সুদর্শন নন্দী: পার্টির লোক মারফত চিঠিটা পেয়েই রঘু নিঃশ্বাস নিতেই ভুলে গেল খানিকক্ষণ। দম বন্ধ হয়ে আঁকুপাকু করতে করতে হুঁশ ফেরে আবার। মধ্যাহ্ন ভোজনের জন্য তার বাড়িটাই কেন পছন্দ হল পার্টির সর্বভারতীয় কর্তা তথা হেভিওয়েট মন্ত্রীর তা ভেবে কূলকিনারা পেল না সে। ভাতের হাঁড়ি চাপিয়ে বউ উনুনে কাঠ দিচ্ছিল। একটু তফাতে গ্যাস সিলিন্ডার খালি পেটে পড়ে আছে অনেকদিন। বিনি পয়সায় পেয়েছিল। রান্না করতে বড় আরাম। ইচ্ছে মতো জ্বালাও-নেভাও। পাতাঝাঁটি, কাঠের দরকার নেই। ধোঁয়াও খেতে হত না। কিন্তু ওই পর্যন্ত। গ্যাসের দামে সে-সুখ সইল না। একটা সিলিন্ডার কেনার পয়সায় তার এক মাসের শাকাপাতা নুন হয়ে যাবে। আর এই ঘরে কিনা অত বড় নেতা খেতে আসবে! রঘুর বউ বলল, পাঁচ কান কোরোনি আবার, যা পেট-পাতলা লোক তুমি। সুযোগ যখন এসেছে তখন ফুটো ঘরটা পাকা যাতে হয় তার ব্যবস্থা করতে হদ্রেবে, আর ব্যাটার কাজের জন্য বলা যাবে ’খন। রঘু কাউকে না বললে কী হবে, সে খবর জানাজানি হল পার্টির তরফ থেকে।
আরও পড়ুন-আহা গন্ধ আহা স্পর্শ
‘দিকে দিকে সেই বার্তা রটি গেল ক্রমে,
রঘুর ঘরে মন্ত্রী আসবেন মধ্যাহ্ন ভোজনে’।
ওদের সর্বভারতীয় নেতা তথা মন্ত্রী রঘুর ঘরে মধ্যাহ্ন ভোজন করবেন। আগামী সপ্তাহের বুধবার আসবেন তিনি দু’দিনের সফরে; প্রথম দিনের মধ্যাহ্ন ভোজন রঘুর ঘরে।
আরও পড়ুন-রবিবার রাতেও মিলবে বিশেষ মেট্রো
খবরটা শুনে অবধি চিন্তায় জেরবার রঘু। এইটুকু ঘর তার, চাল আনলে নুন ফুরোয়। খাওয়াবেই বা কী সে! আজ আর কাজে গেল না রঘু। সে শুধু ভাবতে থাকে তার ঘরেই কেন ওই দশাসই মন্ত্রী খেতে আসবে। চিন্তা করতে করতে রঘু সোজা চলে গেল খালপাড়ের জমির দিকে। হাতে তামাক নিল দাঁতে ঘসার জন্য, গলায় গামছা। একেবারে কাজ সেরে খালে চান করে ঘরে ফিরবে। আর পেট খালি করার ফাঁকে মন্ত্রীর ঘরে আসা বিষয়টি নিয়ে ভাববে খানিক। ফাঁকা মাঠে ডিস্টার্ব কম। তাই গুরুত্বপূর্ণ ডিসিশন থেকে কোনও গুপ্ত কারণ বের করতে এই পদ্ধতিই অবলম্বন করে সে।
রাস্তায় যেতে যেতে খয়রা পাড়ার বিশুকে সে তেঁতুলতলার দিকে আসতে দেখল। রঘু দূর থেকে দেখতে পেয়ে তার আগেই মোরাম রাস্তায় ঘুরে গেল ডান দিকে। বিশুর সাথে দেখা হলে এখন ঘণ্টা দুই নষ্ট। কথাবার্তার ল্যাজা-মুন্ডু কিছু নেই, বকর বকর করেই যাবে। তা ডানদিকে রঘু ঘুরেছে অমনি সে বিশুর গলা পেল, ও রঘুদা, ওদিকে কোথায় যাচ্ছ? অত বড় খবর, শোননি এখনও? সেটা বলতেই তো তোমার ঘর যাচ্ছি।
রঘু অবাক বিশুর ডাকে ‘রঘুদা’ উচ্চারণে। কোনওদিন শালা, হারামজাদা ছাড়া ডাকেনি সে, তার মানে আসল খবর পেয়ে সে দৌড়ে এসেছে কোনও ধান্দায়। শুরু করেছে তেল মাখাতে। উঁহু, রঘু অত গাধা নয়, যে তেল দিলেই সে মেখে নেবে। সে কথা না শোনার ভান করে হনহন করে হাঁটতে লাগল।
আরও পড়ুন-ইদের দিনেই মুসলিমদের হাতে দুর্গা প্রতিমার বায়না!
