প্রতিবেদন : বনগাঁর বাগদার জিতপুর সীমান্তের নারকীয় গণধর্ষণের ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জবাবদিহি চাইল তৃণমূল কংগ্রেস। একই সঙ্গে সীমান্ত রক্ষাকারী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এর জওয়ানদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দল। তৃণমূল কংগ্রেসের সাফ কথা, ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিন প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লা থেকে মহিলাদের নিরাপত্তা-উন্নয়নের কথা বলছেন, অন্যদিকে একজন মহিলাকে গণধর্ষিতা হতে হচ্ছে বিএসএফ জওয়ানদের হাতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কেন এই ঘটনায় জবাবদিহি করবেন না? কেন এখনও পর্যন্ত দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বা স্বরাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হল না?
আরও পড়ুন-রাস্তায় বিজেপির কোন্দল, বখরা নিয়ে মারামারি
শনিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বিএসএফ জওয়ানদের দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অত্যাচার, আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা পাচারে যুক্ত থাকা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে তাদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকা এমনকী তাদের ১৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত এক্তিয়ার বাড়িয়ে রাজ্যের অংশে দখলদারি করা সহ একাধিক বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল রবিবার বাগদার জিতপুরে যাবে। সেখানে প্রতিবাদ সভা করবে দল। এই গণধর্ষণের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা রাজ্য জুড়ে। যেখানে রক্ষকই ভক্ষক সেখানে কীভাবে বিএসএফের উপর ভরসা করবে বাংলা সীমান্তবর্তী অঞ্চলের সাধারণ মানুষ!
আরও পড়ুন-বিশ্বকাপের পর ফের মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান, আজ মহারণ
তৃণমূল কংগ্রেস বিএসএফের বিরুদ্ধে নয়। জওয়ানদের অসম্মান করার কোনও উদ্দেশ্যও তৃণমূলের নেই। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বা প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে যেভাবে এদের ব্যবহার করা হচ্ছে প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই। আসলে বিএসএফ বা বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স এখন পরিণত হয়েছে বিজেপি সিকিউরিটি ফোর্সে। সাফ কথা কুণাল ঘোষের। বিএসএফ জওয়ানদের অপকর্মে সীমান্তবর্তী এলাকায় জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে।
এখানেই প্রশ্ন উঠছে—
১. এই কারণেই কি বিএসএফের এক্তিয়ার বাড়িয়ে ১৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত করা হয়েছে? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার এ নিয়ে আপত্তি করেছেন, কেন্দ্র কর্ণপাত করেনি। সীমান্তবর্তী এলাকায় অত্যাচার চালাচ্ছে বিএসএফ। নইলে এক তরুণীকে তাদের হাতে গণধর্ষিতা হতে হয়? তাঁর শিশুকন্যাকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়?
আরও পড়ুন-হাম, রুবেলা টিকায় উদ্যোগ স্বাস্থ্য বিভাগের
২. বিএসএফ-এ কি দক্ষ অফিসাররা নেই? জওয়ানরা নেই? নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু তাদের কাজে লাগানো হচ্ছে এ রাজ্যের দু’আনা-চার আনা বিজেপি নেতাদের বডিগার্ড হিসেবে। আর যেসব জওয়ানদের সীমান্ত পাহারায় রাখা হচ্ছে, তারা কী কুকর্ম করছে, তা চোখের সামনেই দেখা যাচ্ছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিএসএফ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে সাধারণ মানুষের। তাদের আতঙ্কে-অত্যাচারে-তাণ্ডবে অতিষ্ঠ মানুষ।
৩. মানুষ ভুল থেকে শিক্ষা নেয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ভুল থেকেও শিক্ষা নেয়নি। তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হল, শীতলকুচিতে যেভাবে বিএসএফ জওয়ানরা সাধারণ মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলেছে তারপরে ওই কেসে জওয়ানদের কী শাস্তি হয়েছে বা ওই ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক কী পদক্ষেপ করেছে আজও সাধারণ মানুষ তা জানে না। তবে এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে বিএসএফকে দিয়ে রাজ্যের এলাকায় ঢুকে পড়ে দখলদারি করার চেষ্টা চলছে এবং রাজনৈতিক স্বার্থে কুৎসিতভাবে বিএসএফ জওয়ানদের কাজে লাগানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন-হেগেলের কিছু উল্লেখযোগ্য উদ্ধৃতি
৪. সীমান্তে গরু পাচারের কথা বলছে বিজেপি? তৃণমূল কংগ্রেসের প্রশ্ন, গরুর তো আর ডানা নেই যে তারা উড়ে সীমান্ত পার হবে। বিএসএফের যোগসাজশ ছাড়া এপার থেকে ওপারে গরু পাচার হয় কীভাবে? কয়লা পাচার হচ্ছে অথচ সিআইএসএফ জানে না তা তো হতে পারে না। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা থেকে গরু এ রাজ্যে আসছে তারপর নাকি বাংলাদেশে যাচ্ছে। এক রাজ্য থেকে আর এক রাজ্যে গরু কীভাবে চলে যাচ্ছে? যাদের এগুলো দেখার কথা তারা কি ঘুমোচ্ছিল? বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো কী করছিল? আসলে অমিত শাহর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এখন বিএসএফ, সিআইএসএফ বা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার কাজ করাচ্ছে। আর তার জন্যই যত গন্ডগোল তৈরি হচ্ছে। একের পর এক ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটছে এ রাজ্যে।
আরও পড়ুন-পুজোর লেখালিখি
বাগদায় গণধর্ষণের প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ডাঃ কাকলি ঘোষদস্তিদার, মন্ত্রী শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সাংসদ সুস্মিতা দেবরা।