শুরু হয়ে গেছে পুজোর কাউন্ট ডাউন। বাঙালির বড় পার্বণ। তাই সবার পুজোর প্ল্যানিং শুরু। কেনাকাটা, খাওয়াদাওয়া, আনন্দ, হুল্লোড় চলবে প্রায় মাস জুড়ে। কিন্তু ভাইরাস যে পিছু ছড়ছে না। চলছে একের পর ভাইরাসের আক্রমণ। অনেকেই সদ্য সুস্থ হয়েছেন আবার কেউ কেউ এখনও বেশ অসুস্থ। তাই পুজোর আগে জরুরি হল শরীরে রোগপ্রতিরোধ শক্তিকে বাড়িয়ে তোলা এবং সুস্থ থাকা। উৎসব মানেই সুস্থ শরীর আর মন।
আরও পড়ুন-রোহিতদের দ্বিতীয় ম্যাচও বাতিল বৃষ্টিতে, চেন্নাইয়ে অত্যাধুনিক সুপার-সপার
কী এই রোগ-প্রতিরোধ
বিভিন্ন জৈবিক কাঠামো দিয়ে গড়া জীবদেহের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা সেই জীবদেহকে আক্রমণকারী রোগব্যাধি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে সেটাই হল ইমিউনিটি বা রোগ-প্রতিরোধ। বিদেশি জীবের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরক্ষা। এই ক্ষমতা শরীরের বিভিন্ন কোষগুলিকে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা করে এবং শরীর থেকে রোগগুলি সারিয়ে ফেলতে সহায়তা করে। সেই কারণেই প্রত্যেকের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা জরুরি।
রোগ-প্রতিরোধ শক্তি কেন দুর্বল হয়
আনন্দ উৎসব, পুজো পার্বণে একটু-আধটু চলতে পারে কিন্তু রোগ-প্রতিরোধে জরুরি হল নিয়মানুবর্তিতা। অনিয়মিত এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ছেড়ে প্ল্যানডফুলি এগনো।
আরও পড়ুন-যোগীরাজ্যে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ মহিলার
এখনকার জেটস্পিডের জীবনযাত্রার সঙ্গে তাল মেলাতে দৌড়ে চলেছে মানুষ। শুধু বড়রা নয়, ছোটরাও সারাক্ষণের জন্য পিঠে ভারী ব্যাগ নিয়ে ছুটে চলেছে একবার স্কুল, একবার প্রাইভেট টিউশন, আঁকা, সাঁতার, নাচ আর গানের ক্লাসে। কোথায় সময় শরীরচর্চার? ভুলেই গেছে মানুষ যে শরীরটা সম্বল করে এই ছোটাছুটি, তারও যে যত্ন নিতে হবে। এই অযত্নের চরম মূল্য দিতে হচ্ছে মানুষকে। কমছে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা। বাড়ছে শরীর জুড়ে রোগের দাপট।
একেই তো ছুটন্ত জীবন, তায় আবার মোবাইল দোসর। বিশ্রাম শব্দটাও জীবন থেকে চলে গেছে। রাত্রিবেলার বহুমূল্যের ঘুমেও ভাগ পড়েছে। বিছানাতে গা এলিয়েও মোবাইল বা টিভিতে বন্দি হয়ে পড়ছে আবালবৃদ্ধবনিতা। কমছে পর্যাপ্ত ঘুমের সময়। শরীরও তো মেশিন। তাকেও তো দিতে হবে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম! অপর্যাপ্ত ঘুমে মানুষ হারাচ্ছে তার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা।
আরও পড়ুন-বিজেপি শাসিত অসমে বাল্যবিবাহ আইন ভাঙায় গ্রেফতার সহস্রাধিক
হাজার চেষ্টাতেও সম্পূর্ণ দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন পাওয়া বড়ই কঠিন। পড়াশুনো, কেরিয়ার, অর্থচিন্তা, অসুস্থতা, অফিসের ঝুটঝামেলা আর টেনশন— সবটাই আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। এই স্ট্রেসফুল লাইফ সরাসরি প্রভাব ফেলছে আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসের ওপরে।
পাড়ায় পাড়ায়, অলিতে গলিতে মুখরোচক জাঙ্কফুডের প্রলোভন উপেক্ষা করে কার সাধ্যি! পকেটে টান থাকলেও মনের টানে ভাটা পড়ে না কোনওভাবেই। আট থেকে আশি, চপ-কাটলেট-চাউমিন-বিরিয়ানির নাম শুনলেই জিভ জল। এ-হেন জাঙ্কফুডে শরীরের চরম ক্ষতি করে ফেলছি আমরা। ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা।
আরও পড়ুন-২৪ ঘন্টায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩১, ১৫ জন শিশু, ক্ষোভ অভিষেকের
কীভাবে বাড়বে রোগ-প্রতিরোধ
