মণীশ কীর্তনিয়া, রাজাবালা (মেঘালয়): মেঘালয় এখন পুরোপুরি নির্বাচন মোডে ঢুকে পড়েছে। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি ৬০ আসনের মেঘালয় বিধানসভার নির্বাচন। তেড়ে শেষ রাউন্ডের প্রচার চলছে। প্রচারে ঝড় তুলে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। আজ বুধবার তা সাইক্লোনে পরিণত হতে চলেছে। আজ আবারও প্রচারে আসছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। থাকবেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে প্রশাসনিক জনসভা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ শিলিগুড়ি থেকেই হেলিকপ্টারে সরাসরি পৌঁছবেন রাজাবালা। সভা শুরু হবে বেলা ১টায়।
আরও পড়ুন-খতম হিজবুল প্রধান
এর আগে জানুয়ারি মাসে বিশাল জনসভা করেছেন গারো হিলসের মেন্দিপাথারে। তারও আগে শিলংয়েও রাজনৈতিক সভা ও অন্যান্য কর্মসূচি করেছেন। এবার পশ্চিম গারো হিলসের রাজাবালায়। তুরা লোকসভার অন্তর্গত রাজাবালার নেকিকোনা তিলাপাড়া ফিল্ডের মঞ্চ প্রস্তুত নেত্রীকে স্বাগত জানাতে। একইসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কী বলেন তা নিয়ে প্রবল আগ্রহ রাজাবালার। কারণ গত কয়েকদিন টানা মেঘালয়ে পড়ে থেকে অভিষেক যেভাবে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে একাধারে রোড শো ও জনসভা করেছেন তাতে উপচে পড়েছে ভিড়।
আরও পড়ুন-ফেসবুকেও ব্লু ব্যাজ
জনস্রোতে ভেসে গিয়েছে রাস্তা। রাজাবালা বিধানসভার তিলাপাড়া ফিল্ডের সভাস্থল গুয়াহাটি বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে যেতে সময় লাগে পাক্কা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। হল্ট দিয়ে গেলে আরও বেশি। মেঘালয়ের একেবারে প্রত্যন্ত জায়গা বললেও কম বলা হয়। এই যাত্রাপথে আপনাকে আসতে হবে একাধিক বিধানসভা পেরিয়ে। আর এখানেই চমক। গুয়াহাটি শহর ছেড়ে আপনি যখন মেঘালয়ের সীমানায় প্রবেশ করবেন তখন আচমকা ভ্রম হতে বাধ্য, এ কোথায় আছি। মেঘালয় তো! নাকি বাংলার কোনও গ্রামে ঢুকেছি! নির্বাচন কভার করতে যেখানে যেদিকে চোখ পড়ে সেদিকেই দেওয়ালে- গাছে- রাস্তার ল্যাম্পপোস্টে- বাজারে দোকানের মাথায় হোর্ডিংয়ে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ও জোড়া ফুল চিহ্ন, সঙ্গে প্রার্থীর ছবি, যিনি হাত জোড় করে বলছেন, আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী। এবার আপনার ও আপনার পরিবারের ভোট জোড়া ফুলে। মেঘালয়েও এই ছবি গোটা রাস্তা জুড়ে। এখানে নেত্রীর ছবির সঙ্গে রয়েছে মেঘালয় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও দলের কান্ডারি মুকুল সাংমা, সভাপতি চার্লস পিনগ্রোপ ও সঙ্গে স্থানীয় প্রার্থীর ছবি। সঙ্গে অবশ্যই জোড়া ফুল চিহ্ন।
আরও পড়ুন-২৬/১১-র জঙ্গিরা কেন এখানে বহাল তবিয়তে? পাক মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন জাভেদের
মেঘালয় এখন কড়া নিরাপত্তা বলয়ে মোড়া। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী অসংখ্য মোড়ে চলছে নাকা তল্লাশি। আমাকেও থামতে হল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নির্দেশে। স্বয়ংক্রিয় বন্দুক হাতে কঠিন চাহনি সহযোগে চলল জেরা পর্ব। সাংবাদিক ও কলকাতা থেকে এসেছি বলাতে অবশ্য কিছুটা নরম মনোভাব দেখালেও যাত্রাপথের সঙ্গী গাড়ির তল্লাশি হল বার কতক। সামনের কভার থেকে ডিকিতে তল্লাশির পর জওয়ানদের তল্লাশি হলে তবেই মিলল এগোনোর ছাড়পত্র। সবই তো হল কিন্তু তেনারা কোথায়? মানে মেঘালয়ের শাসক দল এনপিপির প্রার্থীদের হোর্ডিং-ব্যানার-পোস্টার তো দেখছি না বিশেষ। তারাই গত পাঁচ বছর বিজেপির হাত ধরে মেঘালয় শাসন করেছে।
আরও পড়ুন-জুনেইদ-নাসিরকে পুড়িয়ে খুন, হত্যাকারীরা সবাই গোরক্ষা বাহিনীর সদস্য, যোগাযোগ মিলেছে হরিয়ানা পুলিশের
দেদার দুর্নীতি করেছে। যে দুর্নীতি নিয়ে মঙ্গলবার শিলংয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন মুকুল সাংমা। বললেন, গত পাঁচ বছরে মেঘালয়ের হরেক দুর্নীতির মধ্যে অন্যতম বড় দুর্নীতি হল জমি দুর্নীতি। টাকার অঙ্কে যার সীমা-পরিসীমা নেই। এনিয়ে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চিঠি লিখেও কাজ হয়নি। মেঘালয় তৃণমূল কংগ্রেস চায় এর পূর্ণ তদন্ত হোক নিরপেক্ষ কোনও সংস্থাকে দিয়ে।
রাজাবালা বিধানসভায় প্রচুর সংখ্যালঘু মানুষের বসবাস। পাশের বিধানসভা ফুলবাড়িও তাই। যেদিকে তাকাবেন জোড়াফুল। সঙ্গে নেত্রীর ছবি। মেঘালয় মজে তৃণমূলে। মেঘের রাজ্য এখন মনেপ্রাণে পরিবর্তন চাইছে। মেঘালয়ের হারানো গৌরব ফিরে পেতে চাইছে। বাংলার উন্নয়ন মডেলে মেঘালয়ের উন্নয়ন চাইছে রাজ্যবাসী।