বাংলার মানচিত্রের বিবর্তন

বাংলার ইতিহাস অতি প্রাচীন। অথর্ববেদে পাওয়া যায় প্রথম বর্ণনা। এখানকার গৌরব পৃথিবীর বিস্ময়। নানা কারণে পবিত্র এই মাটিকে বারবার কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। বিবর্তিত হয়েছে মানচিত্র। লিখলেন ফাল্গুনী দে

Must read

বঙ্গ আমার জননী আমার
ভারতবর্ষের অঙ্গরাজ্য হিসেবে বঙ্গদেশ সাহিত্য এবং সংস্কৃতির পীঠস্থান। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা-বিধৌত নদীমাতৃক বাংলার এই মাটি পুণ্যভূমি। যুগে যুগে, কালে কালে বহু ভিনদেশি এই মহামানবের সাগরতীরে পা রেখেছেন— কেউ ধর্ম প্রচার করতে, কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য করতে, কেউ শাসকের আড়ালে শোষণ করতে। ইউরোপীয়রা এই বঙ্গদেশকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী বাণিজ্যিক দেশ হিসেবে মনে করত। এই বাংলার সম্পদ একদিন ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। বাংলাকে মিশরের সঙ্গে তুলনা করে ১৬৬৬ সালে ফ্রান্সিস বার্নিয়ার লিখেছিলেন— ‘‘প্রাচীনকাল থেকে অনেকেই মিশরকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ হিসেবে বর্ণনা করে এসেছে, কিন্তু পরপর দু’দফায় এই বঙ্গভূমি পরিভ্রমণ করে আমার মনে হয়েছে প্রকৃতির দাক্ষিণ্য ও সম্পদের প্রাচুর্যে ভরপুর এমন দেশ এই পৃথিবীতে দুটি নেই।”

আরও পড়ুন-পয়লা পার্বণ ও বাবুবিলাস

এরপর বাংলার বরেণ্য লেখকরা স্তুতি গাইলেন। রবীন্দ্রনাথ লিখলেন— ‘‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।” মধু কবি বললেন— ‘‘হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন…”। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় মায়ের তুলনা টানলেন— ‘‘বঙ্গ আমার জননী আমার।” অতুলপ্রসাদ সেন গাইলেন— ‘‘তোমার চরণ-তীর্থে মাগো আজি জগৎ করে যাওয়া আসা।” রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ লিখলেন— ‘‘আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে এই বাংলায়।”
বাংলার এই গৌরব গোটা পৃথিবীর বিস্ময়। প্রাকৃতিকভাবে গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্র বাংলাকে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করলেও শাসকের ব্যক্তিস্বার্থ এই বাংলার মাটিকে বারবার কাটাছেঁড়া করেছে। পলাশির প্রান্তর থেকে বঙ্গভঙ্গ, দেশভাগ পেরিয়ে একাত্তরের ভাষা আন্দোলন পর্যন্ত বহু রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ইতিহাস বাঙালি আজও ভোলেনি।

আরও পড়ুন-বাঙালির নিজস্বতা

ম্যাপ সাহেবের ‘ইন্দোইস্তানি’
বাংলার ইতিহাস সুপ্রাচীন। প্রায় ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অথর্ববেদে অঙ্গ, বঙ্গ এবং মগধ রাজ্যের প্রথম বর্ণনা পাওয়া যায়। শশাঙ্ক প্রথম বাংলার রূপরেখা নির্মাণ করেন। এরপর পাল, সেন, মুঘল পেরিয়ে ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত বাংলা শাসনের ভার বারবার হস্তান্তরিত হয়েছে। রাজধানী স্থানান্তরিত হয়েছে গৌড় থেকে মুর্শিদাবাদ পেরিয়ে কলকাতা পর্যন্ত। যে কোনও রাজত্বে সুশাসন বজায় রাখতে প্রয়োজন হয় রাজ্যের সীমানা সম্পর্কিত ভৌগোলিক জ্ঞান এবং মানচিত্রের ধারণা। বিভিন্ন পৌরাণিক গ্রন্থ থেকে ভারতবর্ষ তথা বাংলার মানচিত্র সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। ১৬১৯ সালে উইলিয়াম বাফিনের আঁকা ‘ইন্দোইস্তানি’কে ভারতবর্ষের প্রথম আধুনিক মানচিত্র বলে মনে করা হয়। এই মানচিত্র সমগ্র পৃথিবীকে বাংলার অভিমুখে অগ্রসর হতে সাহায্য করেছিল।

