এই মুহূর্তে টালিগঞ্জের অন্যতম চর্চিত নায়িকা হলেন ইশা সাহা। ছোটপর্দায় ‘ঝাঁঝ লবঙ্গ’ দিয়ে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘স্লো বাট স্টেডি’ গতিতে তার সুগন্ধ ছড়াচ্ছে টলিউডের বাতাসে। সদ্য মুক্তি পেয়েছে ‘তরুলতার ভূত’৷ পুজোয় আসছে বিগ বাজেট ‘গোলন্দাজ’৷ ইশার সঙ্গে কথোপকথনে প্রীতিকণা পালরায়
আরও পড়ুন-বিনামূল্যে কোচিং পড়ুয়াদের
এ বছর পুজোটা তার মানে দারুণ কাটবে?
ইশা: আশা করা যায়। ‘গোলন্দাজ’-এর ট্রেলার দেখে আমিও চমকে গেছি সবার মতো। অভিনয়ের সময় তো এন্ড প্রোডাক্টটা বোঝা যায় না। ছবিটা দারুণ কিছু হতে যাচ্ছে এটা নিশ্চিত। আর ‘তরুলতার ভূত’ও আমার খুব পছন্দের ছবি। পরিচালক দেব রায়ের প্রথম ছবি এটা। উনি আমার প্রথম ছবি ‘প্রজাপতি বিস্কুট’-এর অ্যাসোসিয়েট পরিচালক ছিলেন। তাই বোঝাপড়াটা ছিলই। আর ‘গোলন্দাজ’ এর পরিচালক ধ্রুব ব্যানার্জির প্রথম ছবির নায়িকাও আমি ছিলাম। এটা ওঁর সঙ্গে আমার তৃতীয় ছবি। ফলে দুটো কাজই খুব উপভোগ করেছি।
দেবের সঙ্গে অভিনয় কেমন উপভোগ করলেন বলুন?
ইশা: দারুণ। তবে শিখেছি বেশি। এতদিনের অভিজ্ঞতা ওর। প্রায় দশদিনের মত কাজ ছিল আমার দেবের সঙ্গে। কিছুটা কলকাতায়, বেশিটাই বর্ধমানে। যেটা শেখার, সেটা ওর সিনসিয়ারিটি। প্রচুর লোকজন নিয়ে কাজ ছিল এ ছবির। টানা ১৮-১৯ ঘণ্টাও শ্যুট হয়েছে একেক দিন। কিন্তু রাত দুটোর সময়েও সেম এনার্জি থাকত ওর। কিউ দিচ্ছে সবাইকে নয়তো যারা ঝিমিয়ে পড়ছে তাদের উৎসাহ দিচ্ছে, প্রতিটা শটের পর দৌড়ে মনিটর দেখতে যাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম ওকে দেখে।
কখনও ভেবেছিলেন দেবের নায়িকা হবেন?
ইশা: অভিনয় করব সেটাই কখনও ভাবিনি! ল’ নিয়ে পড়া শেষ করে হাইকোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেছিলাম। ২০১৫ সেটা। একটা ইভেন্টে স্টার জলসার একজন এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার আমায় দেখে চ্যানেলে ডাকেন। কৌতূহলবশতই গিয়েছিলাম। এর মাস পাঁচেক পর যখন আমি বিষয়টা ফের ভুলে গিয়েছিলাম তখন আবার ফোন আসে আর এবার আমার অডিশন নেওয়া হয় এবং সিলেক্টও হয়ে যাই একটি ধারাবাহিকের জন্য। সেটাই ছিল ‘ঝাঁঝ লবঙ্গ ফুল’। ওই ধারাবাহিক চলার সময়েই আমি অনিন্দ্য চ্যাটার্জির কাছ থেকে ডাক পাই ‘প্রজাপতি বিস্কুট’-এর জন্য। এর পরেই করি ধ্রুবদার ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’। তারপর শিলাদিত্য মৌলিকের ‘সোয়াটার’। ছবিগুলি পরপরই আসতে থাকে আর প্রত্যেকটাই বেশ জনপ্রিয় হয়। এভাবেই সুযোগ এসেছে দেবের বিপরীতে অভিনয়ের। ভেবে বা প্ল্যান করে শুরু থেকেই কিছু করিনি। সময়ের গতিতে এগিয়ে চলেছি।
তার মানে আপনি খুবই লাকি? ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের জন্য মাথা কুটতে হয়নি?
ইশা: সবটা আমি ‘লাক’ বলব না। ‘লাক’ মানুষকে সুযোগ এনে দেয় কিন্তু টিকে থাকতে গেলে প্রয়োজন ‘হার্ড ওয়ার্ক।’ সেই সঙ্গে আমার একটা নিজস্ব জেদও ছিল। প্রথমে বাড়ি থেকে আমার এই প্রফেশন চেঞ্জটা একেবারেই মেনে নেয়নি। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে সিনেমা জগৎ সম্পর্কে একটা ভীতি থাকে। তার ওপর অনিশ্চয়তা। সব মিলিয়ে নিজেকে প্রমাণের জেদ ছিল।
কখনও কি মনে হয় এই পাঁচ বছরে দর্শক অনেকটা একভাবে ইশাকে দেখছে? ছবিগুলো আলাদা ধরনের হলেও আপনার চরিত্রগুলোর ধরন প্রায় এক?
ইশা: আমি জানি কেন আপনি একথা বলছেন। বেশিরভাগ ছবিতে আমি শান্ত-ধীর-অন্তর্মুখী চরিত্রে অভিনয় করেছি তাই। কিন্তু আমি একমত নই কথাটার সঙ্গে। কারণ প্যাটার্ন এক হলেও প্রত্যেকটা চরিত্র অন্যের থেকে আলাদা। যেমন, আপনাকে আমি উদাহরণ দিয়ে বলছি, ‘প্রজাপতি’র শাওন কিংবা ‘সোয়েটার’-এর টুকু দু’জনেই হয়তো শান্ত কিন্তু শান্ত মেয়েদেরও তো চারিত্রিক তফাত থাকে। টুকু যেমন নিজের কথা বুঝিয়ে বলতে পারত না। শাওন কিন্তু নিজের বক্তব্যের ব্যাপারে ভীষণ দৃঢ় ছিল। আবার ‘ডিটেকটিভ’-এর সুধামুখী আর ‘গোলন্দাজ’-এর কমলিনীকে এক ঝলক দেখলেও আপাতভাবে অনেকের এক মনে হতে পারে। কিন্তু সেটা বাইরে। চেহারা-সাজপোশাক কাছাকাছি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়, কারণ দু’জনের সময়কাল প্রায় এক। কিন্তু চরিত্রগতভাবে দু’জনে একদমই আলাদা।
কেরিয়ার নিয়ে তার মানে হ্যাপি,
তাই তো?
ইশা: অবশ্যই সবটা নয়। আমিও চাই ‘ডিয়ার জিন্দেগি’র আলিয়ার মতো চরিত্র করতে বা আরও অনেক প্রিয় চরিত্র আছে, কিন্তু চাইলেই তো হবে না, পেতেও তো হবে, তাই না? আর খুব বেশি আলাদা চরিত্র নিয়ে কাজ কি আমাদের এখানে হয়? তার জন্য অপেক্ষায় বসে থাকা কি অ্যাফোর্ড করা সম্ভব? তাই আমার শুধু চেষ্টা থাকে যিনি চরিত্রটা স্কেচ করেছেন তাঁর মনের মতো করে সেটা ফুটিয়ে তোলা। ডিরেক্টর যেটা চান সেটা করতে পারলেই তাই আমি হ্যাপি।
এই মুহূর্তে কী কী কাজ নিয়ে ব্যস্ত?
ইশা: আনলক ফেজ শুরু হওয়ার পর এই তিন মাসে তিনটে ওয়েব সিরিজ শ্যুট করলাম। মৈনাক ভৌমিকের ‘বয়ফ্রেন্ডস অ্যান্ড গার্লফ্রেন্ডস’ আর সায়ন্তন ঘোষালের সঙ্গে বাকি দুটো। রেডি হয়ে আছে দুটো ছবি, ‘সহবাস’ আর অরিন্দম শীলের ‘মহানন্দা।’ আরও একটা ছবির কাজ শেষ করেছি কিন্তু সেটা এখন বলতে পারব না।
পুজোও কি একই ব্যস্ততায় কাটবে?
ইশা: কাটুক সেটাই মনেমনে মা দুর্গার কাছে চাইব। কারণ কেরিয়ারের এই মুহূর্তে শুধু কাজেই ফোকাসড থাকতে চাই।
বড়পর্দার ইশাকে তৈরি করতে ছোটপর্দা কি সাহায্য করেছে?
ইশা: অবশ্যই। যেমন, মেনস্ট্রিম হিরোইনদের মতো নাচ-গানে আমি একদম স্বচ্ছন্দ নই কিন্তু এটা জানি যদি সেরকম অফার আসে তো আমি সেটাও পারফেক্টলি করে দেখিয়ে দিতে পারব। আমার আট মাসের টিভিতে অভিনয় আমার সেই আত্মবিশ্বাস তৈরি করে দিয়েছে।
নিজেকে এক শব্দে ডেসক্রাইব করতে বললে কী বলবেন?
ইশা: এক শব্দে হবে না। তিনটে লাগবে! মুডি, আনসোশ্যাল, ইন্ট্রোভার্ট।