সুস্থ সবল থাকার জন্য খাদ্য প্রয়োজন। কতটা পরিমাণে প্রয়োজন তা ঠিক করে দেন ডায়েটিশিয়ান। খেয়াল করলে দেখা যায় এখন বহু বাড়িতেই ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শে তৈরি হচ্ছে নিয়মিত খাদ্য তালিকা। ডায়েটিশিয়ানদের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে, এই পেশাও গুরুত্ব পাচ্ছে।
আরও পড়ুন-ফের ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল কাবুল, নিহত বহু
ডায়েটিশিয়ানরা সবার প্রথমে কথা বলেন রোগীর সঙ্গে। তাঁর মানসিক অবস্থা কীরকম, তিনি খেতে কেন চাইছেন না, কী খেতে ভালবাসেন পুরো কেস স্টাডি করতে হয় তাঁদের। তারপর সেটা বুঝে চিকিৎসা। ডায়েটিশিয়ান এবং নিউট্রিশনিস্টের কাজের ধরন প্রায় একই রকমের। তাঁদের কিছু ভাগ রয়েছে। যেমন ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান, কমিউনিটি ডায়েটিশিয়ান এবং ম্যানেজমেন্ট ডায়েটিশিয়ান। ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ানরা সাধারণত নিউট্রিশন থেরাপি করেন। তাঁরা হাসপাতাল, ক্লিনিক, প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে থাকেন। এই ধরনের ডায়েটিশিয়ানরা রোগীর শারীরিক অবস্থা বুঝে ডায়েট চার্ট প্রতিদিন তৈরি করেন। কমিউনিটি ডায়েটিশিয়ানরা সম্প্রদায়গত কাজ করেন। বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যসচেতন খাদ্য তালিকা সম্পর্কে আলোচনা করেন। পাবলিক হেলথ ক্লিনিক, সরকারি-বেসরকারি এজেন্সি, স্বাস্থ্যসংগঠনে কাজ করেন। ম্যানেজমেন্ট ডায়েটিশিয়ান খাদ্য অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা গড়ে তোলেন। বিভিন্ন ক্যাফেটেরিয়ায় হাসপাতালে, স্কুলে ফুড সার্ভিস সেটিংয়ের কাজ করেন। অনেক সময় অনেক জায়গায় ম্যানেজমেন্ট ডায়েটিশিয়ানরা কিচেন স্টাফদের কাজেরও দেখাশোনা করেন।
আরও পড়ুন-আজ পঞ্চমী, শুভেচ্ছাবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
ডায়েটিশিয়ান পেশার জন্য ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশনে ব্যাচেলর ডিগ্রি আবশ্যিক। অনেকে পরে ফুড সার্ভিস সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট নিয়েও পড়াশোনা করেন। এই কোর্সে নিউট্রিশন, সাইকোলজি, কেমিস্ট্রি ও বায়োলজি বিষয়েও পড়ানো হয়। এই কোর্সগুলির সঙ্গে প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিংও চলে।
এই পেশায় কাজের সুযোগ ভাল। হাসপাতাল, এনজিও, ফুড কোম্পানি ছাড়াও অধ্যাপনার জগতে পাড়ি দেন অনেকেই। নেট সেট/ স্লেট পাশ করে স্কুল অথবা কলেজে পড়ান। এক কথায়, এই পেশা নতুন-নতুন দিকে প্রসারিত হচ্ছে দিন দিন।
আরও পড়ুন-সব মহিলার সুরক্ষিত-আইনি গর্ভপাতের অধিকার আছে
ডায়েটিশিয়ান পেশা হিসেবে বেছে নিতে হলে নিউট্রিশন নিয়ে পড়াশোনা করতেই হবে। এটা প্যারামেডিক্যাল কোর্সের একটি অংশ। তার জন্য দ্বাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান শাখায় পড়ে থাকতে হবে। রসায়ন এবং জীববিদ্যা থাকতে হবে। তারপরে বিএসসি তিন বছরের এবং দু’বছরের এমএসসি। এটা চলাকালীন আবার ছ’মাসের ইন্টার্নশিপ করতে হয় বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে। এই ইন্টার্নশিপ শেষ হলে পরে সাধারণত ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান হিসাবে যোগ দেওয়া যায়। তবে প্রাথমিক স্তরে সিনিয়রের অধীনে কাজ করতে হয়। পরে ধীরে-ধীরে অভিজ্ঞতার সঙ্গে উন্নতি হয়। হাসপাতালে কোনও রোগী ভর্তি হওয়ার পর তাঁর স্ক্রিনিং করতে হয়। অর্থাৎ তাঁর বয়স, ওজন, শারীরিক অবস্থা, খাওয়া পছন্দ-অপছন্দ জানতে এবং সেইমতো ডায়েটারি অ্যাসিস্ট করতে হয় ডায়েটিশিয়ানকে। এই সমস্ত কিছুর ওপর ভিত্তি করে ডায়েট চার্ট করতে হয়। খাবার হল চিকিৎসার একটি অংশ। তাই আমাকে বুঝে শুনে এমন খাবারই এমন পরিমাণেই নির্ধারণ করতে হবে যাতে তাঁর পুষ্টির জোগান ঠিকমতো হয়। আবার অনেক সময় অপারেশনের আগে এবং অপারেশনের পরে খাবারের চার্ট তৈরি হয়। এগুলো ছাড়া আইসিইউতে অনেক সংকটপূর্ণ রোগী থাকেন যাঁরা চিবিয়ে বা গিলে খেতে পারেন না। তাঁদের জন্য আবার অন্য পদ্ধতিতে নলের সাহায্যে খাওয়ার উপযোগী বিশেষ ধরনের খাবার তৈরি করতে হয় ডায়েটিশিয়ানকে। রোগীর পুষ্টির অভাব যাতে কোনওভাবে না হয় তার দিকে খেয়াল রাখতে হয় ডায়েটিশিয়ানকেই।
আরও পড়ুন-হাইকোর্টের নির্দেশ খারিজ, ১৯ তৃণমূল নেতার সম্পত্তি বৃদ্ধি ‘অস্বাভাবিক’ নয়
সবার এটা মনে রাখা খুব প্রয়োজন যে একজন দক্ষ ডায়েটিশিয়ান হতে গেলে পড়াশোনার পাশাপাশি খুব পরিশ্রমী হতে হবে। ভাল শ্রোতা এবং বক্তা উভয় গুণই থাকতে হবে। রোগীর জন্য বিশ্বাসযোগ্য মনোভাব তৈরি করতে হবে। যত ভাল ভাবে রোগীর সঙ্গে কথা বলা যায় তত তাড়াতাড়ি তাঁর মনে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব।
কোথায় কোথায় পড়নো হয়: ১. সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি, রাজারহাট (কলকাতা)। ২. বিদ্যাসাগর ইনস্টিটিউট অব হেলথ, মেদিনীপুর। ৩. জেডি বিড়লা ইনস্টিটিউ, কলকাতা। ৪. বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়, মেদিনীপুর। ৫. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও ডায়েটিশিয়ান কোর্স পড়ানো হয়ে থাকে।