বঞ্চনা আর মানব না এবার তোমায় ছাড়ব না

অনেক হয়েছে আর নয়। প্রাপ্য টাকা দাও, নইলে এবার বিদায় নাও। কেন্দ্রের মোদি সরকারকে চরম হুঁশিয়ারি বাংলার মা-মাটি-মানুষের। লিখছেন আকসা আসিফ

Must read

এত গোসা! বিধানসভার ভোটে বাংলার মানুষ মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছিল বলে এখন তাঁদের ভাতে মারার ছক!
মোদি-শাহরা শুনে রাখুন, এই বদমায়েশির মেয়াদ এবার ফুরিয়েছে। সময় বেঁধে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প খাতে বিপুল বকেয়া আগামী সাতদিনের মধ্যে না মেটানো হলে ‘বড় আন্দোলন’ অবশ্যম্ভাবী। ঘুঘু দেখেছে, ফাঁদ দেখা এখনও বাকি। এবার সে সাধ মেটাবে বাংলার মা-মাটি-মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘একাধিকবার অনুরোধ করা হয়েছে। দাবি তোলা হয়েছে রাজ্যের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার। আমি নিজে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এসেছি। কিন্তু কেন্দ্র একটা টাকাও দিচ্ছে না। আমরা আর সাত দিন অপেক্ষা করব। তার পরে বড় আন্দোলনে যাব। এর শেষ দেখে ছাড়ব।’ ফের আন্দোলনের পথে জননেত্রী।

আরও পড়ুন-আজ অভিষেকের প্রশাসনিক সভা

মানুষের দাবিতে মানুষকে নিয়ে আন্দোলনের পথে। বকেয়া টাকা পেতে চেষ্টায় কোনও খামতি রাখেনি তাঁর সরকার। কেন্দ্র যখন যে শর্ত চাপিয়েছে, সব মেনে চলার পরও বাংলার মানুষকে ভুগতে হচ্ছে। স্রেফ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই বাংলাকে আর্থিকভাবে কোণঠাসা করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে মোদি সরকার। কলকাতার রেড রোড থেকে দিল্লির কৃষক ভবন— প্রাপ্য আদায়ের লক্ষ্যে গত এক বছরে বারবার আন্দোলনে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস। রেড রোডে টানা দু’দিন অবস্থানে বসেছিলেন জননেত্রী। বঞ্চিতদের সঙ্গে নিয়ে দিল্লিতে ধরনায় বসেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে নবান্নর তরফে প্রশাসনিক স্তরে সবরকম আলাচনা চালিয়ে যাওয়া হয়েছে কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সঙ্গে। কর্ণপাত করেনি কেন্দ্র। গত মাসে এই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে জট খুলবে বলে আশায় বুক বেঁধেছিল বাংলার প্রান্তিক মানুষ। মোদির আশ্বাস মতো গত সপ্তাহে কেন্দ্র-রাজ্য প্রশাসনিক স্তরের বৈঠকও হয়েছে। তারপর আবার সব চুপচাপ! সেই বৈঠকও কার্যত নিষ্ফলা হতে বসেছে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, টাকা ছাড়ার ব্যাপারে কেন্দ্রের কোনও সদিচ্ছা নেই। কারণ, ১০০ দিনের কাজ এবং আবাস যোজনা নিয়ে বৈঠকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আগের প্রশ্নগুলিই উত্থাপন করছে তারা। সমাধান নিয়ে কোনও আলোচনায় আগ্রহ নেই তাদের। এই পরিস্থিতিতে জোরালো আন্দোলনই একমাত্র পথ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১০০ দিনের কাজ এবং আবাস যোজনার ১৫ হাজার কোটি-সহ মোট ১.১৬ লক্ষ কোটি টাকা কেন্দ্রের থেকে প্রাপ্য বাংলার।

আরও পড়ুন-ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করুক মোদি সরকার, সভায় তোপ দাগলেন চন্দ্রিমা

