কৃষ্ণগঞ্জে আজও পূজিত হচ্ছে ডাকাতেকালী

Must read

মৌসুমী দাস পাত্র, নদীয়া: স্বদেশি যুগে সীমান্ত কৃষ্ণগঞ্জের ডাকাতরা ছিল কালীর উপাসক। তাই এই কালীর নাম ‘ডাকাতেকালী’। মাজদিয়ার ঘোষপাড়ায় এই ডাকাতে কালীর পুজোর (Krishnaganj- Kali Puja) সূচনার সাল, তারিখ সঠিকভাবে জানা না গেলেও স্বাধীনতার আগে অগ্নিযুগে এই পুজোর শুরু। জানা গিয়েছে, ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পুজো হচ্ছে এই ডাকাতে কালীর। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাসে জাগ্রত দেবী। কৃষ্ণবর্ণের দেবী এখানে রণচণ্ডী রূপে পূজিত হন। পুজো হয় শাক্ত মতে। কথিত আছে, নিজের ওজনের সমপরিমাণ সন্দেশ ও বাতাসা দিয়ে পুজো দিলে পূর্ণ হয় মনস্কামনা। আজও প্রচলিত আছে ছাগ বলি। এই পুজোকে ঘিরে আজও এলাকায় অনেক গল্প শোনা যায়।
স্বাধীনতার আগে এই এলাকায় গ্রামবাসীদের প্রবল অভাব ছিল। দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করা ছিল খুবই কষ্টের। স্বদেশি যুগের সেই সময় ব্রিটিশদের অত্যাচারে জায়গায় জায়গায় যুবকরা সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছিলেন। এই সময় লাঠি-ছোরাখেলায় পটু কয়েকজন যুবক সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা ডাকাতি করবেন। এক রাতে আচমকা খবর আসে, ঢাকার দিকে যাচ্ছে ব্রিটিশদের মালবাহী ট্রেন। ওই ট্রেনে প্রচুর খাদ্যসামগ্রী আছে। ইছামতী ব্রিজের ওপর দিয়ে মালবাহী ট্রেন যাওয়ার সময় লন্ঠনের লাল আলো দেখিয়ে ব্রিজের ওপর ট্রেন দাঁড় করানো হয়। চলে লুঠপাট। খবর যায় ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে। শুরু হয় ধরপাকড়। ডাকাতি করা যুবকরা আশ্রয় নেন জঙ্গলে। ডাকাতির খাদ্যসামগ্রী গ্রামের মানুষদের মধ্যে বিলি করে দেন। দলের নেতৃত্বে থাকা কৃত্তিবাস মৈত্র, দুলাল প্রামাণিক, হেমন্ত বিশ্বাস, ভরত সর্দার, গিরীন্দ্রনাথ ঘোষরা ব্রিটিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে জঙ্গলেই থেকে যান। স্মরণ করেন মা কালীকে। ব্রিটিশবাহিনী ফিরে যাওয়ার পরদিনই ছিল অমাবস্যা কালীপুজো (Krishnaganj- Kali Puja)। জঙ্গল থেকে বেরিয়ে মা কালীর আরাধনায় মেতে ওঠেন তাঁরা। সেদিনের ওই ‘ডাকাত’দের মাজদিয়ার মানুষ আজও সম্মানের চোখে দেখেন। এই ডাকাত দলের উত্তরসূরিরা কেউ ব্যাঙ্কে, কেউ শিক্ষক, কেউ-বা এলআইসিতে কাজ করেন। সেই সময় জঙ্গলে হওয়া পুজো এখন ঘোষপাড়ার বাসিন্দারা চাঁদা তুলে মায়ের মন্দির গড়ে সেখানেই নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করেন।

আরও পড়ুন- নারীবিদ্বেষী বিজেপি সরকার, আগেও প্রমাণিত, এবারও ফের

Latest article