সংবাদদাতা, এগরা : সোনালি জানা। অন্তঃসত্ত্বা। বাবা রবীন্দ্র মাইতির মৃত্যু হয়েছে এগরার বাজি বিস্ফোরণে। এই অবস্থাতেই, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) হাত থেকে ক্ষতিপূরণের চেক নিতে এলেন সোনালিদেবী। শনিবার তাঁকে দেখেই প্রথমে সস্নেহে উঁচু জায়গায় পা ফেলতে বারণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর চেক দিয়ে জানতে চাইলেন, কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন আছে? একেবারে অভিভাবকের মতো সোনালিদেবীকে পরামর্শ দিলেন, সাবধানে যাও। দুর্বল হয়ো না। এখানেই শেষ নয়, স্থানীয় প্রশাসনকে মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee) নির্দেশ দিলেন, সোনালিকে গাড়ি দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিতে। বিধায়ক তরুণকুমার মাইতিকে সেই সঙ্গে নির্দেশ দিলেন, খবর রেখো। আবার ক্ষতিপূরণের চেক নিতে আসা মৃত রবীন্দ্র মাইতির ছেলেকে দেখিয়ে জেলাশাসককে বলেন, ওর পড়াশুনার ব্যবস্থা করে দেবেন। কোলের শিশুকে নিয়ে ক্ষতিপূরণের চেক আনতে এসেছিলেন গৃহবধূ সোমা জানা। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি, ছোট্ট শিশুর হাতে সস্নেহে খেলনার ব্যাগ তুলে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই নাও। এটা নিয়ে তুমি খেলবে। আবার এগরার এই বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে গৃহবধূ অম্বিকা মাইতির। স্বামী সুরেশ মাইতি কোনওরকমে চাষ আবাদের কাজ করেন। পরিবারের ছোট মেয়ে উমা এবার মাধ্যমিক পাশ করেছে। ২২ বছরের মেজ মেয়ে বেঙ্গালুরুতে নার্সিং পড়ছে। আর বড় মেয়ে শিউলি ইসলামপুর হাসপাতালে নার্সিং-এর কাজ করেন। অম্বিকাদেবীর হঠাৎ মৃত্যুতে, এই পরিবারে দৈনন্দিন সংসার চালানো খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘটনাটি জানার পর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন জেলাশাসককে নির্দেশ দেন, শিউলিকে যেন ইসলামপুর হাসপাতাল থেকে দ্রুত এগরার কাছাকাছি কোথাও বদলি করে আনা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর এমন মমতাময়ীরূপে মুগ্ধ স্বজনহারা খাদিকুল। এগরার বিস্ফোরণে ছেলে ও ছোট ভাইকে হারানো গৌরাঙ্গ মাইতি জানালেন, গত ১১ দিন ধরে খুব চিন্তায় ছিলাম। মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে আজ আশ্বস্ত হলাম। আড়াই লক্ষ টাকাটা বড় কথা নয়। সেটা হয়তো দু’বছর পরে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যে চাকরিটা দিলেন, সেটা করে সবাই আজীবন খেতে পাবে। তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রী হয়েও যেভাবে জনে জনে আমাদের সকলের খোঁজ নিলেন এবং মমত্ব দেখালেন, আমরা খুবই কৃতজ্ঞ ও আনন্দিত। আরও এক স্বজনহারা পরিবারের সদস্য জানালেন, মুখ্যমন্ত্রীর মানবিকতায় আমরা অভিভূত। তিনি যেন খাদিকুলে এসে বার্তা দিয়ে গেলেন, ‘আমি তোমাদেরই লোক’।