তিন বছর পর মঞ্চে ফিরলেন। কেমন লাগছে?
আমি (Satyam Bhattacharya) তো মঞ্চেরই মানুষ। কিন্তু কিছুতেই মঞ্চে অভিনয়ের সুযোগ আসছিল না। অতিমারি অবশ্যই একটা কারণ। ব্যস্ততা ছিল দলের সদস্যদের। যাই হোক, সবকিছু অতিক্রম করে তিন বছর পর মঞ্চে ফিরে ভালই লাগছে। ২০২০ সালে আমাদের শেষ মঞ্চস্থ নাটক ছিল ‘উন-নয়ন’।
নতুন নাটকটা সম্পর্কে একটু বলুন…
ইতালীয় নাট্যকার লুইজি পিরানদেল্লোর জনপ্রিয় ‘রাইট ইউ আর (ইফ ইউ থিংক সো)’ নাটকটি মঞ্চস্থ করলাম। বাংলায় রূপ দিয়েছেন প্রতীক দত্ত। নাটকের নাম দেওয়া হয়েছে ‘তবে তাই’। প্রতীকদা আমার দাদার মতো। অনেকদিন একসঙ্গে কাজ করছি। মন্দার এবং বল্লভপুরের রূপকথার স্ক্রিপ্ট প্রতীকদার। নাটকটা বহু আগে লেখা। তবে আজও প্রাসঙ্গিক। আমরা বর্তমান প্রেক্ষাপটে নাটকটা ফুটিয়ে তুলেছি। পরিচালনা করেছেন সুস্নাত ভট্টাচার্য। সেপ্টেম্বরে শুরু হয়েছিল প্রস্তুতি। আমার পাশাপাশি নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আভেরী সিংহরায়, অনিন্দ্য সাঁই, শাশ্বতী সিংহ, জিৎ দাস, মৌমিতা গুপ্ত শর্মা, নিন্নিশা তালুকদার, অনুভব দাশগুপ্ত প্রমুখ। মঞ্চ ফিরে পেয়ে দলের সবাই খুব খুশি।
দর্শকদের প্রতিক্রিয়া?
১৯ ফেব্রুয়ারি নাটকটা মঞ্চস্থ হয়েছে কলকাতার জ্ঞানমঞ্চে। দর্শকদের প্রতিক্রিয়া খুবই ভাল। এটা কিন্তু কোরাস ওরিয়েন্টেড সংগীত-নির্ভর নাটক নয়। নেই হইহুল্লোড়। তবু নাটকটি দর্শকদের মন ছুঁয়ে গেছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রশংসা করেছেন অনেকেই। কিছু মানুষের ভাল লাগেনি। তাঁরাও জানিয়েছেন। এইভাবে প্রচুর ফিডব্যাক পেয়েছি। আমরা চেষ্টা করব পরের শো থেকে আরও ভাল করার। ৪ জুন জ্ঞানমঞ্চে আবার মঞ্চস্থ হবে। তার আগে অন্য কোনও দলের সঙ্গে যৌথভাবে শো করার চেষ্টা করছি। কারণ জুন মাস এখনও অনেক দেরি।
আপনাদের দল কত বছরের?
আমাদের নাটকের দলের নাম হিপোক্রিটস। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৪ বছর কমপ্লিট করল। আমরা কয়েকজন মিলে দলটা প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। বেশ কিছু নাটক মঞ্চস্থ করেছি। পেয়েছি দর্শকদের প্রশংসা, ভালবাসা।
এই মুহূর্তে কোনও ওয়েব সিরিজ বা ধারাবাহিকে কাজ করছেন?
বেশ কিছু ওয়েব সিরিজে কাজ করেছি। তবে এই মুহূর্তে কোনও ওয়েব সিরিজে কাজ করছি না। ভাল কোনও চরিত্র পেলে অবশ্যই করব। কাজ করেছি ধারাবাহিকেও। সেটাও আপাতত করছি না। বল্লভপুরের রূপকথায় ভূপতি চরিত্রের অভিনয়ের জন্য অসংখ্য মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। তারপর থেকে আসছে বেশ কিছু সিনেমার অফার।
আরও পড়ুন: টানা তিনবার চিনের প্রেসিডেন্ট
কোনও বড় ধরনের চরিত্রে দেখা যাবে?
