রান্নাঘরের গপ্পো

কথায় বলে বাঙালি বাঁচার জন্য খায় না, খাওয়ার জন্য বাঁচে! আর সেটা যাকে বলে বাঁচার মতো করে বাঁচা! ঠিক এ কারণেই ছোটপর্দায় কুকারি শো-এর আবেদন কমে না। একঘেয়েমি আসে না। আসে নতুন নতুন শো। এ যেন রান্নাকে কেন্দ্র করে জীবন উদযাপন। আগামী সোমবার থেকে কালার্স বাংলায় আসছে নতুন কুকারি শো ‘রান্নাঘরের গপ্পো’। বিস্তারিত জানাচ্ছেন প্রীতিকণা পালরায়

Must read

ভীষণরকম কাকতালীয় কিন্তু দারুণরকম সত্যি। আগামিকাল বিশ্ব খাদ্যদিবস। উদযাপিত হচ্ছে সারা বিশ্ব জুড়ে। ঠিক তার পরদিন কালার্স বাংলা চ্যানেলে শুরু হচ্ছে নতুন এক কুকারি শো, যেখানে উদযাপিত হবে বাঙালিয়ানা, ঐতিহ্য আর সাবেকিয়ানা। ভাবনাটা যেমন মনোগ্রাহী তেমনই চমকপ্রদ শো-এর সঞ্চালনা কিংবা ফরম্যাটের ধরন। ‘রান্নাঘরের গপ্পো’ সঞ্চালনা করবেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ও দর্শকদের ভীষণ পছন্দের অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। বহুদিন পর ছোটপর্দার দর্শকেরা তাঁকে নিয়মিত দেখার সুযোগ পাবেন। এই প্রথম কোনও কুকারি শো সঞ্চালনা করছেন সুদীপ্তা।

আরও পড়ুন-আমরা সবাই এক-একজন বিয়ার গ্রিলস

‘শো’-এর নামের মধ্যেই আছে একটা আটপৌরে ছোঁয়া। একাধারে রান্নাঘর যে কোনও পরিবারের নিজস্বতার পরিচায়ক আর রান্না সংক্রান্ত প্রতি পরিবারেরই নিজস্ব পরম্পরা থাকে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যা নিয়ে চর্চা হয়, স্মৃতি হয়ে থাকে প্রিয়জনদের হাতের ছোঁয়া, নিজস্ব অনেক পদ। আধুনিকতা যতই আসুক, যতই পৃথিবীটা ছোট হতে হতে হাতের মুঠো ফোনে বন্দি হয়ে যাক, এইসব স্মৃতি জুড়ে থাকে হরেক গল্প যাকে ‘গপ্পো’ করে শো-এ উপস্থাপিত করবেন সুদীপ্তা। বাদ পড়বে না কিছুই। ঠাকুমা-দিদিমার নিজস্ব রন্ধনশৈলী গপ্পো করে বলার ফাঁকে ফাঁকেই সেই পদ্ধতি অনুসরণ করে রান্নাটা রেঁধে ফেলাও হবে। আর এর জন্য বাদ পড়বে না বাঙাল-ঘটি কেউ! কারণ বাঙালির ফুটবলের মতো রান্নায়ও দুই চরমপন্থী সমর্থক আছেন। কারও রান্নায় মিষ্টির আধিক্য তো কারও ঝাল। এসব ইতিহাসের অনেক কিছুই কালের গর্ভে বিলীন হলেও যা রয়ে গেছে তাও কম কিছু না। তাই ‘এদেশি’ রান্না এবং ‘পূর্ববঙ্গীয়’ রান্না— সমানাধিকার পাবে উভয়ই!

আরও পড়ুন-একাধিক স্কচ অ্যাওয়ার্ড বাংলার, শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর

