সরকারি হিসেবের খাতায় বিরাট গরমিল, ক্যাগের রিপোর্টে ফাঁস হল মোদি সরকারের কারচুপি

Must read

প্রতিবেদন : ফের আরও একবার মোদি সরকারের ব্যাপক আর্থিক কারচুপি প্রকাশ্যে আনল কম্পট্রোলার অব অডিটর জেনারেল বা ক্যাগ (CAG)। তাদের সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বিদেশি ঋণ থেকে শুরু করে সেস আদায়, এমনকী একাধিক ক্ষেত্রে টাকার অঙ্ক কমিয়ে দেখানো হয়েছে সরকারি রিপোর্টে। এমনকী নিয়ম উপেক্ষা করে সরকারি তহবিলের টাকার হিসেবেও কারসাজি করা হয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে এনে সরকারের আর্থিক অনিয়ম ও কারচুপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে ক্যাগ।
গত মাসে প্রকাশিত ক্যাগ (CAG) রিপোর্টে বলা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক রিপোর্টে ব্যাপক ত্রুটি রয়েছে। এবং এই আর্থিক কারচুপি শোধরানো তো দূরের কথা, সব জেনেও কেন্দ্রীয় সরকার তা গরমিল-সহ ওইভাবেই রেখে দিয়েছে। যাতে সরকারি টাকা নয়ছয় করা যায়। সিএজির প্রকাশিত রিপোর্টে কেন্দ্রের মোদি সরকারের তরফে আর্থিক কারচুপির অভিযোগ তুলে একের পর এক নমুনা পেশ করা হয়েছে।

অভিযোগ, সরকারি হিসাবের কারসাজি শুরু হয় বিদেশি ঋণ দিয়ে। পুরনো বিনিময় হারে এটি ৪.৩৯ লক্ষ কোটি টাকা গণনা করা হয়েছিল। যা ফিসক্যাল রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড বাজেট ম্যানেজমেন্ট আইন অর্থাৎ ২০০৩ সালের এফআরবিএম আইনে প্রদত্ত সংজ্ঞার বিপরীত। এই আইনের সংজ্ঞা অনুসারে, সরকার যদি বর্তমান বিনিময় হারে বৈদেশিক ঋণের মূল্যায়ন করত তবে তা বেড়ে দাঁড়াত ৬.৫৮ লক্ষ কোটি টাকা। এর অর্থ হল, ২০২১-২২ আর্থিক বছরের জন্য সরকারের অ্যাকাউন্টে বিদেশি ঋণ ২.১৯ লক্ষ কোটি টাকা কম করে দেখানো হয়েছিল। ক্যাগের অভিযোগ, কেন্দ্রের দ্বারা সংগৃহীত লেভি এবং সেস বাবদ টাকা হয় অব্যবহৃত হয়ে পড়ে আছে বা অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এটি যে শর্তে সেস আদায় করা হয় তার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি এমন ক্ষেত্রের অর্থ যা কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির সঙ্গে ভাগ করে নিতে বাধ্য নয়। সেস হল একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক আরোপিত একটি অতিরিক্ত কর এবং প্রাথমিকভাবে তা দেশের একত্রিত তহবিলে জমা করা হয়।
আর্থিক হেরফের ও সরকারি অ্যাকাউন্টের বাইরে তহবিল জমা করা এবং কেন্দ্রের অর্থপ্রদানের বাধ্যবাধকতাগুলি ইচ্ছাকৃতভাবে চাপা দেওয়া বা ফুটনোট লুকিয়ে রাখা, ঋণ কম দেখানোর অনেক উদাহরণ রয়েছে। ক্যাগ দাবি করেছে, এটি কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থের সম্পূর্ণ হিসেব প্রকাশ করে না। ২০২১-২২ সালে, সরকার ২৫৮টি ফুটনোট ব্যবহার করেছে। এর দুই বছর আগে, ২০১৯-২০ সালে, ২৫৪ টি ফুটনোট ব্যবহার করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন-লাগাতার বৃষ্টির জেরে ভূমিধস, কঙ্গোতে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা

সরকার হয় জানে না বা ইচ্ছাকৃতভাবে সিএজিকে দেওয়া নথিতে তারা প্রকাশ করেনি যে তারা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলির শেয়ারে কতটা বিনিয়োগ করেছে এবং তাদের কাছ থেকে লভ্যাংশ হিসাবে কতটা সংগ্রহ করেছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলিতে সরকারের হাতে থাকা ইক্যুইটি শেয়ারের সংখ্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। সিএজিতে জমা দেওয়া আর্থিক হিসাব এবং একই প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক হিসাবের বিবরণীতে এই পার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে।
শুধু তাই নয়, অনিয়ম দেখা গিয়েছে টেলিকম বিভাগেও। টেলিকম অপারেটররা তাদের সামঞ্জস্যপূর্ণ মোট রাজস্বের ৮ শতাংশ রাজস্ব লাইসেন্স ফি হিসাবে সরকারকে প্রদান করে। এর মধ্যে ৫ শতাংশ ইউনিভার্সাল সার্ভিস আবলিগেশন ফান্ড অর্থাৎ ইউএসওএফ এবং ৩ শতাংশ সাধারণ কোষাগারে যায়। ক্যাগের কাছে তথ্য এসেছে, সরকার টেলিকম শুল্ক থেকে ১০,৩৭৬ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে কিন্তু তার চেয়ে কম ৮,৩০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করেছে। তাহলে বাকি টাকা গেল কোথায়? সরকার তা জানায়নি। সব মিলিয়ে সরকারি তথ্যের একাধিক গরমিল, অনিয়ম ও তথ্যগোপন ফাঁস করেছে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল।

Latest article