দিনের আলোয় কলকাতা শহরের বুকে সেই গণহত্যার স্মৃতি ফেরাল ৩০ এপ্রিল

১৯৮২-র এই দিনেই কসবার বিজন সেতুতে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে, পুড়িয়ে ১৯ জন নিরীহ আনন্দমার্গীকে খুন করেছিল সিপিএম।

Must read

প্রতিবেদন : ফিরে এল সেই নারকীয় গণহত্যার ভয়াবহ স্মৃতি। মনে করিয়ে দিল সিপিএমের নৃশংসতার সেই ভয়ঙ্কর রূপ। আজ ৩০ এপ্রিল। ১৯৮২-র এই দিনেই কসবার বিজন সেতুতে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে, পুড়িয়ে ১৯ জন নিরীহ আনন্দমার্গীকে খুন করেছিল সিপিএম। তাঁদের ছেলেধরা অপবাদ দিয়ে, মিথ্যে গুজব রটিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে এই অপারেশন সেরেছিল মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির গুন্ডারা। নেপথ্যে ছিল পার্টির বেশ কয়েকজন ডাকাবুকো মাথা। লজ্জার কথা, ১৯৮২ থেকে ২০১১-তে সিপিএমের বিদায়পর্ব পর্যন্ত একজনকেও এই জঘন্য অপরাধে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেনি বামফ্রন্ট সরকার। অথচ কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় থেকে শুরু করে, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, শচীন সেনের মতো নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল তখন।

আরও পড়ুন-ব্যর্থ মার্শের লড়াই,জিতল হায়দরাবাদ

এফআইআরে নাম ছিল সিপিএমের বেশকিছু যুবনেতা-সহ স্থানীয় কমরেডদেরও। অভিযুক্তের তালিকায় সব মিলিয়ে ২৮-২৯ জন। কিন্তু একজনকেও স্পর্শ পর্যন্ত করতে পারেনি পুলিশ। সেই সময়ের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু শুধুমাত্র একটি তদন্ত কমিশন করে সারতে চেয়েছিলেন দায়। যা নিছকই ছিল একটা আই-ওয়াশ। অথচ আনন্দমার্গীরা দীর্ঘদিন ধরে চেয়ে এসেছিলেন শুধু একটা নিরপেক্ষ তদন্ত। চেয়েছিলেন সুবিচার। ২০১১-তে পালাবদলের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হয়ে এই ঘটনার তদন্তের জন্য বসিয়েছিলেন অমিতাভ লালা কমিশন। চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি আসল দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়ার। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিই লোপাট করে দিয়েছে সিপিএম। স্বাভাবিকভাবেই উত্তর মেলেনি বহু প্রশ্নের।

আরও পড়ুন-সত্যজিতের মানসপুত্র

আজ ৪১ বছর পরে একটা প্রশ্নই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, সিপিএমের সেই নৃশংস রূপের কথা কি ভুলে গিয়েছে তাদের আজকের দোসর কংগ্রেস? জিগরি দোস্ত বিজেপি? যারা সিপিএমের হাতে হাত মিলিয়ে তৃণমূলের বিরোধিতায় নেমেছে? সেদিনের সেই ভয়ঙ্কর সিপিএমই বা কোন লজ্জায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আজ শুধুই মিথ্যার বেসাতি করে? তারা কি নিজের চোখে দেখতে পায় না যে-কোনও অপরাধমূলক ঘটনার ক্ষেত্রে কত দ্রুত কড়া ব্যবস্থা নেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার?

আরও পড়ুন-বাংলাকে গুজরাট, ইউপি হতে দেব না, জঙ্গিপুরে ফিরহাদ

১৯৮২-র সেই দগদগে ক্ষত আজও মানুষের মনে। তখন সবে ভোরের আলো ফুটেছে। হাওড়া থেকে ট্যাক্সি করে তিলজলায় আনন্দমার্গ আশ্রমে যাচ্ছিলেন ১৯ জন আনন্দমার্গী। ওঁৎ পেতে ছিল লাল-জল্লাদের দল। তারপরেই তীব্র আর্তনাদ। নারকীয় গণহত্যার সাক্ষী কসবার বিজন সেতু। ছেলেধরা গুজব, আর তার পরিণতিতে পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হল ২ সন্ন্যাসিনী, এক গৃহী-সহ মোট ১৯ জনকে।
সেই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ রবিবার দধীচি দিবস পালন করবেন আনন্দমার্গীরা। নিহতদের স্মরণে দুপুরে দেশপ্রিয় পার্ক থেকে বের হবে মৌনমিছিল। তারপরে বিজন সেতুর উপরে হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে সভাও করবেন তাঁরা। জানতে চাইবেন কোন অপরাধে সেদিন নিরীহ ১৯ জন মানুষকে সিপিএমের জল্লাদদের হাতে মরতে হল এমন অসহায়ভাবে।

Latest article