বাঁকুড়া জেলা থেকে প্রকাশিত হয় ‘রাঢ় নবচেতনা’। অতনু চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়। বেরিয়েছে পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যা। প্রবন্ধ ও নিবন্ধ এই সংখ্যার সম্পদ। প্রণব হাজরার লেখার শিরোনাম ‘জলবায়ু সঙ্কট থেকে বিশ্বকে উদ্ধার করতে পারে আদিবাসীদের ব্যবহারিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা’। আগ্রহ তৈরি হয় লেখাটি ঘিরে।
আরও পড়ুন-আইসল্যান্ডে ১৪ ঘণ্টায় ৮০০ ভূমিকম্প! জরুরি অবস্থা জারি
শুরু হয়েছে খনার বচন দিয়ে। প্রাচীনকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন স্তরে খনার বচনের কী গুরুত্ব, দেখিয়েছেন লেখক। বলেছেন, ‘বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিষয়, যেমন শস্যগণনা, বন্যা, বৃষ্টি, কুয়াশা প্রভৃতি নিয়ে খনার ভবিষ্যৎবাণী সেই সময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি থেকে অনেক পিছিয়ে থাকা আমাদের দেশের মানুষকে সতর্ক করে দিত, চলার পথে নিশানা ঠিক করে দিত।’ ঠিক তারপরেই বলা হয়েছে, ‘আজও অরণ্যের সন্তান আদিবাসীরা পাখির ডাক, আকাশের রং দেখে ঝড়-বৃষ্টি ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস দিয়ে থাকে।’ কীভাবে? তথ্য এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে।
আরও পড়ুন-বাংলার উন্নয়নে চলছে কেন্দ্রের বঞ্চনা, পাশে দাঁড়াল বিশ্বব্যাঙ্ক
কাহার সম্প্রদায় সমাজের নিম্নবর্গের মানুষ। প্রচলিত ঐতিহ্য অনুযায়ী এই কৌম গোষ্ঠী পালকিবাহক সম্প্রদায় নামে পরিচিত। এই গোষ্ঠীকে নিয়ে অনবদ্য একটি প্রবন্ধ উপহার দিয়েছেন ড. সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। শিরোনাম ‘নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চা : কাহার কথা’।
বাঁকুড়ার পুণ্যভূমিতে জন্মগ্রহণ করেন নরহরি অবধূত স্বামী এবং বৈষ্ণব চরণদাস শাস্ত্রী। দুজনেই ছিলেন সাধক। এঁদের নিয়ে নিতাই নাগ লিখেছেন, ‘বাঁকুড়ার ভূমিপুত্র বৃন্দাবনে সাধনশীল দুই আচার্য পুরুষ’।
বিয়ের পাত্রী দেখতে গিয়ে রীতিমতো পরীক্ষা দিতে হয়েছিল তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যা রীতিমতো জটিল এবং বিরক্তিকর। পড়তে হয়েছিল বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখে। অপমানিত বোধ করেন, হয়ে ওঠেন ক্রুদ্ধ। যদিও তাঁর বিয়ে হয়েছিল অন্যত্র। পাত্রী ছিলেন নিজের গ্রামের মেয়ে উমাশশী। বিয়ে সুসম্পন্ন হয়েছিল ধুমধাম করে। তবে শুনতে হয়েছিল লোকরটনা। জানা যায় ড. দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘তারাশঙ্কর : কনে দেখা ও বিয়ের কথা’ লেখাটি পড়ে।
আরও পড়ুন-বঞ্চনার জবাব দেবে বাংলা, বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চে শপথ, কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, ধরা পড়ল একই দৃশ্য
ছয়ের দশকে দমকা ঝোড়ো বাতাসের মতো বয়ে গিয়েছিল হাংরি আন্দোলন। আন্দোলনের অধিকাংশ কবিই হারিয়ে গেছেন বা ফুরিয়ে গেছেন। স্থায়িত্ব লাভ করতে না পারলেও, এই আন্দোলন ছাত্র-যুব সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করেছিল। ‘বাংলা কবিতার বিবর্তন ও হাংরি জেনারেশন’ প্রবন্ধে লিখেছেন আশিস মিশ্র।
এ-ছাড়া সংহিতা ব্যানার্জি, অনিলবরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়, চিত্তরঞ্জন চক্রবর্তীর প্রবন্ধ-নিবন্ধগুলো উল্লেখ করার মতো।
আরও পড়ুন-চম্পাহাটির পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকার, মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ বাজি ব্যবসায়ীদের
নন্দ চৌধুরীর উপন্যাসিকা ‘মহাভারতের মহাপ্রবেশ’ ভাল লাগল। চরিত্রনির্মাণ, সংলাপ এবং বর্ণনা চমৎকার। তবে কয়েকটি পর্বে বিভক্ত হলে লেখাটি পড়তে আরেকটু সুবিধা হত।
আছে কয়েকটি গল্প। মন ছুঁয়ে যায় ধীরেন্দ্রনাথ কর, ফজলুল হক, হীরালাল ঘোষ, করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখাগুলো। রম্যরচনা উপহার দিয়েছেন সুভাষচন্দ্র মণ্ডল, উদয়কুমার মুখোপাধ্যায়।
