প্রতিবেদন : বাম-বিজেপির গোপন আঁতাঁত ফাঁস হয়েই গেল। বামের ভোট রামে নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীরভূমের সভা থেকে বামেদের সম্পর্কে, আরও সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে সিপিএম সম্পর্কে একটি শব্দও খরচ করেননি। কিন্তু কেন? বামেদের সঙ্গে গোপন আঁতাঁত! এতে একদিকে যেমন পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা লুকিয়ে রাখা যাবে, সঙ্গে পিছনের দরজা দিয়ে টাকার জোরে বাংলায় নির্বাচিত সরকার ফেলে দেওয়ার যে ষড়যন্ত্র বিজেপি করছে, সেদিকে ধাপে ধাপে এগোনো যাবে। যা করেছে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক-সহ একাধিক রাজ্যে। যে কারণে সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন থাকা সত্ত্বেও তা নিয়ে কোনও কথা না বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বাংলা থেকে ৩৫টি আসনের টার্গেট বেঁধে দিলেন তিনি।
আরও পড়ুন-পুলিশের সামনেই আততায়ীদের হাতে খুন ‘গ্যাংস্টার’ আতিক আহমেদ ও তাঁর ভাই
কিন্তু আচমকাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন ২০২৪-এ এ-রাজ্যে ৩৫টি আসন পেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পড়ে যাবে। কিন্তু কেন? ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের সঙ্গে বাংলার নির্বাচিত সরকার পড়ে যাওয়ার কী সম্পর্ক? প্রশ্ন তৃণমূল কংগ্রেসের। বাংলায় বর্তমান সরকারের মেয়াদ তো ২০২৬ সাল পর্যন্ত। তাহলে কি ২০২৪ কিংবা ২০২৫ সালেই পিছনের দরজা দিয়ে সরকার ফেলার পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি? সেই পরিকল্পনার ইঙ্গিতই কি বীরভূমের সভা থেকে দিয়ে গেলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী! কয়েকদিন আগেই বিজেপির তরফে সিপিএমের সব জেলা নেতৃত্বের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জোট করে লড়ার। যদিও সিপিএম প্রকাশ্যে এ-ধরনের কোনও জোটে যাবে না বলে জানালেও আসলে তারা যে বিজেপির সঙ্গে গোপনে হাত মিলিয়েছে শুক্রবার বীরভূমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন। আগেই বাম-বিজেপির গোপন আঁতাঁতের স্পষ্ট অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন-নদীভাঙন সমাধানে বাংলার সঙ্গে রয়েছে নেদারল্যান্ড
সাগরদিঘির নির্বাচনে বিরোধীদের অশুভ আঁতাঁতের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। এবার পঞ্চায়েত ভোটেও এই গোপন আঁতাঁতের কৌশল নিয়েই চলছে বিজেপি-সিপিএম। দলের স্পষ্ট বক্তব্য, বিজেপির একার পক্ষে তৃণমূল কংগ্রেসকে হারানো সম্ভব নয়। ২০২১-এর নির্বাচনে বাংলায় তৃণমূলের কাছে কুৎসিত হারের পর এই বাস্তব সত্যকে উপলব্ধি করেছে বিজেপি। পঞ্চায়েতের প্রায় আশি হাজার বুথের মধ্যে বড়জোর কুড়ি শতাংশ বুথে বিজেপি প্রার্থী দিতে পারবে কি না সন্দেহ। তাই নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ঢাকতে সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পঞ্চায়েত বৈতরণী পার করতে চাইছে। এরপর লোকসভা নির্বাচন। তাকেই পাখির চোখ করে এগোচ্ছে বিজেপি। তাই কি এখন থেকেই ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে শুরু করেছে তারা! তাই কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে সেই ইঙ্গিত! সরকার পড়ে যেতে পারে!
আরও পড়ুন-রাজু ঝা খুনে জেলবন্দি আসামিকে সুপারি
শুক্রবার বীরভূমের সভা থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন। দলকে কনফিডেন্স দিতে বাংলায় পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির হবে বলে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু বাংলায় ৩৪ বছরের শাসনে বাংলার হতশ্রী দশার জন্য বামেদের অপশাসনই যে একমাত্র কারণ তা গোটা দেশ জানে। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চাইছেন বাংলায় ২০১৯-এর পুনরাবৃত্তি হোক। বামের ভোট রামে আসুক। রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন দোরগোড়ায়। তা নিয়ে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব কৌশলগত কারণে কোনও কথা বলছেন না। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির হতশ্রী কঙ্কালসার চেহারাটা আরও একবার সামনে চলে আসুক তা চান না বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। তাতে লোকসভা নির্বাচনের আগে দলীয় কর্মীদের মবোবল ধাক্কা খাবে। তাই কৌশলে ২০২৪-এর টার্গেট বেঁধে দেওয়া!
আরও পড়ুন-ফিরহাদ হাকিমের সভায় বেশি লোক হবে বলে স্থানবদল, আজ বিজেপিকে পাল্টা তৃণমূলের
এ-বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, অন্যান্য রাজ্যে যেভাবে পিছনের দরজা দিয়ে টাকার জোরে সরকার তৈরি করেছে এ-রাজ্যেও তাই করার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। তা না হলে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের সঙ্গে বাংলায় সরকার পড়ে যাওয়ার সম্পর্ক কোথায়? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে অমিত শাহজি এ-কথা বললেন কী করে? তাহলে কি বাংলায় সরকার ফেলে দেওয়ার জন্য গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে বিজেপি? তাঁর সংযোজন, বীরভূমের সভায় অনেক কথা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু বামেদের বিষয়ে একটি লাইনও বললেন না। কেন বাম ভোট বিজেপিতে নিশ্চিত করতে গোপন আঁতাঁত! তাই তাদের সম্পর্কে মৌনব্রত? বীরভূমে বিজেপির সভার পাল্টা জবাব দিতে আজ ওই মাঠেই জনসভা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। মূল বক্তা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও পার্থ ভৌমিক। এছাড়াও উপস্থিত থাকবেন বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের নেত-কর্মী ও তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকরা।