প্রতিবেদন : মোদির গালভরা প্রশংসার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই রাজ্যজুড়ে ক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর। সেইসঙ্গে ভেঙে গেল বিজেপির সঙ্গে জননায়ক জনতা পার্টি বা জেজেপির জোটও। লোকসভা নির্বাচনের মুখে গেরুয়া শিবিরের কাছে নিঃসন্দেহে এ এক বড় ধাক্কা। সরকার বাঁচাতে ঘোড়া কেনাবেচার খেলায় নেমে পড়েছে তারা। ইতিমধ্যেই জেজেপির ৩ জন সহ ৪ বিধায়কের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন-প্রচার শুরু করে আত্মবিশ্বাসী সুজাতা জোর লড়াইয়ের বার্তা দিলেন সৌমিত্রকে
মঙ্গলবার দুপুরে আচমকাই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন খট্টর। ইস্তফার নেপথ্যে অনেকগুলো তাৎপর্যপূর্ণ কারণ থাকলেও মূলত উপমুখ্যমন্ত্রী দুষ্মন্ত চৌতালার সঙ্গে লোকসভার আসন সমঝোতা নিয়ে তাঁর তীব্র মতভেদের জেরেই এই পদত্যাগ বলে জানা গিয়েছে। দুষ্মন্ত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করে লোকসভা নির্বাচনে একক শক্তিতেই লড়বে তাঁর দল জেজেপি। রাজ্যের ১০টি আসনেই প্রার্থী দেবে জেজেপি। রাজনৈতিক মহলে তাই একটাই প্রশ্ন, এই ধাক্কা আদৌ সামলাতে পারবে কি বিজেপি? এদিকে মনোহরলাল খট্টরের বদলে এদিন বিকেলেই হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন বিজেপি নেতা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী নায়েব সিং সাইনি।
আরও পড়ুন-নির্বাচনী বন্ড : শীর্ষ আদালতের ভর্ৎসনার পর তথ্য জমা দিল এসবিআই
আসলে মনোহরের এই পদত্যাগ-নাটকের পটভূমি কিন্তু শুধুই লোকসভা নির্বাচনে আসন সমঝোতা নিয়ে বিজেপি-জেজেপি টানাপোড়েন নয়। আছে আরও বেশ কিছু কারণ এবং অঙ্ক। প্রথম কথা, কৃষক আন্দোলনে দমনপীড়ন চালানোর জন্য অভিযোগের আঙুল উঠেছে মুখ্যমন্ত্রী খট্টরের বিরুদ্ধে। আন্দোলনকারী কৃষকদের একটা বড় অংশই যেহেতু জাঠ, তাই তাঁদের ব্যাপক ক্ষোভ জন্মাচ্ছে বিজেপির বিরুদ্ধে। লোকসভা ভোটে তার প্রতিফলনের সম্ভাবনা প্রবল। তাই জাঠ ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে মলম লাগাতেই সরিয়ে দেওয়া হল মনোহরলালকে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, পাঞ্জাবে কৃষকদেরও বিজেপির ওপরে ক্ষোভের মাত্রা বাড়ছে শুধুমাত্র খট্টরের দমন-নীতির কারণেই। সেই কারণেই অকালি দলের সঙ্গে আবার নির্বাচনী জোট গঠনের পথে এগনো সম্ভব হচ্ছে না বিজেপি নেতৃত্বের। তাছাড়া, মহিলা কুস্তিগিরদের সম্মানহানির বিষয়টাও এখনও দগদগে ঘায়ের মতো। ব্রিজভূষণের অপকীর্তি হরিয়ানায় গেরুয়া ভোটে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে যে কোনও মুহূর্তেই। খট্টরকে সরিয়ে দিয়ে সেই ক্ষতেও প্রলেপ দেওয়ার একটা চেষ্টা করছে গেরুয়া নেতৃত্ব। সবচেয়ে বড় কথা, সবমিলিয়ে গেরুয়া শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও বিভিন্ন কারণে একটা ঠান্ডা লড়াই চলছিল সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। শেষপর্যন্ত মঙ্গলবার সকালে নাটকের যবনিকা পতন।