প্রতিবেদন: এবার শুল্ক-দ্বৈরথ শুরু হল শি জিনপিং ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে। ক্ষমতায় এসে নাম করে তিন দেশের উপর শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। আলোচনার ভিত্তিতে মেক্সিকো ও কানাডায় বর্ধিত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করলেও চিন নিয়ে তেমন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। হোআইট হাউস জানিয়েছে, চিনা পণ্যের উপর চাপছে ১০ শতাংশ শুল্ক। মার্কিন প্রশাসনের এই পদক্ষেপের পরেই পাল্টা চাপ তৈরির পথে হাঁটল বেজিং। চিনে মার্কিন পণ্যের উপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা করে ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘বার্তা’ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জিনপিং। এই আবহে এবার চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। লাগাতার হুমকির পর শেষমেশ মেক্সিকো, কানাডার পথে হেঁটে চিনের ক্ষেত্রে শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত ট্রাম্প-প্রশাসন স্থগিত করে কি না, সেদিকে নজর সংশ্লিষ্ট মহলের।
আরও পড়ুন-আপাতত ধীরে-চলো নীতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের
এবার বিশ্বজুড়ে শুল্ক-যুদ্ধে জল মাপছে ভারত। বাজেট ঘোষণার সময়ে প্রথম ধাপ পেশ হলেও জিএসটি সংক্রান্ত ঘোষণা স্থগিত রেখেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মল সীতারমন। আমেরিকার শুল্কযুদ্ধের উপর নজর রেখেই সেই ঘোষণা হবে বলে অনুমান অর্থনীতিবিদদের।
মাত্র তিন-চারদিন আগেই চিনের সব ধরনের দ্রব্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিল আমেরিকা। এমনকী ট্রাম্পের দফতর থেকে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছিল, চিনে তৈরি জিনিসের উপর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক চাপানো হতে পারে। মঙ্গলবার থেকে চিনের উপর এই শুল্কনীতি আরোপ হতেই পাল্টা ঘোষণা করেছে জিনপিং সরকার। ঘোষণা করা হয়েছে, আমেরিকার কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসে ১৫ শতাংশ এবং অপরিশোধিত তেল, কৃষি সরঞ্জাম ও বড় গাড়িতে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক চাপানো হবে। এছাড়াও মার্কিন সংস্থা অ্যালফাবেট, কেলভিন ক্লেইন, ইলুমিনা-র মতো সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু করেছে জিনপিং সরকার।
আরও পড়ুন-অতিশির বিরুদ্ধে দু’টি মামলা প্রতিহিংসাপরায়ণ বিজেপির
চিনের পাল্টা চালে ট্রাম্প প্রশাসন কী নীতি নেয় সেদিকে যেমন নজর থাকবে, তেমনি ইতিমধ্যেই ইউরোপের একাধিক দেশে ট্রাম্পনীতির কী প্রভাব পড়ে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কারণ ইউরোপের দেশগুলি থেকে গাড়ি, কৃষিদ্রব্য কেনা বন্ধ করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। এর ফলে ব্যাপক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা মার্কিন-মিত্র ব্রিটেনের অর্থনীতিতেও। যদিও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার আমেরিকার সঙ্গে কোনও দ্বন্দ্বে জড়াবেন না বলেই জানিয়েছেন। তবে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকে আমেরিকার স্বার্থে যেভাবে কাজে লাগাতে চাইছেন ট্রাম্প, তাতে আলোড়িত বড় আর্থিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলি। এই পরিস্থিতিতেই ভারতের বাজেট পেশ হয়েছে। বাজেট পেশের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের অর্থনীতিতে বিদেশি প্রভাবের উল্লেখ করেছিলেন। যা আমেরিকা ও চিন দুই শক্তিধর দেশের উপরই অনেকাংশে নির্ভরশীল। দেশের অর্থনীতিবিদদের দাবি, গত একমাস ধরেই আমেরিকা ও চিনের অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বের দিকে নজর রেখেছেন ভারতীয় অর্থনীতিবিদরা। এই দ্বন্দ্বের ফলে ভারতের মধ্যে প্রতিযোগিতার মানসিকতা বাড়ার সম্ভাবনা থাকছে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য, আমেরিকা ও চিনের বাজারে চাপ পড়ার ফলে ভারতের ইলেক্ট্রনিক্স, ওষুধ, বস্ত্রশিল্প, গাড়ির যন্ত্রাংশ ও কেমিক্যাল দ্রব্যের বাজার খুলতে পারে। সেক্ষেত্রে বাজেটে জিএসটি সংক্রান্ত ঘোষণা যেভাবে স্থগিত রেখেছেন নির্মলা সীতারমন, তা এই দ্রব্যগুলির চাহিদার উপর নজর রেখেই ঘোষণা করতে পারে কেন্দ্র।