প্রচেত গুপ্ত: কোনও কোনও সাহিত্যস্রষ্টা থাকেন, যাঁরা যুগের পর যুগ ছোটদের সমান আকর্ষণ করে যান তাঁর লেখার মাধ্যমে। এঁদের সংখ্যা হাতেগোনা। যদিও বাঙালি পাঠকের ভাণ্ডারে সেই সংখ্যায় খুব একটা কম নয়। তাঁদেরই মধ্যে ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় একজন। ৫০-৬০ বছর আগে যিনি ছোট ছিলেন, তাঁকেও যেভাবে তাঁর লেখায় আকর্ষণ করেছেন, এখন যে ছোট তাকেও ঠিক একইভাবে টেনেছেন তাঁর লেখায়। যার অন্যতম পাণ্ডব গোয়েন্দা। মিত্তিরদের বাগানে স্কুলপড়ুয়া পাঁচ বন্ধুর অভিযানের নকশা। অচেনা কাউকে দেখলে সঙ্গী পঞ্চুর ভৌ ভৌ। ঠিক যেন পাশের বাড়ির ছেলে কিংবা পাড়ার একটা গ্যাং। বাঙালি পাঠককুলের কাছে এমনটাই হয়ে উঠেছিল পঞ্চপাণ্ডব।
আরও পড়ুন-হোলিতে কম মেট্রো
ক্ষুরধার লেখনী, কিংবা ভাষার মারপ্যাঁচ নয়, অতি সাধারণ লেখায় পাণ্ডব গোয়েন্দার কাহিনিগুলির মূল আকর্ষণই ছিল ‘বন্ধুত্ব’। রহস্য, অ্যাডভেঞ্চার, ভ্রমণ সবকিছুতেই ছিল পাঁচ বন্ধুর মনের টান। একে অপরের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রবণতা। যে বন্ধুত্বই পাণ্ডব গোয়েন্দার আকর্ষণ বাড়িয়েছে যুগের পর যুগ। বছরখানেক আগে এক বইমেলায় দেখেছিলাম ষষ্ঠীদার কলম পাঠকদের আবদারের অটোগ্রাফ দিতে দিতে ক্লান্ত হচ্ছে না। যে পাঠকদের ভিড়ে রয়েছে ৫০ বছর বয়সি বাবা-মা, তাঁদের ছোট ছেলেমেয়েরা। তাই যুগের পর যুগ কীভাবে পাঁচ কিশোরের অভিযান বাঙালি পাঠককে টেনে রেখেছে, তা ওইদিন বুঝেছিলাম।
আরও পড়ুন-সোমবার থেকে ফের বিধানসভা
আজ এই স্বজনহারানোর দিনে একটা কথা বারবার মনে পড়ছে যে সাহিত্যিক ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। আরও বেশি মর্যাদা পাওয়া উচিত ছিল ওঁর। আজ কিংবা আগামী দিন যখনই শিশুসাহিত্য এবং বাঙালির কিশোর সাহিত্য নিয়ে আলোচনা হবে তার শুরুতে ওঁর মূল্যায়ন নিয়ে আলোচনা দরকার। বাংলা সাহিত্য থেকে ষষ্ঠীপদ কোনওদিনই হারাবেন না।