একচুমুকেই স্বাস্থ্য

চায়ের কাপে ঝড় নয়, আসুক প্রশান্তি আর সুস্থতা। ভেষজ চা— শতাব্দীপ্রাচীন এই সম্পদ পৃথিবীর সর্বত্র সমাদৃত। ঔষধি গুণের আধার এইসব ভেষজ চা-তে রয়েছে একশোভাগ স্বাস্থ্যের আশ্বাস। লিখেছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

ভেষজ চা কিন্তু শতাব্দীপ্রাচীন এক সম্পদ। আমরা যে চা খাই সাধারণ ব্ল্যাক টি ছাড়া গ্রিন টি এবং ওলং টি যা চা-গাছেরই পাতা থেকে আসে কিন্তু বাদবাকি গুণী ভেষজ চা বা হার্বাল টি যাকে বলে, তা তৈরি হয় বিভিন্ন ড্রাই ফ্রুটস, ফ্লাওয়ার, স্পাইসেস এবং হার্বস দিয়ে। তাই ভেষজ চা মানেই স্বাস্থ্যের আশ্বাস। এর প্রতিটি উপাদান প্রাকৃতিকভাবেই বহু রোগের নিরাময় করে এবং দেয় তরতাজা অনুভূতি।

আরও পড়ুন-পুনর্বাসন দিতে চায় পুরসভা, বাধা রেলের

ক্যামোমাইল টি
ক্যামোমাইল চায়ের আসল গুণ উত্তেজনার প্রশমন ও মনকে প্রশান্তি দেওয়া। অনিদ্রায় ভুগছেন? ক্যামোমাইলে রয়েছে এর আসল দাওয়াই। প্রায় ৮০ জন অনিদ্রায় ভোগা মহিলার উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে দু’সপ্তাহ ক্যামোমাইল চা পানের পর তাঁদের ঘুমের সমস্যা কমেছে সঙ্গে অবসাদও কমে গেছে অনেকটা। অ্যাকিউট ইন্সমনিয়ার রোগীদের উপর ক্যামোমাইল চায়ের একটি বিশেষ পরীক্ষা করে দেখা গেছে তাঁদের রাতে ঘুম না আসার সমস্যা অনেকটা কমে গেছে। রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায় এই চা তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব উপকারী। ধ্বংস হয় ক্যানসার কোষও। প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম হতে দেয় না ক্যামোমাইল টি।

আরও পড়ুন-মিরিক ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র হল মহকুমা হাসপাতাল

কীভাবে বানাবেন
কাচের জারে সংরক্ষণ করে রাখুন ক্যামোমাইল টি। ফোটানো গরম জলে দু’চামচ দিয়ে ঢেকে রাখুন দশমিনিট। এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন।
পিপারমেন্ট টি
পিপারমেন্ট টি বা পুদিনা চা-এর সুনাম রয়েছে হজম ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য। এই চা-তে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ক্যানসারাস, অ্যান্টি- ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল প্রপার্টি। পিপারমেন্ট তেল এবং চা দুই-ই স্টমাক পেন, বদহজম, বমিভাবের অব্যর্থ দাওয়াই। যাঁদের আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম জনিত সমস্যা রয়েছে নিয়মিত দু’বার পিপারমেন্ট চা পান করলে বেশ উপকার পাবেন। ঠান্ডা লাগা, হাঁপানি কমায় এই চা। এতে রয়েছে মেনথল জাতীয় উপাদান যা মাথাব্যথার উপশম করে।

আরও পড়ুন-তৃণমূলই করতে পারবে উন্নয়ন

কীভাবে বানাবেন
দু’কাপ জল নিন। ফুটলে ওর মধ্যে একমুঠো পুদিনা পাতা দিন ও নামিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন দশমিনিট। লেবুর রস একচামচ দিয়ে পান করুন। গুড় দিতে পারেন সামান্য।
জিঞ্জার টি
আদা চা আমাদের জীবনের উপকারী বন্ধু। এখন নানারকম মশলা আর ফ্লেভার দেওয়া আদা চা পাওয়া যাচ্ছে যার বহু গুণ। সর্দিকাশি, গলা ব্যথা, মাথার যন্ত্রণায় আদা চা কতটা উপকারী তা বলার কিছু নেই। কিন্তু পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে আদা চা। খাওয়াদাওয়ার অনিয়মজনিত পেট ব্যথা বা তলপেটে ব্যথার জন্য খুব কার্যকরী এই চা। গ্যাস, অম্বলের সমস্যাও কম করে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে জিঞ্জার টি।

আরও পড়ুন-আগরতলায় তৃণমূলের পদযাত্রায় জনজোয়ার, রোড শো তৃণমূল সুপ্রিমো- অভিষেকের

