ভোট এলেই সেই একই ঢপের ধারাপাত। দু’কোটির নামতা। বছরে অত লোকের কর্মসংস্থান হবে কীভাবে, তার কোনও দিশা, কোনও ব্লু প্রিন্ট নেই কোত্থাও।
বছরে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি এখনও অধরা। সেটা গত ১০ বছর ধরেই। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ঘটা করে রোজগার মেলা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাতেও অবশ্য প্রতিশ্রুতির অঙ্ক মেলেনি। উল্টে ৪৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে বেকারত্ব। সামনে আরও একটা লোকসভা নির্বাচন। তৃতীয়বারও ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া মোদি সরকার। ভোটে জিততে তাদের বাজি এবার রামমন্দির (Ram Temple)। কিন্তু চাকরি? রামমন্দির নিয়ে গেরুয়া ব্রিগেডের শত ব্যস্ততার মধ্যেও দেশজুড়ে কর্মহীনতার আসল চেহারাটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল কেন্দ্রীয় স্তরের বিশেষজ্ঞ সংস্থা সিএমআইই।
ওই সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বিগত ১০ বছরে ভারতের বেকারত্বের হার প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ২০১৪ সালে মোদি ক্ষমতায় আসার সময় তা ছিল ৫.৪৪ শতাংশ। ২০২৩ সালের নভেম্বরে সেই হার ৯.২ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। দু’-একদিনের মধ্যে প্রকাশিত হবে ডিসেম্বরের রিপোর্ট। সেখানে বেকারত্বের হার ১০ শতাংশ ছাড়াবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। গত অক্টোবরেও তা ১০.০৯ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। আগের দু’বছরের মধ্যে সেই হার ছিল সর্বাধিক। ২০২৩ সাল শেষের পরিসংখ্যান তাকেও ছাপিয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০১৯ এর কথা মনে আছে মোদি বাবুদের?
লোকসভা ভোটের আগে এই ইস্যুতে সরকারি পরিসংখ্যানই অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিল মোদি সরকারকে। কারণ, গত ৪৫ বছরের রেকর্ড ছাপিয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়ায় ৬.১ শতাংশ। সেযাত্রায় সরকারি তথ্যই বেমালুম অস্বীকার করে কেন্দ্র। পরে, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর অবশ্য ঢোঁক গিলতে বাধ্য হয়। বিগত ৯ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিভিন্ন অবিজেপি নেতা বারবার প্রশ্ন তুলেছেন— ২০১৪ সালে সরকারে আসার পর থেকে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য কী কী পদক্ষেপ করেছে মোদি সরকার? কতজনের চাকরি হয়েছে?
আরও পড়ুন- নতুন দুইয়ে বছর শুরু
গোটা বিষয়টি প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে পাঠানোর মতোই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছু নয়। আজ তাই লোকসভা ভোটের মুখে কেন্দ্রের কাছে জবাব চাইছে আমজনতা। মোদি সরকারের পুরোটাই যে জুমলা, সেটা আরও একবার করে প্রকাশ্যে চলে এসেছে। লক্ষ করার বিষয়, এটা কোনও বিরোধী দলের দাবি নয়। একেবারে বিশেষজ্ঞ সংস্থার রিপোর্টেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, বিগত ১০ বছরে কর্মসংস্থানের বিষয় একেবারে ফেল করেছে মোদি সরকার।
সিএমআইই-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে দেশের বেকারত্বের হার ছিল ৮ শতাংশ। গত বছরের নভেম্বরে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৯.২ শতাংশে। এক বছরের মধ্যেই কেন এভাবে লাফিয়ে বাড়ছে দেশের বেকারত্বের হার?
কী কী বিষয় থেকেই বা তা বিচার করেছে এই বিশেষজ্ঞ সংস্থা সেটাও রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে। রাজ্যের অর্থনীতির উপরই সাধারণত নির্ভর করে বেকারত্বের হার। সেই নিরিখে অন্যান্য একাধিক রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি বেশ ভাল। বাংলায় বেকারত্বের হার বাম আমলের তুলনায় ৪০ শতাংশ কমেছে বলেই দাবি মুখ্যমন্ত্রীর। বিশেষজ্ঞ সংস্থার রিপোর্টেও তার সমর্থন মিলেছে।
অন্যদিকে আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের (Ram Temple) উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা নিয়ে প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। সেখানে কোনও ঢিলেঢালা ভাব নেই। এর মধ্যেই ২২ জানুয়ারির অনুষ্ঠান নিয়ে ক্ষোভের সুর পুরীর শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতীর কণ্ঠে। প্রাণপ্রতিষ্ঠার ওই অনুষ্ঠানে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মন্দিরের গর্ভগৃহে রামলালার মূর্তি সিংহাসনে স্থাপন করতে চলেছেন, এমনটাই সংবাদ মাধ্যমের সূত্রে জানা গিয়েছে। তারই প্রতিবাদে সরব পুরীর শঙ্করাচার্য। এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মধ্যপ্রদেশের রতলামে এসে স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতীর ঘোষণা, ২২ জানুয়ারি অযোধ্যার অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দিচ্ছেন না। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘মোদিজি যদি উদ্বোধন করেন, মূর্তি স্পর্শ করেন, তাহলে আমি কি সেখানে হাততালি দিয়ে উল্লাস করতে যাব? এমন অনুষ্ঠানে কেন যাব? আমার পদেরও মর্যাদা আছে। রামমন্দিরে (Ram Temple) মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠা সনাতন ধর্মের শাস্ত্রীয় রীতি মেনে করতে হবে।’’
জীবন্ত রামলালাদের কর্মসংস্থান না করে রামলালার মূর্তি নিয়ে ভোট সংস্থানের চেষ্টা চালান যাঁরা তাঁরা আর যাই হোন সত্যিকার রামভক্ত নন। একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।