অণু, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে বাংলার সাফল্য চোখে পড়ার মতো। কৃষির পরে এই ক্ষেত্রে দক্ষ/অদক্ষ শ্রমিকের কর্মসংস্থান রাজ্যের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে রেখেছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রে যুক্ত ‘শ্রমিক’রা তাই রাজ্য সরকারের বিশেষ নজরে থাকেন। তাঁদের জন্য সরকার সর্বদা উদগ্রীব। রাজ্যের এই শ্রমশক্তি রাজ্যের সম্পদ। তাঁদের বিভিন্ন নিরাপত্তা ও সুযোগসুবিধা দেওয়ার জন্য নতুন সরকারের উদ্যোগ প্রশংশনীয়। এ-রাজ্যে দক্ষ, অদক্ষ— উভয় শ্রমিকেরই প্রাচুর্য আছে।
আরও পড়ুন-নন্দীগ্রামের পর আবার বিদ্রোহ, এবার রাজ্যস্তরে সিবিআই থেকে বাঁচতে দলবদলুদের সিন্ডিকেটের হাতে বিজেপি
এই ‘শ্রমশক্তি’র সঠিক ব্যবহার করতে পারলে রাজ্যের উন্নয়নের ‘লেখচিত্র’ অন্যরকম হত। যাই হোক, যে শ্রমিকদের দিন-রাত সক্রিয় অংশগ্রহণে ছুটে চলেছে রাজ্যের কর্মমুখর-অর্থনীতি, সেই শ্রমিকদের জন্য সরকারি ভাবনায় ‘সময়োপযোগী পরিবর্তন’ ঘটে চলেছে। ফলে এই রাজ্যে শ্রমিক-আন্দোলনের ইতিহাসকে পাল্টে দিয়েছে সরকারের ‘মানবিক’ প্রয়াস। নতুন সরকার, শ্রমের সঠিক মর্যাদা দিতে চালু করেছে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প। ‘স্বনির্ভর বাংলা’ গড়ার প্রয়াস রাজ্য জুড়ে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন ব্যক্তি-জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে চলেছে। কী গ্রাম, কী শহর— সর্বত্রই স্বাধীনভাবে বাঁচার একটা প্রয়াস চোখে পড়ছে।
আরও পড়ুন-বিরোধী দলনেতার ন্যক্কারজনক মিথ্যাচার, মুখোশ খুলে দিলেন চন্দ্রিমা
স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠন করে সদস্যরা সমবেতভাবে বা একক উদ্যোগে অর্থ রোজগারের চেষ্টা করছেন। কেউ বা ‘স্বনিযুক্তি’র মাধ্যমে নিজস্ব উদ্যোগ গড়ে তুলছেন। একইভাবে উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া ব্লকের মাঝিয়ালী সংঘের ২০১ দল স্বনির্ভর গোষ্ঠী নিয়ে তৈরি হয়। ২৮ জন সদস্যের একটি কমিটি গড়ে এই সংঘ শুরু হয়। এই সংঘের কার্যকরী কমিটির সভানেত্রীর নাম আসমাতারা বেগম। সম্পাদক শঙ্করী মণ্ডল। কোষাধ্যক্ষ রয়েছেন সুশীলা মুর্মু। এই সমিতির প্রত্যেকে এক হাজার টাকা করে দিয়ে কেনাকাটা করেন। জেলা মার্কেটিং বিভাগ থেকে এঁদের থেকে পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য এই সংঘকে দেওয়া হয়েছে। ওই অর্থ দিয়ে সংঘের তরফ থেকে রাবার রুলার বসানো হয়েছে।
আরও পড়ুন-যাদবপুরের উপাচার্যের অনুযোগ, টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র
কালীগছ মাঝাবাড়ি মিলন সেল্ফ হেল্প গ্রুপের ৫৬ জন বর্তমানে স্কুল পোশাক তৈরি করছেন। সাময়িক ভাবে বন্ধ থাকলেও আগে পাড়াহাট থেকে পাইজাম হাইরাউস নামক ধান কিনে সেদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে ওই রুরাল দিয়ে প্রথমে খোসা ছাড়ানো হত। সেই খোসা ছাড়ানোর পর ঢেঁকিছাঁটা বা ব্রাউন রাইস উৎপন্ন হয়। এই ঢেঁকিছাঁটা চালের গুণমান প্রচুর, এর মধ্যে কার্বোহাইড্রেট কম থাকে। যা শিশুর এবং সুগারের রোগীদের পক্ষে খুবই উপযোগী। রায়গঞ্জের সবলা মেলায় এই চাল প্রচুর বিক্রি হয়। আর খোসাগুলি মুরগির খাবারের জন্য মুরগির খামারে চলে যায়। বর্তমানে স্বনির্ভর দলের দশজন মহিলা এই চাল তৈরির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। মূলত এইভাবে মুখ্যমন্ত্রীর দেখানো পথে কাজ করে এক-একজন মহিলা তাঁদের পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস হয়ে উঠেছেন। এমনকী গাঁয়ের বিদ্বজ্জন এঁদের সম্মানের চোখে দেখেন।
আরও পড়ুন-শিক্ষা দফতরের নির্দেশ, স্কুলের নোটিশ বোর্ডে রাখতে হবে শিক্ষকদের বায়োডাটা
গ্রামের নানান সিদ্ধান্তেরও মধ্যে এই মহিলাদের প্রভাব বর্তমান রয়েছে। শুধু চাল তৈরি নয়, অন্যান্য কাজেও নিজেদেরকে নিয়োজিত করে এই সংঘ। মূলত গ্রামীণ এলাকায় যেখানে ব্যাঙ্কের কাজকর্ম করতে পুরুষেরা ভয় পান, সেখানে সেজেগুজে ব্যাঙ্কে গিয়ে সংঘের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন সমিতির মহিলারা। পিছিয়ে পড়া এলাকায় বসবাস করায় একপ্রকার আর্থিকভাবে অসচ্ছল হয়ে ওঠা একটি গ্রামের মহিলাদের এইভাবে সামনের সারিতে নিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসমাতারা বেগম বলেন, ‘‘একসময় কীভাবে কী হবে এই পরিবারের তা নিয়ে প্রচণ্ড চিন্তিত থাকতাম। এখন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে আয়ের উৎস আমাদের কাছে এসেছে। বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে নানান ধরনের কাজ আমরা করে থাকি। যা আমাদের মানসিকভাবেও অনেকটা এগিয়ে দেয়।”
আরও পড়ুন-জগদ্ধাত্রী পুজো: চন্দননগরে বৈঠকে বিদ্যুৎমন্ত্রী
শংকরী মণ্ডল আরেক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী দয়াময়ী আমাদের কাছে মা লক্ষ্মীর সমান। তাঁর দেখানো পথে বর্তমানে আয় করে প্রতিটি পরিবার স্বনির্ভর হচ্ছে। এর থেকে আগামী প্রজন্মকেও আমরা ভাল শিক্ষা দিতে পারব বলে মনে হয়।” এলাকাবাসীদের দাবি, মহিলাদের এইভাবে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি এই সরকারের সময়ে হয়েছে। সাধারণ মহিলারা জেলার গর্ব।