কীভাবে বানাবেন
ফ্রেশ এক ইঞ্চি আদা পাতলা করে কেটে নিন। দু’কাপ জল গরম করুন, ওর মধ্যে আদার টুকরো এবং একটা ছোট দারচিনির টুকরো দিয়ে দিন, ভাল করে ফোটান। এবার ঢাকা দিন। পাঁচমিনিট পরে ছেঁকে নিন, ওর মধ্যে এক চামচ ম্যাপেল সিরাপ দিয়ে পান করুন।
হিবিসকাস টি
বিশেষজ্ঞদের মতে, লাল জবার চা বা হিবিসকাস টি শরীরে অমৃতের মতো কাজ করে। কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা হ্রাস করে এই চা। হাইপারটেনশন কমায়, যে কোনও ধরনের হার্টের সমস্যাকে দূরে রাখে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান। ওজন কমাতে চাইছেন? নিয়মিত দু’কাপ করে জবা চা পান করুন। এটি দেহের ফ্যাট বার্ন করে। নিয়মিত এই চা পানে লিভারের ডিটক্সিফাইং এনজাইম ক্ষরণ বাড়ে। লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। এতে রয়েছে ভরপুর ভিটামিন সি। জবা চা আমাদের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধ করে।

আরও পড়ুন-সমালোচিত সিবিআই

কীভাবে বানাবেন
দু’কাপ জল ফুটিয়ে ওর মধ্যে একমুঠো জবা চা দিন, ঢাকা দিয়ে নামিয়ে রাখুন। দশ মিনিট ভেজার পর এবার ছেঁকে নিন। ওর মধ্যে লেমন গ্রাস, লেবুর খোসা বা তুলসী পাতা দিন তিনটে তারপর পান করুন। চাইলে মধু দিতেই পারেন।
সেজ টি
সেজ টি পুরোপুরি ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি চা। স্মৃতিশক্তি প্রখর করতে, মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য করে। অ্যালঝাইমার্স রোগ কমাতে এর গুরুত্ব রয়েছে। মানসিক অবসাদ, স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি কমাতে অনবদ্য সেজ টি। হার্ট ভাল রাখে এই ভেষজ চা। এটি কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। কোলেস্টেরল কমায়। ত্বকে উজ্জ্বলতা আনতে সেজ টি দারুণ ভাল।

আরও পড়ুন-দেড় বছর অপেক্ষার শেষে টেস্টে এবার ভরত

কীভাবে বানাবেন
দু’কাপ কাপ জল খুব ভাল করে ফোটান। এবার ওর মধ্যে একমুঠো সেজ দিয়ে দিন। দশ মিনিট ঢাকা দিয়ে রাখুন। এরপর পাতিলেবুর রস এক চামচ মিশিয়ে পান করুন।
রোজ হিপ টি
রোজ হিপ টি গোলাপ গাছে ফল থেকে তৈরি হয়। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি, রয়েছে অ্যান্টি- ইনফ্লামেটরি উপাদান, যে কোনও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। গবেষণা অনুযায়ী রোজ হিপ চা-তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই চা নিয়মিত খেলে ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়ে, বয়সের ছাপ আসে না। এতে রয়েছে খুব কার্যকরী ফাইটিং এজেন্ট যা ত্বককে দূষণ থেকে রক্ষা করে। পাকস্থলীকে কর্মক্ষম রাখে। রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে এই ভেষজ চা।

আরও পড়ুন-আদানি-কাণ্ড: LIC অফিসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন তৃণমূলের, সংসদে আলোচনা চায় দল

কীভাবে বানাবেন
চার কাপ জল ফুটতে দিন একটি প্যানে। এবার ওর মধ্যে চারটে শুকনো রোজ হিপ দিয়ে দিন। ঢাকা দিয়ে আট মিনিট ফোটান। এবার নামিয়ে দশমিনিট ঢেকে রাখুন। ছেঁকে নিন। এক চামচ মধু দিয়ে পান করুন।
লেমন বাম টি
লেমন বাম হল পুদিনা গোত্রের একটি সুগন্ধি ভেষজ। এই পাতার চা খুব সুগন্ধি হয় এবং একটা তরতাজা অনুভূতি আনে। মনের অবসাদ দুর করে মুহূর্তে। আমাদের দেহের ধমনিগুলোকে শক্ত হতে দেয় না, স্বাভাবিক স্থিতিস্থাপক রাখে। ফলে হার্টের রোগের সম্ভাবনা কমে। ত্বকের ইলাস্টিসিটি ঠিক রাখে বহুদিন। রোজ দিনে দু’বার লেমন বাম টি খেলে শরীরে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইম বৃদ্ধি পায়। অক্সিডেটিভ সেল ড্যামেজ রোধ করে। গবেষণা অনুযায়ী হার্টের প্যালপিটিশন কমায়, অ্যাংজাইটি রোধ করে এই ভেষজ চা।

আরও পড়ুন-আগরতলায় তৃণমূলের পদযাত্রায় জনজোয়ার, রোড শো তৃণমূল সুপ্রিমো- অভিষেকের

কীভাবে বানাবেন
লেমন বাম পাতা রোদে রেখে শুকিয়ে বাড়িতে স্টোর করে রাখতে পারেন। প্যানে জল ফুটিয়ে এক মুঠো ওই শুকনো পাতা দিয়ে দিন সঙ্গে কুড়িটা তাজা পাতাও দিন। এবার ঢাকা দিয়ে দিন। দশ মিনিট রাখুন। ছেঁকে নিয়ে লেবুর রস এক চামচ ও দু’ফোঁটা মধু দিয়ে পান করুন।

Latest article