এক কথায় পলিটিক্যাল থ্রিলার। একজন ক্রাইম জার্নালিস্টের জার্নি। খোঁজ। নাছোড় মনোভাব। এবং তার প্রেক্ষিতে তৈরি হওয়া অনেকগুলো প্রশ্ন। সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল কি না, কেন গেল না, তা নিয়ে তৈরি হওয়া তর্ক। আর অনবদ্য কিছু অভিনয়। সব মিলিয়ে অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরির ‘লস্ট’ ওটিটি’র দর্শকের বাইরেও মানুষকে ছবিটি সম্পর্কে উৎসাহী করতে সমর্থ। আর সবচেয়ে জরুরি খবরটি শুরুতে দিয়ে নেওয়াই ভাল। যাঁরা এই জি-ফাইভের ওরিজিনাল ছবিটি বড়পর্দায় দেখতে আগ্রহী তাঁদের জন্য প্রিয়া সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ এক সুযোগ এনে দিয়েছেন এই সপ্তাহে। গতকাল থেকে ছবিটি সংশ্লিষ্ট হল-এ দেখা যাচ্ছে দুটি শো-এ। আপাতত পয়লা মার্চ অবধি শো টাইম ধার্য করা হয়েছে যথাক্রমে ৩:৪৫ ও ৬:১৫ ।
আরও পড়ুন-মাধ্যমিক আজন্ম প্রতিবন্ধী সায়নদীপের
এবার আরও একটি জরুরি তথ্য। হার্ডকোর থ্রিলার-মনস্ক মানুষ, যাঁরা থ্রিলারের সংজ্ঞা অনুযায়ী টানটান এক্সাইট্মেন্ট, মারকাটারি সিকোয়েন্স কিংবা শিরদাঁড়া সোজা করা সাসপেন্স দেখতেই পছন্দ করেন তাঁরা ‘পলিটিকাল থ্রিলার’ তকমাটা শুনে দেখতে গিয়ে একটু ধাক্কা খেতেই পারেন! যদিও তাঁরা জেনেই যাবেন পরিচালকের নাম অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরি! তিনবারের জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী বলে নয়, যাঁর সিনেমার ট্র্যাক রেকর্ডটা এরকম, ‘অনুরণন’ (২০০৬), ‘অন্তহীন’ (২০০৮), ‘অপরাজিতা তুমি’ (২০১২), ‘বুনো হাঁস’ (২০১৪), ‘পিঙ্ক’ (২০১৬) এবং এই ‘লস্ট’ (২০২৩)। অর্থাৎ আঠারো বছরে ছ’টি ছবি। কিছু ওয়েব সিরিজ পরিচালনা ও একটি ছবি প্রযোজনা অবশ্য আছে এর মধ্যে! কিন্তু ছবির ধারা বলে দেয় অনিরুদ্ধ কী ধরনের গল্প বলেন, কীভাবে গল্প বলতে ভালবাসেন! ‘লস্ট’ ব্যতিক্রম নয়। আর তাই আদতে এটি হয়ে উঠেছে চরিত্রদের জীবনের গল্প, ঘটে যাওয়া একটি সত্য ঘটনার সঙ্গে বুনে দিয়েছেন তাদেরও প্রেম-অপ্রেম, চাওয়া-পাওয়া-পেতে চাওয়া-না-পাওয়া সব। আর ‘লস্ট’ হয়ে উঠেছে ‘রোমান্টিক থ্রিলার!’