আরও পড়ুন-ব্রুকের মঞ্চে খাটল না রিঙ্কু ম্যাজিকও

১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধের পর ১৭৬৫ সালে রবার্ট ক্লাইভ এবং মুঘল রাজা শাহ আলম দ্বিতীয়-র মধ্যে এলাহাবাদ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ফলস্বরূপ বাংলা, বিহার, ওড়িশায় ব্রিটিশরা খাজনা আদায়ের অধিকার অর্জন করে। গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ অঞ্চলে শাসনব্যবস্থা মজবুত করতে ডাক পড়ল জরিপের কাজে দক্ষ ২১ বছরের তরুণ তুর্কি জেমস রেনেল সাহেবের। অক্লান্ত পরিশ্রম আর গভীর নিষ্ঠায় ১৭৭৯ সালে ‘বেঙ্গল অ্যাটলাস’ গ্রন্থে বাংলার সমস্ত নদী, সড়ক, জমি, জঙ্গল, জনপদের মানচিত্র এঁকে ফেললেন তিনি। ‘ম্যাপ সাহেব’ নামে খ্যাত ভারতীয় জরিপ কার্যের জনক রেনেলকে গোটা পৃথিবী আজও শ্রেষ্ঠ ভূগোলবিদের আখ্যা দেয়।

আরও পড়ুন-এবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে তলব সিবিআইয়ের

একই বৃন্তে দুটি কুসুম
রেনেল সাহেবের ম্যাপকে কাজে লাগিয়ে ব্রিটিশ আধিপত্য ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত একপ্রকার নিশ্চিন্তেই চলেছে। দিনে দিনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ফুলে-ফেঁপে ওঠে। এত বড় সাম্রাজ্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা ছিল প্রায় অসম্ভব। তাই বিংশ শতাব্দীর একদম শুরুতে ১৯০৫ সালে ১৬ অক্টোবর লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। নবগঠিত ‘পূর্ব বাংলা ও আসাম’ প্রদেশটি একটি মুসলিম-প্রধান প্রদেশে পরিণত হয়, যার রাজধানী ছিল ঢাকা শহর। অপরপক্ষে ‘পশ্চিম বাংলা’ প্রদেশটি ছিল হিন্দু-প্রধান, যার রাজধানী ছিল শহর কলকাতা। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে বাংলার হিন্দু ও মুসলিম ভাইয়েরা জাতীয় সংহতি বজায় রাখতে প্রতীকী ‘রাখিবন্ধন উৎসব’ পালন করেন। ধর্ম, ভাষা এবং জাতিভিত্তিক এই বিভাজন তামাম বাংলার রাজনৈতিক মানচিত্রে ভাগাভাগির অশনিসংকেত ডেকে আনে। ভারতীয় বিদ্বজ্জনমহল বিতর্কিত এই সিদ্ধান্তকে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ বলে ঘৃণা করেন। লর্ড কার্জন প্রমাদ গুনলেন। অবশেষে ১৯১২ সালে বঙ্গভঙ্গ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়। অপ্রত্যাশিত ভাবে বাংলার মানচিত্রে কাঁচি চালিয়ে বিচ্ছিন্ন করা হয় বিহার এবং ওড়িশাকে। তার আগেই ১৯১১ সালে রাজধানী স্থানান্তর করে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা থেকে দিল্লি। এ-যাত্রায় বাংলা ভাগ আটকানো সম্ভব হলেও সেটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

আরও পড়ুন-পথ চলা শুরু সবুজ-মেরুন স্পোর্টস অ্যাকাডেমির

সীমার মাঝে অসীম আবেগ :
র‍্যাডক্লিফ লাইন
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়। বিনিময়ে ভারতবাসী পেল ষড়যন্ত্র করে দেশভাগের কলঙ্ক। ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবপ্রদেশ এবং বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিকে ভাগ করে নবগঠিত ভারত এবং পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। গোটা দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগুন জ্বলে ওঠে। বাংলার মানচিত্র জেগে রইল শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ অমানবিক এবং রক্তক্ষয়ী এক বিভাজন ইতিহাস বুকে নিয়ে। জীবনে কোনওদিন ভারতে না আসা এবং উপমহাদেশ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ স্যার সাইরিল র‍্যাডক্লিফকে এই বিভাজনরেখা কার্যকর করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সীমানা তৈরি করবার মতো দক্ষ লোকজন বা প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা তাদের ছিল না। বাঙালির জাতিসত্তাকে গুরুত্ব দিয়ে নিখুঁতভাবে কাজ করার জন্য আঞ্চলিক তথ্য বা জরিপ করার যথেষ্ট সময়ও তাদের হাতে ছিল না। অন্যদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি, ঋণের বোঝা ইত্যাদির মাঝে সীমারেখা টানতে ‘আবেগের’ কোনও প্রশ্রয় ব্রিটেনের মাথায় ছিল না। এই নেই-রাজ্যের মাঝে, অকৃতজ্ঞদের মতো ভারতীয় জলবায়ুকে তার শরীরের পক্ষে অনুপযুক্ত অজুহাত দিয়ে ভারত স্বাধীন হওয়ার আগেই সমস্ত নথিপত্র পুড়িয়ে কোটি কোটি গৃহহীন মানুষের ভাগ্য অমীমাংসিত রেখে র‍্যাডক্লিফ দেশে ফিরে যান।

আরও পড়ুন-রাজ্যপালের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন প্রসঙ্গে কী বলছেন শিক্ষামন্ত্রী?