এখনও পছন্দমতো বড় চরিত্রের অফার আসেনি। এলে অবশ্যই করব। ভাল কাজ করার জন্যই তো মুখিয়ে আছি। আপাতত কিছু ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রেই অভিনয় করছি।
সহ-অভিনেতাদের কথা বলুন। কাদের কাজ পছন্দ করেন?
অনেকের কাজই আমার ভাল লাগে। সুহোত্র মুখোপাধ্যায়, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, ঋদ্ধি সেন, অনিন্দ্য সেনগুপ্ত প্রমুখ দারুণ কাজ করছেন। এটা ভেবে ভাল লাগে, এঁরা আমার সমসাময়িক।
প্রিয় পরিচালক?
অনির্বাণদা, অনির্বাণ ভট্টাচার্য আমার (Satyam Bhattacharya) খুব প্রিয় পরিচালক। আসলে অনির্বাণদা একজন দক্ষ অভিনেতা। তাই অভিনেতাদের প্রতি তাঁর আলাদা একটা যত্ন আছে। সেটা খুবই ভাল লাগে। ঠিক কী চান, সেই ব্যাপারে উনি খুবই ক্লিয়ার। যে কোনও বিষয়কে নিখুঁত করার চেষ্টা করেন। মন্দারে আমি অনির্বাণদার সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি। শিখেছি অনেক কিছু। অভিজ্ঞতা খুবই ভাল। পাশাপাশি বলব সৃজিত মুখোপাধ্যায় এবং বীরসা দাশগুপ্তের নাম। সহকারী হিসেবে এঁদের সঙ্গেও কাজ করেছি এবং অনেক শিখেছি।
স্বপ্নের কোনও চরিত্র, যেটা ফুটিয়ে তুলতে চান?
গল্প হলেও সত্যি-র রবি ঘোষের চরিত্রটা আমার খুব পছন্দের। সুযোগ পেলে ওই চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। আগন্তুক ছবিতে উৎপল দত্তের চরিত্রটাও আমার খুব প্রিয়। আছে আরও অনেক চরিত্র। মঞ্চ অথবা পর্দা, যে কোনও মাধ্যমে আমি এই চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলতে চাই। জানি না সুযোগ আসবে কি না।
ভবিষ্যৎ-পরিকল্পনা?
অভিনয় আমার রক্তে। আমার (Satyam Bhattacharya) বাবা দেবব্রত ভট্টাচার্য থিয়েটার জগতের মানুষ। অভিনয় করেন আমার দাদাও। তাঁদের দেখেই এই জগতে এসেছি। ছোটবেলায় পাড়ার নাটকে ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় দিয়ে শুরু। কলেজে পড়ার সময় যুক্ত হই থিয়েটারে। অভিনয় করেছি ছোট-বড় বিভিন্ন চরিত্রে। ‘ধনঞ্জয়’ ছবিতে অনির্বাণদার ভাইয়ের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছি। এইভাবে ধীরে ধীরে একটার পর একটা কাজের মধ্যে দিয়ে অভিনয়-শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে গেছি। আগামী দিনে এইভাবেই অভিনয়ের মাধ্যমে নিজেকে মেলে ধরতে চাই। করোনা অতিমারির পরে আমরা যে খুব স্বাভাবিক হতে পেরেছি, তা নয়। অর্থ উপার্জন জীবনে একটা বড় ব্যাপার। সবকিছু সামলে চাই আরও ভালভাবে অভিনয়-শিল্পকে আঁকড়ে ধরতে। ভবিষ্যৎ-পরিকল্পনা বলতে আপাতত এটাই।
পরিচালনায় আসতে চান?
হ্যাঁ, পরিচালনায় আসার ইচ্ছে আছে। দীর্ঘদিন সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি। তাই পরিচালনা করতে আমার ভালই লাগবে। তবে ঠিক এই মুহূর্তে আমি পরিচালনার জন্য তৈরি নই। ওটাও ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাক।