আমরা যারা যে কাজই করি না কেন, প্রতিটি পেশার বা কর্মক্ষেত্রের একটা নিজস্ব Dignity বা মর্যাদা থাকা প্রয়োজন। এই যেমন আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার কর্মক্ষেত্রের চেয়ারের গরিমা যাতে ক্ষুণ্ণ না হয় সেটা দেখা যেমন আমার কর্তব্য তেমনি আমার দল তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র হিসেবে যখন চ্যানেলের বিতর্ক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি তখন সেই পদের মর্যাদা রক্ষা করার দায়বদ্ধতাও কিন্তু আমার।
আজ আর বাংলা চ্যানেলের বিতর্কসভায় আমাদের রাজ্যের জাতীয় কংগ্রেস দলের মুখপাত্র কৌস্তভ বাগচীর বক্তব্য শুনলাম। কী অবলীলায় কৌস্তভ আমাদের রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে ছাপার/লেখার অযোগ্য ভাষায় কুৎসিততম নোংরা ব্যক্তি আক্রমণ করে গেলেন সমানে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদটাও না হয় একটা পদাধিকার, কিন্তু সব কিছুর ঊর্ধ্বে নিজের মাতৃসমা একজন মহিলা (তিনি আমার রাজনৈতিক বিরোধী বলেই) তাঁর সম্পর্কে এই ধরনের ভাষা আদৌ ব্যবহার করা যায় কি? আমরাও তো তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হওয়ার আগে জাতীয় কংগ্রেসই করে এসেছি। কই তৎকালীন কংগ্রেসের নেতৃত্ব তো আমাদের এই নোংরামি করার শিক্ষা দেননি কোনও দিন।
আরও পড়ুন-আত্মত্যাগের দোল ও চাঁচর পোড়া
আর ঠিক তিনদিন পরে ৮ মার্চ ঘটা করে আন্তর্জাতিক নারীদিবস পালিত হবে। মাননীয় কৌস্তভ বাগচীর দল জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও প্রতিবছরের মতো এবারেও নিশ্চিতভাবেই মহিলাদের অধিকাররক্ষার লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হবে। আর সর্বোপরি যে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের আসন অলঙ্কৃত করে থাকেন সোনিয়া গান্ধী থেকে প্রিয়াঙ্কা ভাদরা সেই দলের একজন অন্যতম মুখপাত্রের একজন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা মহিলা নেত্রীর প্রতি এই কদর্য আচরণ কি কোথাও আদতে মহিলা হিসেবে সোনিয়াজি কিংবা প্রিয়াঙ্কাকেও অপমান করা নয়?
দিনের শেষে আমরা যে-যেই মতের রাজনৈতিক দর্শনেই বিশ্বাস করি না কেন, সবার আগে তো আমরা একজন মানুষ, একজন ভারতীয়, একজন বাঙালি। আজ অধীর চৌধুরি কংগ্রেসের নেতা, তাঁকে নিশ্চয়ই রাজনৈতিক আক্রমণ করে বক্তব্য রাখব, কিন্তু তাই বলে তাঁর পরিবার, তাঁর অকালমৃতা কন্যা কিংবা স্ত্রী নিয়ে ব্যক্তিগত স্তরে কুৎসার রাজনীতি চ্যানেলের ক্যামেরায় করব না, কারণ সেটা করা যায় না, কারণ সেটা আর যা-ই হোক রাজনীতি হতে পারে না। এই শিক্ষা আমাদের তো কংগ্রেসই শিখিয়েছিল। ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের সঙ্গে জ্যোতি বসুর চূড়ান্ত বিতণ্ডার মাঝেও জ্যোতি বসুর পিতার চিকিৎসার মূল দায়িত্ব ছিল ডাঃ রায়ের কাঁধেই। আর সেই কংগ্রেসের উত্তরাধিকার আজ কারা বহন করে চলেছেন? এই কৌস্তভ বাগচীরা!!
আরও পড়ুন-ঠাকুরবাড়ির উৎসবের দোল
জানি না রাজনৈতিক হতাশা থেকে এই মন্তব্য কৌস্তভ করে ফেলেছে কিনা, আসলে ক’দিন আগেই কংগ্রেসের রায়পুরের সর্বভারতীয় অধিবেশনে ডাক না পাওয়ার হতাশা থেকে দলের বিরুদ্ধেই পোস্ট করেছে। আর এর আগে ওর দলীয় শীর্ষনেতা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরমজিকে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করতে আসায় ধাক্কা মেরেছে। সামগ্রিকভাবেই হয়ত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে এই ধরনের কুরুচিপূর্ণ রাজনীতির রাস্তা বেছে নিয়েছে, কিন্তু আর যা-ই হোক এটা রাজনীতি নয়।
আরও পড়ুন-দাপুটে জয়ের দিনে কাঁটা আশিক ও কাইথের চোট, আইএসএলের শেষ চারে মোহনবাগান
কৌস্তভ আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট, ভ্ভ্রাতৃসম ভেবেই স্নেহ করতাম। আজও যেটুকু লিখলাম সেটাও ওর ভাল চাই বলেই লিখলাম। নিজেকে শুধরে নিলে ওর নিজের জন্যই সেটা মঙ্গল। আশা করব আগামিদিনে শুভবুদ্ধির উদয় হবে, মাতৃসমা দিদির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলে নিজে ছোট হয়ে যায় না। ‘নরেন্দ্র গৌতমদাস আদানি’ শুধুমাত্র এই তিনটি শব্দ ট্যুইট করেছিলেন বলে ক’দিন আগেই কংগ্রেসের নেতা পবন খেরাকে মোদি সরকারের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল, যখন তিনি দিল্লি এয়ারপোর্ট থেকে রায়পুরে কংগ্রেসের অধিবেশনে যোগ দিতে আসছিলেন (যে অধিবেশনেই কৌস্তভ ডাক পায়নি বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে গোসা দেখিয়েছিল)। কৌস্তভ অবশ্য যদি ভেবে থাকে এটা মমতাদির রাজ্য, এখানে একজন বয়ঃজ্যেষ্ঠা মহিলাকে যা খুশি নোংরা গালিগালাজ করেও পার পেয়ে যাওয়া যায়, তাহলে সেটাও ওর বিষয়।
আরও পড়ুন-মিড ডে মিলের দায়িত্বে স্বনির্ভর গোষ্ঠী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর যতবার আঘাত এসেছে, তত বেশি করে মমতাদি শক্তিশালী হয়েছেন। তৃণমূল এই একটা জায়গায় কিন্তু ভয়ঙ্কর এককাট্টা। কৌস্তভ নিজেকে সংশোধন করো, মমতাদির কাছে ক্ষমা চেয়ে নাও। যে-ভাষা বলেছ, তোমার জন্মদায়িনী মা শুনলে তিনিও কিন্তু তোমাকে ক্ষমা করবেন না।