২০২১-এর কোভিডের সময় গোটা দেশে যখন এনসিআরবির রিপোর্টে এই তথ্য উঠে আসছে, তখন বাংলার তথ্য বলছে একজন কৃষকেরও আত্মহত্যার ঘটনা নেই, একজনেরও অনাহারে মৃত্যুর খবর নেই। কোভিডের সময় মানুষের পাশে দাঁড়াতে বাড়ি-বাড়ি খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এখানেই ছিল বাংলার সাফল্যের চাবিকাঠি।
আরও পড়ুন-আত্মজাদের গুরু
প্রতিবেদন : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হবে। তাঁদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি যে একেবারেই অন্তঃসারশূন্য তার প্রমাণ মিলল সংবাদমাধ্যমের করা সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায়। ওই সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, নরেন্দ্র মোদির আমলে ২০২১ সালে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১৫ জন করে কৃষক এবং ১৫ জন করে কৃষিশ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন। গোটা দেশে যত সংখ্যক মানুষ আত্মহত্যা করেছেন তার ৭ শতাংশই কৃষক। ২০১৭ সাল থেকে এই পরিসংখ্যানই সর্বোচ্চ। এরই মধ্যে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা এনসিআরবির তথ্য বলছে, তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত পশ্চিমবঙ্গে কৃষকের আত্মহত্যার মতো কোনও দুঃখজনক ঘটনা ঘটেনি।
আরও পড়ুন-রান্নাঘরের গপ্পো
তবে শুধু সংবাদমাধ্যম নয়, এনসিআরবির তথ্যও বলছে, ২০২১ সালে দেশে যত দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু এবং আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে তার ৬.৬ শতাংশই কৃষির সঙ্গে যুক্ত মানুষ। ওই রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, ২০২১ সালে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত এমন মোট ১০ হাজার ৮৮১ মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। যার মধ্যে ৫৩১৮ জন কৃষক এবং ৫৫৬৩ জন কৃষিশ্রমিক। আত্মঘাতীদের মধ্যে ২১১ জন মহিলা। ওই বছর দেশে মোট ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৩৩ জন আত্মঘাতী হয়েছেন।
২০২১ সালে যে ৫৩১৮ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন তাঁদের মধ্যে ৪৮০৬ জনের নিজস্ব জমি ছিল। ৫১২ জন চাষ করতেন অন্যের জমিতে। এই পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট যে, নিজের জমি থাকা কৃষকেরাই বেশি বিপদে পড়েছেন। এখন প্রশ্ন হল, কী সেই বিপদ? মোদি কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার যে প্রতিশ্রুতিই দিন না কেন, বাস্তবে তার কিছুই প্রতিফলিত হয়নি। কৃষকরা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। ফলে তাঁদের চরম লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। সে কারণেই তাঁরা আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরও পড়ুন-আমরা সবাই এক-একজন বিয়ার গ্রিলস
২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৫৩ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। ২০২১ সালে এই সংখ্যাটা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
গত বছর সর্বাধিক কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে মহারাষ্ট্রে। চার হাজারেরও বেশি কৃষক আত্মঘাতী হয়েছে সেখানে। যার মধ্যে ২৬৪০ জন নিজের জমিতেই চাষ করতেন। মহারাষ্ট্রের পরেই আসে বিজেপি শাসিত কর্নাটক। যেখান থেকে ২১৬৯ জন আত্মহত্যা করেছেন। এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ু। গোটা দেশের মধ্যে ৮০ শতাংশ কৃষি আত্মহত্যাই এই পাঁচটি রাজ্যে হয়েছে। দু’দিন আগেই জানা গিয়েছে, মহারাষ্ট্রের বিদর্ভে তিনদিনে অন্তত ৯ জন কৃষকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন-ভবানীপুরে বিজয়া সম্মিলনীতে বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রী
সূত্রের খবর, চলতি বছরে জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত বিদর্ভে ৫১২ জন কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। এনসিআরবির রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বিহার, ঝাড়খণ্ড, ত্রিপুরা, মণিপুর, ওড়িশা অরুণাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের মতো কয়েকটি কৃষিপ্রধান রাজ্যে কৃষকের আত্মহত্যার খবর নেই।