স্বামী বিবেকানন্দ বলে গিয়েছিলেন ‘পরিমিত আহার, নিয়মিত ব্যায়াম’ এটাই কিন্তু বেদবাক্য। সপ্তাহে ৫/৬ দিন যে কোনও সময়ে অন্তত ৩০ মিনিট ঘাম-ঝরানো ব্যায়াম করুন। জিমে যে যেতেই হবে তার কোনও মানে নেই। বাড়িতেই করুন কিছু ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ। যোগব্যায়াম করতে পারেন। অন্তত আধঘণ্টা হাঁটুন। এগুলো রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কার্যকারিতাও বাড়বে।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার ঘুম বিশেষভাবে প্রয়োজন। ওই পরিমাণ ঘুম না হলে শরীর বিশ্রাম পাবে না ঠিকমতো। ঘুম ভাঙার পরেও ক্লান্তি থাকবে। তাই ঘুমোতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে। বেশি রাতের বদলে ঘুমোবার অভ্যেস করুন তাড়াতাড়ি। তবেই বাড়বে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা।
আরও পড়ুন-৫৪ মিনিটে ৪ বার ভূমিকম্প নেপালে, কেঁপে উঠল দিল্লিও
ময়দা, আটার মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি-৬ বা পাইরিডক্সিন আছে, যা কিনা প্লিহা ও থাইমাস গ্রন্থির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং অর্গান দুটি রোগ-প্রতিরোধের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্য ‘বি’ ভিটামিনের গুরুত্বও আছে রোগ-প্রতিরোধে। ফলিক অ্যাসিড টাটকা শাকসবজিতে পাওয়া যায়, ভিটামিন বি-১২, লিভার, মাছ, ডিম, ছত্রাক ও শস্যজাতীয় খাদ্যের মধ্যে পাওয়া যায়।
ভিটামিন ‘এ’-তে বিটাক্যারোটিন থাকে যা ত্বক ও মিউকাস মেমব্রেনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, রোগ-প্রতিরোধ তন্ত্রের তীব্রতা বৃদ্ধি করে। অ্যান্টিবডি রেসপন্ডে সাহায্য করে। তাই ভিটামন এ-সমৃদ্ধ খাবার খান।
আরও পড়ুন-বিমান দুর্ঘটনায় প্রয়াত ভারতীয় ধনকুবের হরপল রান্ধাওয়া ও তাঁর পুত্র
স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ গ্রিন-টি-কে তাঁদের ডায়েটে একটা বড় অংশে বসিয়ে ফেলেছে। আপনিও অভ্যস্ত হয়ে উঠুন গ্রিন-টি-তে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যার ফলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এই চা।
ঘি, দুধ ও দুগ্ধজাত যে কোনও খাবারে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে। এ-ছাড়া শাকসবজি, মাছ, চিনাবাদাম ও ডালের মধ্যেও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা ম্যাগনেসিয়ামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে।
সামুদ্রিক মাছ, সামুদ্রিক খাদ্য, মুরগি, লিভার, ডিমের কুসুম, শস্যজাতীয় খাবার, ইলিশ মাছ, মাছের তেল ইত্যাদির মধ্যে সেলেনিয়াম নামক খনিজ লবণ থাকে যা শ্বেত রক্তকণিকা ও ইমিউন এনজাইমের কার্যকারিতা বাড়ায়। এই তেলের মধ্যে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এরা রোগ-প্রতিরোধে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন-দিল্লি থেকে বিজেপির ‘জমিদারি’ হটানোর ডাক দিলেন অভিষেক
রসুনের প্রধান সক্রিয় উপাদান অ্যালিসিন নামের যৌগ। যা শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং টোটাল কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সরাসরি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হলুদের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ লবণ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, লোহা প্রভৃতি থাকে যা অনেক পরিমাণে বাড়ায় রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা।
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গেলে ধূমপান এবং মদ্যপানের অভ্যাস থেকে দূরে থাকুন। কারণ এই নিকোটিন এবং অ্যালকোহল দুটোই আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে সরাসরি প্রভাবিত করে। নিকোটিন ক্ষতি করে ফুসফুসের এবং অ্যালকোহল নষ্ট করে লিভারকে। যার কুপ্রভাবে খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয় রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা। নিয়ন্ত্রিত, সুরক্ষিত জীবনযাপনের মাধ্যমে বাড়িয়ে তুলুন রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা।