প্রতিবেদন : নিচুতলায় যারা অন্যায় করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে যুবক-যুবতীদের চাকরি কেড়ে নেওয়ার নেওয়ার ক্ষেত্রে বিচার ব্যবস্থাকে আরও মানবিক হওয়ার আর্জি জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আদালতের নির্দেশে চাকরি চলে গিয়েছে বহু যুবক-যুবতীর। সেই আবহে চাকরিহারাদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নাম না-করে বিচারপতিদের প্রতি আর্জি জানান, কথায় কথায় লোকের চাকরি খাবেন না।
আরও পড়ুন-সংখ্যালঘু ভোটাররা আস্থা রাখেন জোড়া ফুলেই
একনজরে
* আলিপুরে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জুরিসডিকশন বৃদ্ধি
* আদালতের নয়া বিল্ডিংয়ের জন্য ৪৫ কোটি বরাদ্দ
* কোভিডে মৃত আইনজীবীদের পরিবারকে আরও ৫০ হাজার টাকা অনুদান
* আইনজীবীদের জন্য বিশেষ ক্যাম্প করে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হবে, কার্ডের ঊর্ধ্বসীমা ৫ লক্ষ টাকা
আরও পড়ুন-রক্তাল্পতা
মঙ্গলবার আলিপুর জাজেস কোর্টে ঋষি অরবিন্দের মূর্তি উন্মোচন করার পর নিজের ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী আদালতের নির্দেশে চাকরিহারাদের কথা তুলে ধরেন। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান বলেন, চাকরি চলে যাওয়ার পর আত্মহত্যা করছেন অনেকে। জলপাইগুড়িতে সম্প্রতি আত্মহত্যা করেছেন একজন। এই খবর দেখার পর আমার মন ভাল নেই। একটা ছেলে চাকরি করে পরিবারের দেখভাল করে। বাবা-মাকে দেখভাল করে। যারা অন্যায় করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। কিন্তু একটা সুযোগ তো দিন। এমন অন্তত ব্যবস্থা করুন যাতে তারা আবার পরীক্ষা দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এখন বিজেপির সঙ্গে গলা মিলিয়ে সরব সিপিএম। তাদের আমলে কীভাবে শুধু বেছে বেছে দলীয় ক্যাডারদের চাকরি দেওয়া হত, সেকথা স্মরণ করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ করে তিনি বলেন, ওদের দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কাড়বার ক্ষমতা আছে। আমি কোনও সিপিএম ক্যাডারের চাকরি খাইনি, তোমরা কেন খাচ্ছ? কেউ যদি নিচুতলায় অন্যায় করেও থাকে, আমি ন্যায়ের পথে থাকব। আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এটা আমার স্বভাব। এদিনও মুখ্যমন্ত্রী নাম না করে নিশানা করেছেন বামেদের আইনজীবী নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে। মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, PIL (জনস্বার্থ মামলা) আসলে এখন পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশনের জায়গায় পলিটিক্যাল ইন্টারেস্ট লিটিগেশনে পরিণত হয়েছে। কিছু কিছু লোক আছে রাজনীতির জন্য রোজ মামলা করছে।
আরও পড়ুন-সাইবার অপরাধ বন্ধে হাতিয়ার নাটু নাটু
অন্যদিকে বিচার ব্যবস্থা ও আইন ব্যবসায়ীদের জীবনযাত্রার সামগ্রিক মান উন্নয়নে এদিন একাধিক উল্লেখযোগ্য ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, রাজ্যের নিম্ন আদালত ও দায়রা আদালতগুলিকে পর্যায়ক্রমে আধুনিক করে তোলা হবে। প্রথম ধাপে আলিপুরের ফৌজদারি আদালত ভবন ঢেলে সাজানো হবে। ওই কাজের জন্য আগামী বছরের বিভাগীয় বাজেট থেকে ৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করতে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, কলকাতা হাইকোর্টের মানোন্নয়নে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু নিম্ন আদালতগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক সেগুলির মানোন্নয়ন করা হবে। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আইনমন্ত্রী সম্মিলিতভাবে এই পরিকল্পনা তৈরি করবেন।
আরও পড়ুন-বিশ্বের ৫০টি সর্বাধিক দূষিত শহরের মধ্যে ৩৯টি ভারতে
মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, আলিপুর আদালতে এবার থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত মূল্যের আপিল মামলা করা যাবে। এতদিন পর্যন্ত ওই সীমা ছিল মাত্র দেড় লক্ষ টাকা। এর ফলে মামলাকারীদের যেমন সুবিধা হবে তেমনই সেখানকার আইনজীবীরা আরও বেশি করে মামলা পাবেন। করোনা অতিমারির সময় ওই আদালতের ৩৭ জন আইনজীবী মারা গিয়েছেন। তাঁদের পরিবারকে ইতিমধ্যেই ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আইনমন্ত্রীকে ওইসব পরিবারকে আরও ৫০ হাজার টাকা করে এককালীন অর্থ সাহায্য দেওয়ার নির্দেশ দেন। রাজ্যের লিগাল এইড সার্ভিসকে মজবুত করতে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের সেখানে নিয়োগ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন-চাকরি বাতিলের তালিকায় বিরোধীদের নাম বাড়ছে, নিয়োগ দুর্নীতিতে সিপিএম-বিজেপি
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এবার থেকে রাজ্যের আইনজীবী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় চলে আসছেন। তাঁরাও প্রতি বছর এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে ৫ লক্ষ টাকার চিকিৎসা পরিষেবা বিনামূল্যেই পাবেন।