প্রতিবেদন : রাজ্যপাল যাদবপুরে যাঁকে উপাচার্য করে পাঠিয়েছেন, তিনি চান না পড়ুয়া-স্বার্থে সেখানে সিসি ক্যামেরা লাগানো হোক। অথচ তাঁর যুক্তি, নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। যেখানে প্রশাসন-সহ গোটা ছাত্র-সমাজ, অভিভাবকরা চাইছেন অদূর ভবিষ্যতে যাতে আর কোনও স্বপ্নভঙ্গ না হয়, তাঁদের ছেলে-মেয়েদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরা বসানো-সহ যাবতীয় পদক্ষেপ করা হোক। কিন্তু যাঁর হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভার দেওয়া হল, তিনি চান না সিসি ক্যামেরা বসুক। একেই বলে পাগলা রাজার আজব খেয়াল।
আরও পড়ুন-ফের কাঠগড়ায় উত্তর প্রদেশ, ৫ বছরের শিশুকে আছাড় মেরে খুন
র্যাগিংয়ের জেরে একটি জীবন চলে গিয়েছে। বাবা-মা তাঁদের ছেলেকে হারিয়ে হাহাকার করছেন। গোটা বাংলা শিউরে উঠছে প্রতিদিন যাদবপুরের ভিতরের অন্ধকারের দিকগুলো সামনে আসায়। সেখানে একজন উপাচার্য কীভাবে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করতে পারেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সব মহলেই।
যাদবপুর-কাণ্ডে শনিবার রাতে জয়দীপ ঘোষ নামে আরও এক প্রাক্তনীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের অভিযোগ, এই জয়দীপের জন্যই জখম পড়ুয়ার মৃত্যুকালীন জবানবন্দিও নিতে পারেনি পুলিশ। সেই রাতে ঘটনার পর হস্টেলের গেট বন্ধ করা, পুলিশকে ঢুকতে না দেওয়া— সব কিছুর পিছনেই ছিল এই জয়দীপের পাকা মাথা। তার নেতৃত্বেই সেদিন ঘটনার পর হস্টেলের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে ঢুকতে পারেনি পুলিশ। জখম ছাত্রকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার খবরও পুলিশকে জানানো হয়নি। পুলিশের দাবি, তখন বাধা না দিলে ওই ছাত্রের মৃত্যুকালীন জবানবন্দি রেকর্ড করার সুযোগ পেত পুলিশ। কিন্তু জয়দীপ ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা বাধা দেওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। রবিবার ধৃত জয়দীপকে কোর্টে তোলা হলে তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। জামিনের বিরোধিতা করে সরকারি আইনজীবী ধৃতের বিরুদ্ধে এই গুরুতর অভিযোগ আনেন। সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক জয়দীপ ঘোষকে ২৪ অগাস্ট পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জয়দীপ ২০২১ সালের পাশ-আউট।
আরও পড়ুন-চাঁদের খুব কাছাকাছি এসে ভেঙে পড়ল রাশিয়ান চন্দ্রযান লুনা-২৫
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ডামাডোল আরও তুঙ্গে উঠল। অন্তর্বর্তী উপাচার্য পদে গণিতের অধ্যাপক বুদ্ধদেব সাউয়ের নিয়োগের ঘোষণার পর ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। ইস্তফা দিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ সায়েন্স সুবিনয় চক্রবর্তী। রবিবার সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্তকে ই-মেল করে ইস্তফা দেন তিনি। ব্যক্তিগত কারণেই ইস্তফা বলে জানিয়েছেন তিনি। হস্টেলে ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে যে অন্তর্বর্তী তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছে সেই কমিটির নেতৃত্ব রয়েছেন সুবিনয় চক্রবর্তী। তাঁর ইস্তফার ফলে এখন এই তদন্ত কমিটির ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল।
আরও পড়ুন-মধ্যপ্রদেশে ১২০০ গাড়ির কনভয় নিয়ে বিজেপি থেকে কংগ্রেসে যোগ
পদত্যাগের পরে তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে তিনি আর থাকবেন কি না, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে৷ এর পাশাপাশি ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রাইকে জিজ্ঞাসাবাদের পর শনিবার রাত আড়াইটে পর্যন্ত মেন হস্টেলের সুপারকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷ পুলিশের কাছে ডিন দাবি করেন, ওই রাতে ফোন পাওয়ার পর তিনি আবার হস্টেল সুপারকে ফোন করে বিষয়টি দেখতে বলেন। তার কিছুক্ষণ পর হস্টেল সুপার ফোন করে ডিনকে এক ছাত্রের পড়ে যাওয়ার ঘটনাটি জানান। ডিনের ফোন আসা এবং ডিনকে ফোন করা, এই দুই ঘটনার মাঝে প্রায় ২ ঘণ্টার ফারাক৷ এই দু’ঘণ্টা তিনি কী করছিলেন সেটাই এখন জানতে চায় পুলিশ। ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই বর্তমান ও প্রাক্তন মিলিয়ে মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন-শিল্পের সমাধানে ৫ লক্ষ শিল্পোদ্যোগী
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য রাজ্যপালকে দায়ী করে এদিন ফের তোপ দেগেছেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি বলেন, আচার্য তথা রাজ্যপালের জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পরিস্থিতি। তিনি রাজ্য বিজেপি সভাপতির মতো আচরণ করছেন। রাজভবন এখন বিজেপির অফিস হয়ে গিয়েছে।