প্রায় এক যুগ পরে ফিরলেও টেলিভিশন সুদীপ্তার চেনা মাঠ। ফিকশন, নন-ফিকশন মিলিয়ে বহু হিট শো-এর সফল যোদ্ধা তিনি। চ্যানেলের তরফে যে প্রোমো লঞ্চ করা হয়েছে সেখানেই সবিস্তারে সুদীপ্তা ‘রান্নাঘরের গপ্পো’ উদ্দেশ্য-বিধেয় ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন। ভারি সুন্দর সেই উপস্থাপনাও। “বাঙালির হেঁশেল ঘরে হাজার বছর ধরে কত শত রান্না হল কেউ রাখেনি মনে। সহজ সহজ রান্না। ঘরোয়া সব জিনিস। অথচ স্বাদে-গন্ধে টেক্কা দিত তাবড় তাবড় দেশকে। কতরকম মশলাপাতি কতরকম বাসন, সবই গেছে কালের খাতায়, ভুলেই গেছে নিয়ম। তাই আমিই এবার পাচ্ছি হেথায় এমন খুশির ভার, ইতিহাসের সঙ্গে পাবেন ঐতিহ্যের স্বাদ। হারিয়ে যাওয়া হাঁড়ির খাবার ফিরবে নিজের ঘরে। মা-ঠাকুমার হাতের স্বাদে মন উঠবে ভরে! বাঙালির রান্না, বাঙালির আবেগ, বাঙালির নস্ট্যালজিয়া। রসিক বাঙালির রসের খাবার আবার আসিল ফিরিয়া।” সুদীপ্তার কথাতেই পরিষ্কার, এই কুকারি শো কোথায় অন্যদের থেকে আলাদা। আর ইউএসপি যদি সুদীপ্তা হন একই সঙ্গে এই ইউনিক ভাবনাও। কারণ সত্যিই পৃথিবীর তাবড় তাবড় দেশের হাজার রকমের কুইজিন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালালেও উৎসবে-অনুষ্ঠানে বাঙালি ফেরে বাঙালিয়ানাতেই। খোঁজে পাত পেড়ে খাওয়ার সাবেকি পদ। আর কে না জানে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। টেক্কা দিতে হলে দেখতেই হবে, ‘রান্নাঘরের গপ্পো’। অতএব হিসেব মিলে যাচ্ছে বরাবর!

আরও পড়ুন-ভবানীপুরে বিজয়া সম্মিলনীতে বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রী

আধুনিক ব্যস্তজীবনে চটজলদি রান্নার চল বেড়েছে একথা সত্যি। তবে চটজলদি রান্না মানেই যে সবসময় বিদেশি বা পশ্চিমি রান্না তা নয়, বাঙালি হেঁশেলেও চটজলদি রান্নার বহু রেসিপি আছে। সুদীপ্তা শেয়ার করবেন সেটাও। তাই সুদীপ্তার রান্নাঘরে যেমন গপ্পো করতে আসতে পারবেন সব বয়সি মহিলারা তেমনই দর্শকও হবেন আট থেকে আশি সকলে। শো-এর ফরম্যাট সাজানো হয়েছে সেভাবেই। তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে পুরো সময়টিকে। প্রথম ভাগে থাকবে অতিথির সঙ্গে সুদীপ্তার আলাপচারিতা। অতিথির নিজস্ব রান্না-কথন। স্মৃতির পাতার গপ্পো যেমন থাকবে, তেমনই থাকবে রান্নার গপ্পো আর বর্তমানে নিজস্ব রন্ধনপ্রণালী। দ্বিতীয় ভাগে পুরোদমে হবে রান্না-বান্না। আর তৃতীয় ভাগে সেই রান্না পরিবেশন ও খাওয়া-দাওয়া। পরিবেশনেও থাকবে অভিনবত্ব। সবটা হবে সাবেকি স্টাইলে। এর সঙ্গে তৃতীয় ভাগে আরও একটা বিশেষ ব্যাপার থাকবে দর্শকদের জন্য। তা হল সুদীপ্তা দেবেন নিজস্ব টোটকা। যা অতি ঘরোয়া এবং গৃহিণীদের জন্য ভীষণ উপযোগী। সুতরাং পুরোটা জুড়ে সাবেকিয়ানা।

আরও পড়ুন-শিক্ষক নিয়োগে বারবার মামলায় প্রকাশ্যেই অসন্তোষ বিচারপতিদের

আর এই ছোঁয়া সঞ্চালিকার সাজ-পোশাকেও। গয়নাগাটি, খোঁপায় ফুল, ঐতিহ্যবাহী শাড়ি— সব মিলিয়ে সুদীপ্তা এক্কেবারে অন্যরকম। যেন পাশের বাড়ির আটপৌরে গৃহবধূ, যার হাতে হাতা-খুন্তি, ব্যস্ত নিখুঁত রান্না ও পরিবেশনে। সুদীপ্তা নিজেও শিখছেন নিত্যনতুন পদের রেসিপি। বিস্মিত হচ্ছেন কত-শত তুচ্ছ উপাদানেও বাঙালি হেঁশেলে কত সুস্বাদু রান্না হতে পারে! সব মিলিয়ে দুর্দান্ত একটা অভিজ্ঞতা। প্রতিদ্বন্দ্বী চ্যানেলগুলির কুকারি শোগুলি অভিজ্ঞতায় বিস্তর এগিয়ে থাকলেও সুদীপ্তা আত্মবিশ্বাসী। রোজ চার-পাঁচটা পর্বের শ্যুটিং হচ্ছে মুন সিটি’তে। আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে ‘রান্নাঘরের গপ্পো’ দেখা যাবে, রোজ বিকেল পাঁচটায়।

Latest article