উত্তমকুমার। বাংলার গুরু। বাঙালির গুরু। তিনি চা খান, সিগারেট খান, হুইস্কি খান। হাওয়া গাড়ি চড়ে বেড়াতে যান। কখনও নায়িকাকে জড়িয়েও ধরেন। কিন্তু কখনও চুমু খান না। সফট রোম্যান্স আর মেলোড্রামাটিক সেন্টিমেন্ট বাঙালির কাছে তাঁকে গুরু করে তুলেছে। বাঙালির রিল-গুরু উত্তমকুমার তাই ক্যাসানোভা নন, রিচার্ড বার্টন নন, জ্যাক দ্য রিপার নন। উত্তমকুমার তাই দেবদাস, সন্ন্যাসী রাজা, উদাসী বাউল, হিন্দু ফিরিঙ্গি এবং চিরন্তন নায়ক। চিরযুবা, চিরজীবী এবং গুরু।
আরও পড়ুন-ভুল সময়ে এসেছিলেন শমিত
তুমি কী জিনিস গুরু
বন্ধুদের নিয়ে ‘নায়ক’ ছবিটি দেখতে গিয়েছিলেন গৌতম। ছবি দেখতে দেখতে হলের মধ্যেই ‘গুরু গুরু’ বলে চেঁচিয়ে ওঠেন গৌতম! তাঁর বন্ধুরা বলেন, ‘‘এ কী রে! তোর বাবা না?’’ গৌতম বলেন, ‘‘বাবা? সে তো বাড়িতে! হল-এ গুরু!!!”
একবার বন্ধুদের নিয়ে কোনও এক জায়গায় গাড়ি করে বেড়াতে গিয়েছিলেন মহানায়ক। পথে লেভেল ক্রসিংয়ে গাড়ি থামিয়ে একটি দোকানে চা খেতে গেলেন উত্তমকুমার। তা দেখে কয়েকজন মেয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, ‘‘লোকটাকে একদম উত্তমকুমারের মতো দেখতে!’’ শুনে অন্য একজন বলল, ‘‘না, না। উনি এখানে আসবেন কী করতে?’’ কথাগুলো কানে যেতেই গাড়িতে উঠে নিজেকে আড়াল করে বসলেন তিনি। ট্রেন চলে যেতেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বললেন, ‘‘একদম ঠিক ধরেছেন আপনারা! আমিই উত্তমকুমার!!!’’ চক্ষু চড়কগাছ মেয়েদের! চা খাওয়া মাথায় তুলে তাঁরা দৌড়ে আসছেন! ওদিকে গাড়ি নিয়ে ভ্যানিশ মহানায়ক! আপামর বাঙালির ‘গুরু’ উত্তমকুমার।
আরও পড়ুন-রবিবারের গল্প: জানালা
গুরু কী উপায় বলো না!
হাজতবাস করলেন উত্তমকুমার। নতুন গাড়ি কিনে এক সন্ধ্যায় গৌরীদেবীকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সদ্য গাড়ি চালানো শিখছেন। গৌরীদেবীকে গাড়ি চালানো শেখাতে গিয়ে এক ফেরিওয়ালাকে ধাক্কা মেরে বসলেন তিনি! তাঁর আবার লাইসেন্স নেই! পুলিশ এসে ওঁদের সোজা হেস্টিংস থানায় নিয়ে গেল!!! তখনও উত্তমকুমার স্টার হননি। সারারাত থানায় বসে থাকার পর সকালে তাঁর এক বন্ধু এসে জামিনে ছাড়িয়ে নিয়ে গেলেন!