আরও পড়ুন-সস্ত্রীক দেখা করলেন শেখ হাসিনার সঙ্গে, বিশ্বকাপে সাকিবদের চারে দেখছেন সৌরভ
স্টার-কাস্ট দুর্দান্ত। মূল তিনটি চরিত্রে আছেন ইয়ামি গৌতম ধর, পঙ্কজ কাপুর, রাহুল খান্না। বাকি যা কিছু নিয়েই বক্তব্য থাক, তিনজনের অভিনয় নিয়ে কোনও বক্তব্য থাকবে না এটা নিশ্চিত। ক্রিমিনাল জার্নালিস্ট বিধি সাহানি(ইয়ামি) একটি কেস ফলোআপে নামে। বাম-মনোভাবাপন্ন ঈশান ভারতী সক্রিয় থিয়েটার কর্মী। ধীরে ধীরে সে অতি সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যায় যা খুব প্রকাশ্য নয়। আর এভাবেই একদিন সে উধাও হয়ে যায়। তার পরিবার, প্রেমিকা, পরিচিতরা সবরকম চেষ্টা করেও তার খোঁজ পায় না। ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা যাতে রহস্য জট পাকায় কিন্তু খোলে না। বিধি এই ‘অন্তর্ধান রহস্য’টি নিয়ে এগোতে থাকে। রঞ্জন বর্মন এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। ঈশান অন্তর্ধানে তার হাত আছে এমনটা মনে হতে থাকে। কারণ ঈশানের প্রেমিকা অঙ্কিতা চৌধুরিকে (পিয়া) রঞ্জনের প্রয়োজন হয়। এ কারণেই কি ঈশান উধাও? নাকি আছে আরও গভীর কোনও সমীকরণ? কারণ রঞ্জনের বিরোধী দল, যারা তার মৃত্যু চায়, তাদের সঙ্গেই কোনওভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল ঈশান? তাই তাকে সরিয়ে দেওয়া? আর তারই খোঁজে হন্যে হয়ে পড়া বিধির। কারণ বিধি মানতে পারে না এভাবে জলজ্যান্ত একটি ছেলে উবে যেতে পারে! ক্রমশ সে জড়িয়ে পড়ে ঈশানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে, তার প্রেমিকা অঙ্কিতার সঙ্গে। তাদের আবেগ, তাদের হয়রানি, তাদের হাহাকার এবং তৈরি হওয়া কিছু সন্দেহ, সবের দ্বারা প্রভাবিত হতে থাকে বিধির নিজস্ব জীবন ও সম্পর্কগুলোও। তার পাশে থাকে তার নানু (পঙ্কজ কাপুর)। বিধির হয়রানি, বিধির সমস্যা, গুলিয়ে ফেলায় প্রত্যক্ষ সাহারা হয়ে ওঠেন নানু। যথাসম্ভব পাশে থাকেন বিধির। শরিক হন ভাবনার। নাতনির সঙ্গে স্নেহপ্রবণ নানুর এই সম্পর্কটি গোটা ছবিতে অনন্য প্রাপ্তি। পঙ্কজ কিছু দৃশ্যে বরাবরের মতোই অসাধারণ। রঞ্জনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাহুল খান্না।
আরও পড়ুন-সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের হামলায় জখম ১১ তৃণমূল নেতা-কর্মী
গোটা ঘটনাটি পশ্চিমবঙ্গের বুকে ঘটলেও কাহিনির সময়কাল বা কোন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি রঞ্জন তা সরাসরি অনিরুদ্ধ ছবিতে বলেননি। এটির কারণ তিনিই বলতে পারবেন কিন্তু শিল্প-সৃষ্টিতে সদা নিরপেক্ষ থাকা যায় না, এড়িয়ে যাওয়াও কাম্য নয়। বিশেষত এ জাতীয় ছবি, তাতে খানিক হলেও দর্শক- মনে অপূর্ণতা থেকে যায় বা কাহিনির ধার কমে যায়। ছবিতে কলকাতার দুই পরিচিত মুখকে দেখা যায়, অরিন্দম শীল ও কৌশিক সেন। কৌশিকের চরিত্র ও বিধির সঙ্গে তার কথা বলার ধরন, দর্শককে অনেক স্মৃতি উসকে দিতে পারে। শেষ অবধি কী হয় তা জানার জন্য ছবিটি দেখাই শ্রেয়।