বিশু ছাড়ার পাত্র নয়। সে দৌড়ে ধরে ফেলল রঘুকে। পথ আটকে বলল, কী সুখের কথা দাদা, তোমার ঘরে কিনা অত বড় মন্ত্রী খেতে আসছে। পুরো গ্রাম ধন্যি হয়ে যাবে গো। আর তুমি তো গাঁয়ের মোড়লের উপরে যাবে গো দাদা। বলছিলুম—
রঘু বিরক্ত হয়ে বলল, পথ ছাড়, খুব জোর পেয়েছে। পরে কথা হবে ’খন। বলেই রঘু দৌড় লাগাল। বিরক্ত হলেও রঘু খুশি হল যে এবার সবাই তাকে মান্যি করবে।
আরও পড়ুন-ভিডিও বার্তায় অক্ষয় তৃতীয়া ও ইদের শুভেচ্ছা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
মাঠে বসে কিছুতেই বের করতে পারল না রঘু, মাথা থেকে আর কী! কেন তার ঘরেই ভোজন করতে আসবেন ওজনদার ওরকম একজন দলীয় নেতা, বড় মন্ত্রী? না সে ব্রাহ্মণ, না ওবিসি, না সংখ্যালঘু, না আদিবাসী, না ভালবাসে কোনও দলকে। ছাপোষা গেরস্থ। সংসার চলে যায়। ভাঙা হলেও সেকেন্ড হ্যান্ড টিভি আছে ঘরে, ব্যাটা বেকার, বিটি অবিবাহিত। তবে, এবার নিজেকে একটু কেউকেটা মনে করল রঘু। এতদিন টিভিতে যা দেখত, তাকে নিয়ে তাই দেখানো হবে। এ যেন সে বামন হলেও চাঁদই নিচে নেমে আসছে। রঘু ভাবল, ওদের রাজ্য সভাপতি, আর ছোট-বড় নেতারা আজ বিকেলে আসবে নিশ্চয়ই খাবারের ব্যাপারে কথা বলতে, আর আমাকে কী কী করতে হবে সে-বিষয়ে বোঝাতে, তখনই জিজ্ঞাসা করে নেওয়া যাবে আমার ঘরে ওনারা যে খাবেন সেই পছন্দের কারণটা কী। স্নান না করেই সে ঘরে ফিরে এল।
আরও পড়ুন-চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট, ২০২২ সালে ইউরোপে তাপপ্রবাহের জেরে মৃত্যু হয়েছে ১৫৭০০ জনের!