জিও গুরু জিও
ওঁদের বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোর রাতে প্রোজেক্টরে মহানায়কের দুটি ছবি দেখানো হত। সবার সঙ্গে বসে তিনি নিজেও তা দেখতেন। তারপর নিজেই বলে উঠতেন, ‘‘গুরু! কেয়া দিস! কেয়া দিস!’’ কেউ তাঁর অভিনয় দেখে সিটি দিলে গম্ভীর মুখে বলতেন, ‘‘অ্যাই! কে সিটি দিলি রে!!!???’’ পরক্ষণেই হয়তো নিজেই হাততালি দিয়ে বলে উঠতেন, ‘‘জিও গুরু জিও! চালিয়ে যাও গুরু! চালিয়ে যাও!!!’’
আরও পড়ুন-দেশের লজ্জা বিজেপির মণিপুর, আরও এক ভয়ঙ্কর ঘটনা চেপে যায় বিজেপি সরকার
তুমি আমাদের গুরু
নিজের সিনেমা নিয়ে গৌরীদেবীর মতামতকে খুব গুরুত্ব দিতেন তিনি। নিশিপদ্ম-র প্রিমিয়ার দেখে অনেকেই বিরূপ মতামত দিয়েছিলেন। তখন গৌরীদেবীকে ছবিটা দেখিয়েছিলেন মহানায়ক। গৌরীদেবী ছবিটা দেখে বলেছিলেন, ‘‘সুপারহিট হবেই!’’ হয়েও ছিল তাই। নিজের পরিচালনায় বনপলাশীর পদাবলী গৌরীদেবীকে দেখিয়েছিলেন তিনি। তাঁর পরামর্শে কয়েকটা দৃশ্য বাদও দিয়েছিলেন। ফের সুপারহিট!
উত্তমকুমার তাঁর ভাই তরুণকুমারের মতামতকে খুব গুরুত্ব দিতেন। খুব গুরুত্ব দিতেন মানে খুবই গুরুত্ব দিতেন। আরেকজনকে দিতেন, গৌরীদেবী। অমানুষ ছবির প্রিমিয়ারে যথারীতি মহানায়ক তরুণকুমারকে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং প্রিমিয়ার দেখে সবাই খুব উচ্ছ্বসিত। সবার ভীষণ ভাল লেগেছে ছবিটা। প্রত্যেকেই মনে করছে ছবিটা সফল হবে, হিট হবে। এই আনন্দে উত্তমকুমার সেই রাতেই বাড়িতে আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে একটা পার্টি দেবেন বলে সবাইকে নিমন্ত্রণ করে দিলেন। যথাসময় সব লোকজন এসছে। মনে রাখতে হবে এটা প্রিমিয়ার শো মানে হলে কিন্তু রিলিজ হয়নি। পরে হবে। তো সবাই হইচই করছেন। খাওয়াদাওয়া— পার্টি হচ্ছে। প্রত্যেকেই মনে করছেন ছবিটা দারুণ। শুধু এক কোণে তরুণকুমার চুপচাপ। তাঁর কোনও রা নেই, সাড়া নেই, শব্দ নেই। এটা দেখে উত্তমকুমার তাঁকে গিয়ে বললেন, ‘‘কী ব্যাপার ছোটবাবু? আমার ছবি দেখে তুমি এমন চুপচাপ থাকার পাত্তর তো না। তাহলে তোর কী মনে হচ্ছে? ছবিটা ভাল হয়নি? ছবিটা চলবে না? ফ্লপ হয়ে যাবে?’’