কবিতা বিভাগটি আকর্ষণীয়। ঘটেছে প্রবীণ এবং নবীনের মেলবন্ধন। লিখেছেন মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়, অমিয়কুমার সেনগুপ্ত, নিশীথ ষড়ংগী, সুব্রত সেনগুপ্ত, তনুশ্রী চক্রবর্তী, অমিয় ভাণ্ডারী প্রমুখ। সবমিলিয়ে অনবদ্য একটি সংখ্যা। উৎসব শেষে নিভে যাবে আলো। কিন্তু তখনও থেকে যাবে এই পত্রিকার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা। কারণ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রয়েছে পরিকল্পনার ছাপ। বিশ্বরূপ দত্তের প্রচ্ছদ ছিমছাম। ৩৯৮ পৃষ্ঠার পত্রিকা। দাম ৩৫০ টাকা।
আরও পড়ুন-বঞ্চনার জবাব দেবে বাংলা, বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চে শপথ, কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, ধরা পড়ল একই দৃশ্য
হুগলি জেলা থেকে প্রকাশিত হয় ‘শতানীক’। নিত্যরঞ্জন দেবনাথের সম্পাদনায়। বেরিয়েছে শারদীয়া সংখ্যা। বিষয়-বৈচিত্র্যে ভরপুর। লিখেছেন বিভিন্ন প্রজন্মের কবি ও সাহিত্যিকেরা। স্থান পেয়েছে কয়েকটি মূল্যবান প্রবন্ধ। তৈমুর খানের লেখার শিরোনাম ‘সব কবিই মহাজীবনের, সব কবিতাই মহাকাব্যের অংশ’। কয়েকটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে লেখাটি। বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে মহাকাব্যিক পক্ষবিস্তারের কয়েকজন কবির উপর।
আরও পড়ুন-সারা বছর ধরেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার
একজন লেখক বা কোনও বিশেষ রচনা নিয়ে যতটা আলোচনা হয়, ততটা আলোচনা হয় না কোনও বিশেষ পত্রিকা নিয়ে। অথচ পত্রিকাই একজন লেখকের প্রাথমিক প্রকাশ মাধ্যম। ‘চূর্ণ ইতিহাস : অনিবার কথা’ রচনায় শ্যামলজিৎ সাহা আলোকপাত করেছেন ‘শায়ক’ পত্রিকার উপর। পত্রিকাটি ঘিরে কবি লেখকদের একদা জমায়েতের কাহিনি এই প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।
হাসান আজিজুল হক বাংলা কথাসাহিত্যের কিংবদন্তিতুল্য একজন ধীমান পুরুষ। তাঁর হাতে বাংলা গদ্যসাহিত্য পেয়েছে নতুন পথের মাত্রা। তাঁকে নিয়ে অসাধারণ একটি গদ্য উপহার দিয়েছেন সমরেন্দ্র বিশ্বাস। শিরোনাম ‘দেশভাগ, দ্বিখণ্ডিত বিবেক ও হাসান আজিজুল হক’।
আরও পড়ুন-তারাদের ভাইফোঁটা
সুকুমার রায়ের আগে এমন প্রাণমাতানো ফুর্তির ফোয়ারায় ভরা ছড়া আর কারও হাত থেকে বেরোয়নি। তিনি ছিলেন নিয়তিতাড়িত। অকালেই ঝরে গিয়েছিলেন। একশো বছর আগে। ছড়ার পাশাপাশি লিখেছেন বেশকিছু গল্প। সেই গল্পগুলোর আলোচনা ধরা পড়েছে জগন্ময় সেনগুপ্তর ‘সুকুমার রায়ের গল্প বুদ্ধির বিভা ও হাস্যরসের রসায়ন’ রচনায়।
ড. বাসুদেব রায়, তাপসকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, কাকলি দেবনাথের প্রবন্ধগুলোও উল্লেখ করার মতো।
বিশেষ রচনায় বিমল লামার ‘লোচন দাস শব্দকরের জন্মকথা’, কমলাকান্ত দাশগুপ্তর ‘মন’, দেবজাত-র ‘দূর আকাশে তোমার সুর’ গভীর, মননশীল।
আরও পড়ুন-বঙ্গের মাতৃকা শক্তি কালী
শান্তিপ্রিয় চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসিকা ‘কীটদষ্ট’ বেশ টানটান। ফুটে উঠেছে সম্পর্কের নানা দিক। কখনও অম্ল, কখনও মধুর। ঝরঝরে গদ্য। একদমে পড়ে ফেলা যায়।
বড়গল্পে অশোক মুখোপাধ্যায়, অসীমকুমার মুখোপাধ্যায়, যুগান্তর মিত্র, অর্চনা ভট্টাচার্য, মৌমিতা চক্রবর্তী এবং ছোটগল্পে সুকুমার রুজ, দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়, সুব্রত বসু, স্বপন মজুমদার বিশেষভাবে রেখাপাত করেন।
কবিতা লিখেছেন দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, কালীকৃষ্ণ গুহ, শ্যামলকান্তি দাশ, সুজিত সরকার, শংকর চক্রবর্তী, সৈয়দ কওসর জামাল, হিন্দোল ভট্টাচার্য, সমরেশ মণ্ডল, হাননান আহসান, তৃষ্ণা বসাক, পাপড়ি গঙ্গোপাধ্যায়, অলক্তিকা চক্রবর্তী, জুলি লাহিড়ী, তীর্থঙ্কর সুমিত, তাপসকুমার রায় প্রমুখ।
আরও পড়ুন-শিশুদিবস ও কিছু কথা
এ-ছাড়াও আছে ধারাবাহিক রচনা, স্মৃতিকথা, সাক্ষাৎকার, অণুগল্প, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনি, পুস্তক আলোচনা। কোনওরকম বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ছাড়াই বৃহদাকার একটি সংখ্যা প্রকাশ করেছেন সম্পাদক। রীতিমতো উচ্চমানের। শুধুমাত্র সাহিত্যকে ভালবেসে। এর জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। প্রচ্ছদশিল্পী মুনিকেশ শীল। ৫৬৮ পৃষ্ঠার পত্রিকা। দাম ২০০ টাকা।