এবার তৈরি হওয়ার পালা। কতদিন দাড়ি কাটেনি সে। তাড়াতাড়ি করে পঞ্চার সেলুনে সে গেল ফুলবাবু হবার জন্য চুল-দাড়ি-গোঁফ ছাঁটতে। গিয়ে তো অবাক সে। চারজনের লাইন থাকতেও পঞ্চা আদর আপ্যায়ন করে সাবান মাখানো একজন আধা-দাড়ি-কাটা খদ্দেরকে জোর করে চেয়ার থেকে নামিয়ে রঘুকে বসালে সেই চেয়ারে। সেই খদ্দের পঞ্চাকে এই মারে তো সেই মারে। বলল, ঘণ্টাখানেক পর আমি ট্রেন ধরব। আধ-ছাঁটা-দাড়ি নিয়ে আমি ঘর যাব কী করে আর ট্রেন ধরবই বা কী করে শুনি? পঞ্চা রঘুকে দেখিয়ে বললে, আরে চেনেন এই ভিআইপিকে? বিকেল থেকে এনাকে টিভিতে দেখবেন। ইনি চাইলে এক ফোনে আপনার ট্রেন চব্বিশ ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে পারেন! না-রেগে একটু বসুন। ওনাকে ছেড়ে দিয়ে বাকি আধটা ছেঁটে দেব। এরপর চেয়ারে বসিয়ে রঘুর চুলে হাত বোলাতে বোলাতে পঞ্চা বললে, স্যার, দু-একটা পেকেছে, দাড়ি কাটার আগে একটু রং মেরে দিই? শুধু কি সারা রাজ্য দেখবে আপনাকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলে কথা, সারা দেশের লোকও দেখবে যে!
আরও পড়ুন-অডিও ক্লিপে ফাঁস গরু পাচার করছেন বিজেপি বিধায়কের পুত্র, জড়িত নেতারাও
রঘুর মাথা ঘুরে চেয়ার থেকে শুধু পড়তে বাকি। যে পঞ্চা গত মাসে সেলুনে ক’টাকা বাকি থাকার জন্য রঘুকে গাল দিয়ে ভূত ভাগিয়ে দিয়েছিল আজ সেই পঞ্চার এ কী আদর-যত্ন! রঘু বুঝতে পারল সে কেউকেটা গোছের কিছু হতে চলেছে আর খবরটা ডিভিসির লকগেট থেকে ছাড়া গ্রাম-ভাসানো জলের মতো হড়হড় করে এসেছে এ-পাড়াতেও। সে চুল-দাড়ি-গোঁফ কেটে সেলুন থেকে এবার বের হবে। পঞ্চা পয়সার কথা তো কিছু বললই না, উল্টে স্যালুট ঠুকল তাকে। সত্যি বলতে কী, আনন্দে হাতের রোমগুলো নাচতে লাগল রঘুর।
আরও পড়ুন-আজ খুশির ইদ
[২]
বিকেল বেলায় নেতাদের আগমন হওয়ার কথা রঘুর ঘরে। ঘরে সেরকম পরিকাঠামো নেই, একদিকে তার গিন্নির বাতের কষ্ট আর নিজেরও হাতের ব্যথা। কিছু করতেই পারা যাবে না। পাশের দোকানের সাথে কথা বলে রেখেছে রঘু, পার্টির লোকজন এলে চা-ডিমটোস্ট দিয়ে আপ্যায়ন করতে। দোকানদার রঘুকে বলেই দিয়েছে সে টাকা পয়সা তার কাছে নিতে পারবে না।
এর মধ্যেও একটা খুশির হাওয়া খেলে গেল রঘুর মনে। পাশের বাড়ির প্রতিবেশী এতদিন তাচ্ছিল্য করত, হিংসে করত রঘুর বউকে, আজ দুপুরেই লাজলজ্জার মাথা খেয়ে ওদের বউ রঘুর গিন্নিকে একটু তেল দিয়ে গেল। বললে দিদি, কোনও কাজে লাগলে বলবেন, আমরা তো পাশেই আছি। ওদিকে মিনিটে মিনিটে আত্মীয়স্বজন বন্ধুদের ফোন আসতে লাগল তার ভাঙা মোবাইলে। ব্যাটারি চার্জ করে করে হয়রান। তার মধ্যে দশবার কারেন্ট গেছে। বিনি পয়সায় পেলে যা হয় আর কী! আত্মীয়দের কেউ বললে, এই সুযোগে তোমার ব্যাটার চাকরিটা হয়ে যাবে নিশ্চিত। একটু দেখবে আমার বেকার ব্যাটার কোনও হিল্লে হয় যদি। একজন বললে, আমার গিন্নির খুব ইচ্ছে তার ছবি টিভিতে যদি দেখাত! মধ্যাহ্ন ভোজনে পরিবেশনে যদি একটু জায়গা করে দাও।
আরও পড়ুন-করোনা নিয়ে সতর্ক স্বাস্থ্য দফতর
দশ বছর খবর না-নেওয়া ভাগনে ও কিপটে শালা টাকা-পয়সা লাগবে কি না জিজ্ঞাসা করল রঘুকে। ইতিমধ্যে দু’তিনটি মিডিয়া রঘুর দুয়ারে হাজির। বাইট চাই তাদের, হাজারো জিজ্ঞাসা। মুখের সামনে কলা খাওয়ানোর মতো মাইকটা রঘুর মুখে ধরল এক রিপোর্টার। জিজ্ঞাসা করল, স্পেশাল কী রান্না করবেন? আর এক রিপোর্টার জিজ্ঞাসা করল, কেমন লাগছে দাদা, এত হাই প্রোফাইল মন্ত্রী আপনার ঘরে খাবেন ভেবে?