তরুণকুমার বললেন, ‘‘দাদা তোমার অভিনয় দেখে আমরা সবাই শিখি। আমি শিখি, সবাই শেখে। তুমি আমাদের গুরু। তোমার এই ছবি হল থেকে কেউ নামাতে পারবে না। তোমার প্রোডিউসার লালে লাল হয়ে যাবে। কেউ হল থেকে নামাতে পারবে না এত হিট হবে।’’
আরও পড়ুন-৩ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে নূর
উত্তমকুমার বললেন, ‘‘তাহলে তুই এমন চুপচাপ হয়ে আছিস কেন? তোকে তো দেখে সেটা মনে হচ্ছে না।’’
তরুণকুমার বললেন, ‘‘ওই তো বললাম। তোমার অভিনয় দেখে আমরা শিখি, সবাই শেখে। কিন্তু এটা তুমি কী অভিনয় করেছ? এটা তোমার অভিনয় হয়েছে? এ তো চিৎপুরের অভিনয়। চিৎপুরে এরকম হয়। তোমার এই অভিনয় আমার একটুও ভাল্লাগেনি। মানে আমি বলতে চাই তুমি কোনও অভিনয়ই করোনি এই ছবিতে।” উত্তমকুমার তরুণকুমারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন চুপচাপ। ভাবতেই পারেননি এমন একটা উত্তর আসবে। বললেন, ‘‘দ্যাখ! এই ক্যারেক্টারটার দুটো দিক আছে। একটা এক্সট্রোভার্ট, আরেকটা ইন্ট্রোভার্ট। আমি আমার সাধ্যমতো করেছি। অনেকের হয়তো ভাল লাগবে। তোর একেবারেই ভাল লাগেনি। আবার এর থেকে যদি কোনও ভাল গল্প বা ভাল ক্যারেক্টার পাই চেষ্টা করব বেটার করতে। কিন্তু ততক্ষণ অবধি তুই একটু নরমালি বিহেভ কর। এরম বিহেভ করিস না সবার সামনে।’’
আরও পড়ুন-দেশের লজ্জা বিজেপির মণিপুর, আরও এক ভয়ঙ্কর ঘটনা চেপে যায় বিজেপি সরকার
গ্যারি কুপারকেও ছাড়িয়ে গেছো
ওই একই বছরে পীযূষ বসুর ‘বিকেলে ভোরের ফুল’ ছবি রিলিজ হয়েছিল। ‘বিকেলে ভোরের ফুল’ ছবির প্রিমিয়ারেও মহানায়ক তাঁর ভাইকে নিয়ে গেছেন। প্রিমিয়ার দেখার পর তরুণকুমার নিজেই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলেন। মহানায়ক জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘এবার তুমি বল ছোটবাবু, তোমার কী মনে হল আমি চিৎপুরের মতো অভিনয় করেছি?’’ তরুণকুমার তাঁকে একটা প্রণাম করে বললেন, ‘‘তোমাকে আমি একটা কথা বলছি দাদা, এই সিনেমাটা ‘লাভ ইন দ্য আফটারনুন’ ছবি থেকে নেওয়া। গ্যারি কুপার, অড্রে হেপবার্ন অভিনয় করেছিলেন এবং সেই ইংরেজি অরিজিন্যাল ছবিটা আমি দেখেছি। তুমি অনবদ্য অভিনয় করেছ। শুধু তা-ই নয়, তুমি কোনও কোনও জায়গায় গ্যারি কুপারকে ছাড়িয়ে গেছো।’’ উত্তমকুমার বললেন, ‘‘তাহলে তুই বলছিস এই ছবিতে আমি চিৎপুরের মতো অভিনয় করিনি? ভাল করেছি? লোকে নিয়ে নেবে?’’ তরুণকুমার বললেন, ‘‘এইখানেই হয়েছে সমস্যা। তোমার এই ছবিটা লোকে নেবে না। তোমার ছবিটা ফ্লপ হবে দেখবে।’’ উত্তমকুমার বললেন, ‘‘এই তো তোকে নিয়ে আমার মহাঝামেলা। আমার যে ছবিটা বলিস লোকে নিয়ে নেবে হিট হবে, সেই ছবিটিতে আমি চিৎপুরের মতো অভিনয় করি আর যেই ছবিতে আমি গ্যারি কুপারকে ছাপিয়ে যাচ্ছি বলছিস, সেই ছবিটা লোকে নেবে না বলছিস। আমার তো তোকে নিয়ে বড় সমস্যা। আমি কোথায় যাই? কী করি বল দেখি?’’ সত্যি সত্যি ‘অমানুষ’ সুপার হিট। আজও সুপার হিট। আর ‘বিকেলে ভোরের ফুল’ উত্তমকুমারের ওই অনবদ্য অভিনয় সত্ত্বেও দর্শক কিন্তু নেয়নি।