ছিটমহল— আমার জমিন তুমি
মানচিত্রের জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে কারসাজি ইউরোপীয়দের রক্তে। মার্কেটর-এর আঁকা প্রথম বিশ্ব মানচিত্র থেকে শুরু করে উপমহাদেশের র‍্যাডক্লিফ লাইন মানুষের জীবনে অঘোষিত অন্ধকার ডেকে এনেছে। দেশের সীমানা নিয়ে পৃথিবীতে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে নানান প্রান্তে। র‍্যাডক্লিফ-এর একটি ভুলের মাশুল ভারত এবং বাংলাদেশের মানুষ গুনে এসেছে বহুকাল। র‍্যাডক্লিফ লাইনের দুই প্রান্তে বিচ্ছিন্নভাবে থেকে যায় দুই দেশের টুকরো টুকরো অংশ যা ছিটমহল নামে খ্যাত। ভারতের মধ্যে বাংলাদেশের ৫১টি এবং বাংলাদেশের মধ্যে ভারতের ১১১টি ছিটমহল অমীমাংসিত ছিল। স্বাধীনতার পর ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পূর্ববাংলা, পাকিস্তানের অধীনে থেকে যায় আরও বেশ কিছু বছর। বলপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া উর্দু ভাষার জিগির বাংলা-ভাষাভাষী মানুষের মনে আন্দোলনের জোয়ার তুলে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়।

আরও পড়ুন-ধনধান্য অডিটোরিয়ামের উদ্বোধন, ২০২৪ পর্যন্ত টাকা দেবে না কেন্দ্র

ইতিহাস বলছে, কোচবিহার এবং রংপুর জেলার দুই আঞ্চলিক রাজা এই ছিটমহলগুলি তাদের দাবা বা তাস খেলায় চাল হিসেবে ব্যবহার করতেন। সীমানা তৈরি করার মতো কোনও তাগিদ তাঁরা কেউ দেখাননি। উপমহাদেশে তখন এত ছোট ছোট স্বাধীন করদ রাজ্য ছিল যে সীমানা নির্ধারণ করাও কঠিন ছিল। কোচবিহারের সেই নির্ধারণ না-হওয়া অঞ্চলগুলি অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন থাকার কারণেও নির্দিষ্ট সীমানার প্রয়োজন দেখা দেয়নি। ১৭১৩ সালের কোচ রাজা এবং মুঘল রাজাদের মধ্যে বিভ্রান্তকর এই চুক্তির ফলাফল হিসেবে পঞ্চগড়, ডিমলা, দেবীগঞ্জ, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, লালমণির হাট, ফুলবাড়ি ও ভুরুঙ্গামারি অঞ্চলের বাসিন্দারা স্বাধীনতার পর বহুকাল আসল স্বাধীনতার স্বাদ পাননি। নিজের দেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট তৈরি করতে তাদের রাতের অন্ধকারে বেআইনি ভাবে অথবা মিথ্যের আশ্রয় নিতে হয়েছে। শুধুমাত্র রাজনীতির শিকার হয়ে অপরাধীর মতো ‘স্বদেশে পরবাসী’ হয়ে জীবন কাটাতে হয়েছে। নিরপরাধের বিবেক তখন বলে ওঠে— এ আমার কেমন জন্মভূমি যা আমার দেশ নয়? আমি দেখতে মানুষের মতোই তবু কেন আমি মানুষ নই?

আরও পড়ুন-বাঙালির নিজস্বতা

দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে এই সমস্যার সমাধানসূত্র বের করার প্রচেষ্টা থেমে থাকেনি। অ-নির্ধারিত অঞ্চলগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে ১৯৫৮ সালে ১০ সেপ্টেম্বর দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও মহঃ ফিরোজ খান দু’জনের মধ্যে প্রথম সীমানা নির্ধারণ চুক্তি হয়। তারপর এক যুগ কেটে গেলেও, ভারত বা পূর্ব পাকিস্তান কেউই নিজেদের দাবি থেকে সরে এসে সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করেনি। এই সমস্যা তৎকালীন সময়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়।
এরপর ১৯৭১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান দুই দেশের মধ্যে সম্প্রীতি এবং বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রেখে ছিটমহল সমস্যা সমাধান করতে সবিশেষ আগ্রহী হয়ে ১৯৭৪ সালে ১৬ মে স্থলভাগ বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেন। কিন্তু নিরাপত্তার প্রশ্নে এই চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি।

আরও পড়ুন-এগিয়ে থেকেও জয় অধরা ইস্টবেঙ্গলের

অবশেষে ২০১৫ সালে ১ অগাস্ট রাত ১২:০১ মিনিটে ঐতিহাসিক ইন্দিরা-মুজিব স্থল সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এইভাবে রাজনীতির কুচক্র এবং পরিবর্তনশীল বাংলার মানচিত্র ভারত-বাংলাদেশের নিরপরাধ মানুষকে গৃহহীন উদ্বাস্তু করে ছেড়েছে। শরণার্থী শিবিরে কাটাতে হয়েছে পরিচয়হীন ভয়ানক জীবন। রাষ্ট্রের সীমানা নিয়ে ক্ষমতালোভীর স্বার্থ চরিতার্থ করতে দেশবাসীর কি এই চরম দুর্ভোগ পাওনা ছিল?

Latest article