আসলে এই মোদি সরকার ভাঁওতা দেওয়ার সরকার, ধাপ্পা দেওয়ার সরকার। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে উঠে আসবে ভারত। তার জন্য আর খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না। বুক ফুলিয়ে এমনই দাবি করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু আসল ছবিটা একেবারেই আলাদা। আগামী মার্চ মাসে অর্থবর্ষ শেষে দেশের আর্থিক পরিস্থিতি কী হতে পারে, তার পূর্বাভাস সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট পেশ করেছে পরিসংখ্যান মন্ত্রক। সেখানেই দেখা যাচ্ছে, শুধু করোনাকালে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেশ খানিকটা ধাক্কা খায়। কিন্তু তা বাদে বিগত ২২ বছরে তুলনামূলক ভাল ছিল এই ক্ষেত্রের বৃদ্ধির হার। ২০০২-০৩ অর্থবর্ষে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার ছিল ৬.২ শতাংশ। তারপর থেকে বরাবর তা ৭.৯ শতাংশের উপরেই থেকেছে। পরিসংখ্যান মন্ত্রকের পূর্বাভাস, চলতি অর্থবর্ষ শেষে এদেশের মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধি হার ৭.৯ শতাংশ থাকবে। রিপোর্টে দেওয়া তথ্য বলছে, ২০১৯-২০-এ তা ৫.১ শতাংশে নেমে আসে। অথচ তার আগের অর্থবর্ষেই সেই হার ছিল ৯.৩ শতাংশ। ভাল ফলাফল হয়নি ২০২০-২১ অর্থবর্ষেও। কারণ, করোনা-লকডাউন। পরপর দু’বছর ধাক্কা খেয়েছিল মানুষের রোজগার, দেশের অর্থনীতি। শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বই সেই অভিশাপের বাইরে বেরোতে পারেনি। কিন্তু চলতি অর্থবর্ষে তেমন কোনও বিরূপ পরিস্থিতি না থাকলেও, থমকাল মাথাপিছু আয়বৃদ্ধি। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় কত, তার হিসেব কষা হয় জিডিপির নিরিখে। তথ্য অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে তা ছিল ১ লক্ষ ৭২ হাজার ২৭৬ টাকা। চলতি বছরে সেই মাথাপিছু আয় দাঁড়াতে পারে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৮৫৪ টাকায়। অর্থাৎ বৃদ্ধির হার ৭.৯ শতাংশ। অথচ, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে সেটাই ছিল ১৬ শতাংশ। দেশের ‘নিট আয়’কে সামনে রেখে এই হিসেব কষেছে মোদি সরকার। মোট আয় থেকে সরকারি সম্পদ এবং পরিকাঠামো খাতে বার্ষিক ব্যয় বাদ দিলে ‘নিট আয়’ পাওয়া যায়। কিন্তু যদি দেশের ‘মোট আয়’-এর হিসেব দেখা যায়, তাহলে চলতি অর্থবর্ষে পরিস্থিতি আরও খারাপের আশঙ্কা। সেক্ষেত্রে এবার মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৭.৮ শতাংশে, গত বছর যা ছিল ১৪.৯ শতাংশ। প্রান্তিক মানুষের হাল যদি আর্থিকভাবে উন্নত না হয়, তাহলে অর্থনীতির বৃদ্ধির সুফল কী হবে? অর্থাৎ এই ব্যাপারে যা বলা হচ্ছে, তার কোনও সারবত্তা নেই। সবটাই মিথ্যে। সবটাই জুমলা। কেন্দ্রের পরিসংখ্যান থেকেই সেটা স্পষ্ট।

আরও পড়ুন-৯ কোটিতে মজা খাল হবে সংস্কার

অর্থাৎ, সন মিলিয়ে গোটা ভারতকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে মোদি সরকার। আর পশ্চিমবঙ্গের প্রতি তাদের বিরূপতা অনেকটাই বেশি।
এই মোদি সরকার আর নেই দরকার।
২০২৪-এ আসছে দিন, এদের এবার বিদায় দিন।

Latest article