আরও পড়ুন-দেশ জুড়ে বর্ষার তাণ্ডবলীলা
তারকা নন, গুরু
উত্তমকুমার যে শুধু তারকা নন, গুরু হয়ে উঠেছিলেন তার পিছনে কয়েকটি কারণ আছে। তিনি যে খুব অসাধারণ সুন্দর ছিলেন, এমনটা বলা যায় না। কারণ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বসন্ত চৌধুরী, অনিল চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় এঁরা প্রত্যেকেই উত্তমের তুলনায় অনেক বেশি সুন্দর ছিলেন। ওঁর আগে যাঁরা অভিনয় করতেন, যেমন, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রমথেশ বড়ুয়া এককথায় আরও বেশি সুন্দর ছিলেন। তবু উত্তমকুমার এত জনপ্রিয় কারণ তিনি একটা সময় ধরতে পেরেছিলেন। বসু পরিবারে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন উত্তমকুমার। সেখান থেকেই একটু একটু করে জনপ্রিয়তার শিখরে উঠতে শুরু করেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন-রাজধানী ইম্ফলে রাস্তা আটকে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মহিলাদের
ম্যাটিনি আইডল উত্তমকুমার
যে সময়টা উনি ধরতে পেরেছিলেন, সেটি হল স্বাধীনতা। দেশ ভাগের পরের সময়। আর্থিক সমস্যা যখন ঘরে ঘরে। সেসময় সাধারণ মানুষের সাফল্যের ঘটনাই থাকত তার প্রতিটি ছবিতে। দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রমথেশ বড়ুয়ারা ছিলেন দূরের নক্ষত্র। কিন্তু উত্তমকুমারকে দেখে মনে হত, ঠিক যেন পাশের বাড়ির ছেলে। আর তখনকার প্রজন্মে সকলেই মনে করত, আমিও তো উত্তমকুমার হতে পারি। এভাবেই বাঙালির গুরু হয়ে ওঠেন ম্যাটিনি আইডল উত্তমকুমার।
উত্তমকুমার হচ্ছেন গড়পড়তা অবদমিত বাঙালির প্রতিনিধি। তিনি নিজের চারপাশে একটা আভা তৈরি করতে পেরেছিলেন। তখনকার দিনে পেজ থ্রি ছিল না। মিডিয়া সাপোর্ট ছিল না আজকের দিনের মতো। তা সত্ত্বেও উত্তমকুমার কী খাচ্ছেন, কার সঙ্গে প্রেম করছেন বা করছেন না তা নিয়ে চর্চা ছিল আপামর বাঙালির মধ্যে।
আরও পড়ুন-এই থানাকেই সেরার তকমা দেয় কেন্দ্র! মণিপুরের নারকীয় কাণ্ড ঘটে এখানেই
গুরু হলেও সত্যি
এর প্রমাণ রয়েছে ১৯৬৫ সালে তপন সিংহের ‘গল্প হলেও সত্যি’ ছবিতে। একটি দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে, দুপুরবেলা বিশ্রামের সময় দু’জন গৃহিণী আলোচনা করছেন তাঁকে নিয়ে। উত্তমকুমার সাদামাঠা মানুষ, তার মানে তারকার গণ্ডি টপকে সাধারণ মানুষের ঘরে ঢুকেছিলেন তিনি। উত্তম কীভাবে চুল কাটেন (ইউ কাট), কীভাবে কালো চশমা পরেন, তা নিয়ে লোকে ভাবত।
