্যে ঠাসা হস্তী সংখ্যা নিয়ে আসছে ‘কিঞ্জল’ পত্রিকা। এদিকে বইমেলায় কবি-লেখক-শিল্পী-পত্রপত্রিকার হালহদিশ দিতে তৈরি ‘সাহিত্যের ইয়ারবুক’ এবারের ভূমিকা বারিদবরণ ঘোষের, প্রচ্ছদশিল্পী হিরণ মিত্র।
ডিজিটাল মানচিত্র
দেখতে অনেকটা চশমা-চোখো বাঙালি পড়ুয়ার মতো। এক জন পুরুষ, অন্য জন নারী। দুজনেই আবার হাঁসের আদলে। কলকাতা বইমেলার আসরে এই দুটি হাঁসই রয়েছে ম্যাসকট হিসাবে। জোরদার প্রচার করছে। জানা গেছে, বইমেলায় আলাদা ম্যাসকট জোন থাকবে। টি-শার্ট, কাপের মতো সামগ্রীতেও ম্যাসকটের মাধ্যমে বইমেলার প্রচার চলবে। বইপ্রেমীদের ভিড় সামলাতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। স্টল খুঁজে পেতে এবার থাকছে ডিজিটাল মানচিত্র।
আরও পড়ুন-ইঞ্জিনিয়ার নয়, মিস্ত্রিদের দিয়েই নির্মাণ! ক্ষুব্ধ মেয়র
চির তরুণ
প্রতি বছর সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য একটি দিন নির্ধারিত থাকে। এবার সিনিয়র সিটিজেন দিবস ‘চির তরুণ’ উদযাপিত হবে ৪ ফেব্রুয়ারি। লেখক, প্রকাশক ও পাঠকদের নিয়ে থাকবে আলোচনাসভা। মেলা কমিটি মনে রেখেছে ছোটদের কথাও। তাদের জন্য থাকছে আলাদা প্যাভেলিয়ন। মেলার প্রথম রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারি উদযাপিত হবে শিশু দিবস। বড়দের হাত ধরে ছোটরা আসবে। কিনবে পছন্দের বই।
বিকল্প নেই
মেলায় থাকছে মোট ৯টি গেট। প্রতিটি গেট দিয়েই ঢোকা এবং বেরোনো যাবে। একটি গেট হচ্ছে জার্মান সাহিত্যিক গ্যেয়েটের নামে, আরেকটি গেট জার্মান ভাষাবিদ ম্যাক্সমুলারের নামে। বইমেলায় উদযাপিত হবে নারায়ণ সান্যাল, সলিল চৌধুরী, ঋত্বিক ঘটক, তপন সিনহা, অরুন্ধতী দেবীর জন্মশতবর্ষ এবং কাজী নজরুল ইসলাম ও জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্মবর্ষ পূর্তি। প্লে স্টোরে আছে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার অ্যাপ। বইমেলা সরাসরি ভার্চুয়ালি দেখা যাবে গিল্ডের সোশ্যাল মিডিয়া পেজ এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ সাহিত্য উৎসব। অনুষ্ঠিত হবে ৬-৮ ফেব্রুয়ারি। এছাড়াও বিভিন্ন মঞ্চে প্রতিদিন আয়োজিত হবে কবিতাপাঠ, আলোচনা, বইপ্রকাশ অনুষ্ঠান। থাকছে ফুডস্টল-সহ অন্যান্য স্টল। তবে বাঙালির এই চতুর্দশ পার্বণের প্রধান আকর্ষণ বই। শোভা পাবে স্টলে স্টলে। হাতছানি দেবে পাঠকদের। আজও বইয়ের কোনও বিকল্প নেই— মনে করেন লেখক-পাঠক-প্রকাশকরা। কড়া নাড়ছে বইমেলা। আশা করা যায়, এবারের মেলা ভেঙে দেবে অতীতের সমস্ত রেকর্ড।