উত্তমকুমারই বাংলা সিনেমার প্রথম গুরু যিনি সিনেমার ভয়েসটা বুঝতে পারতেন। বোঝাতে পারতেন অর্থাৎ এখানে যে মেলো-ভয়েসের প্রয়োজন আছে, আর সেটাই যথাযথ সেটি উত্তমকুমারই প্রবর্তন করেন। থিয়েটার বা নাটকের মতো যে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলার প্রয়োজন নেই তা বুঝিয়েছিলেন তিনি। তাই তিনি গুরু।
আরও পড়ুন-‘ভয় পেয়েছে বিজেপি’, মোদী সরকারকে নিশানা শশী পাঁজার
তুমি যে আমার
দৈহিক সান্নিধ্য ছাড়াই প্রেম বুঝিয়েছিলেন তিনি। হারানো সুর ছবিতে বিখ্যাত গান ‘একবার শুধু কানে কানে বল তুমি যে আমার’— এখানে সুচিত্রা সেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতেই পারতেন। কিন্তু উনি সেই দৃশ্যে একেবারে মৃত মানুষের মতো শুয়ে ছিলেন। উত্তমকুমার সপ্তপদী ছবির আগে সুচিত্রা সেনকে স্পর্শ করেননি। কারণ তিনি মনে করতেন দৈহিক সম্পর্ক দেখালে লোকে পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখতে আসবে না। আসলে তাঁর কাছে, প্রেমিক তখন বয়ফ্রেন্ড ছিল না অভিভাবক ছিল।
যখন তিনি আর হিরো আর থাকতে পারলেন না, বয়স হয়ে গিয়েছিল তখন তাঁকে ঘিরে গল্প তৈরি হল, ছবি তৈরি হল। যেমন, ‘ওগো বধূ সুন্দরী’। উত্তমকুমার তখন একই সঙ্গে বাঙালির নায়ক এবং গুরু। সত্যজিৎ রায় ‘নায়ক’ ছবিতে উত্তমকুমারকে নিয়েছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন ভবিষ্যতের নায়ক হয়েই থাকবেন তিনি।
আরও পড়ুন-NRS-এর কার্ডিওলজি বিভাগে আগুন-আতঙ্ক
ভুবন ভোলানো হাসি— অক্ষয় হোক
হারানো সুরের শ্যুটিং চলছে, তখন টালিগঞ্জ কী ছিল তা এখন চিন্তার অতীত। বাস একটাই চলে, ৬ নম্বর। বিরাট বিরাট গাছে ঢাকা অঞ্চল। কেউ কোথাও নেই। রাতে সে-জায়গা খুব ভয়ঙ্কর হয়ে উঠত। অজয় করের পরিচালনায় ‘…শুধু একবার বলো তুমি যে আমার’ গানের শ্যুটিং হবে। প্রয়োজন দুটি মালার। কিন্তু অজয় কর হঠাৎ জানতে পারেন, দুটো মালা লাগবে, কিন্তু একটা রয়েছে। এদিকে মেজাজি মিসেস সেন যদি জানতে পারেন যে তাঁকে মালা না দিয়ে উত্তমকে দেওয়া হয়েছে, তাহলে রাগারাগি করবেন। এদিকে, উত্তমকুমারকে মালা না দিলে তিনি যদি আবার কিছু মনে করেন! অতঃপর একজনকে পাঠালেন মালা জোগাড় করতে। তখন টালিগঞ্জে বাজার ছিল না। কাছের বাজার বলতে সেই লেক মার্কেট। যাই হোক, অবশেষে মালা এল। শ্যুটিংও শেষ হল। পরবর্তী কালে অজয় কর দুঃখ করে বলেন, আমি আজও উত্তমকুমারকে জানাতে পারিনি যে সেদিনের মালাটি কেওড়াতলা শ্মশান থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল! শ্যুটিং যাতে ভেস্তে না যায় তাই সেদিন চুপ ছিলেন অজয় কর।
উত্তমকুমার থেকে আজও ফিরতে পারেনি বাঙালি। তাঁর সেই ভুবন ভুলানো হাসি। অক্ষয় হোক। অক্ষয় হোক। অক্ষয় হোক। হে ভগবান!