এটা লাইভ টেলিকাস্ট হচ্ছিল। বউ দৌড়ে এসে রঘুকে একটা গেঞ্জি পরতে দিয়ে গেল। বলল, টিভিতে তোমাকে দেখাচ্ছে, তোমার মুখের সাথে তোমার জামার ছেঁড়া বগলও দেখাচ্ছে। এটা পরে নাও। তা দেখে এক মিডিয়া চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলতে লাগল, ক্যামেরাম্যানকে বলব দাদার ছেঁড়া জামার বগলটা একটু দর্শকদের দেখাতে!
আরও পড়ুন-বিজেপি ভুল বোঝায়, মিথ্যে বলে
এদিকে রাত দশটা পর্যন্ত পাখি-পড়া করে দলের রাজ্য সভাপতি থেকে স্থানীয় নেতারা বুঝিয়ে গেলেন কী রাঁধতে হবে আর কীভাবে সাধতে হবে। মেনু থেকে বাজার সব ওদের দায়িত্ব। যাক এ-খরচটা অন্তত বাঁচল। রঘু আসতে আসতে হালকা হতে থাকে। সব তো ওরাই করবে। ও বুড়ি-ছোঁয়া খেলার বুড়ি মাত্র। কাল নাকি ট্রায়াল হবে। স্থানীয় ক’জন খাবেন। তবে কিছু ব্যবস্থা ওরা রঘুকে করতে বলেছে। পরে হিসেব নিকেশ সুদ-সহ মিটিয়ে দেবে দল। কথায় কথায় এবার রঘু নেতাদের জিজ্ঞাসা করল, আমার ঘরে আপনাদের অত বড় নেতা-মন্ত্রী খেতে আসবেন, মানে আমাকে বাছা হল…।
আরও পড়ুন-গিরিরাজের নাটক, নিজের চিঠি নিজেকেই ফরোয়ার্ড!
রঘুর কথা কেড়ে নিয়ে বড় এক নেতা বললে, ওসব দলের কেন্দ্রীয় শাখা ঠিক করে। বড় কপাল আপনার! জানেন তো ভগবান যদি কোনও লোহাও ছুঁয়ে দেয় সেই লোহা কী হয়?
রঘু অনেক ভেবে বলল, মরচে পড়া লোহা হলে ভগবানের হাতে লালচে দাগ লেগে যাবে।
সেকথা শুনে একজন ফিসফিস করে বললে, ডাহা কালিদাস। মাথায় গোবরও নেই, শুকিয়ে ঘুঁটে হয়ে গেছে ব্যাটার। এবার প্রশ্নকর্তা বললেন, ভগবান লোহা ছুঁলে সেটা সোনা হয়ে যায়। কিছু বুঝলেন? দেশের অত বড় মন্ত্রী আপনার ঘরের চৌকাঠ ডিঙোলে কী হবে? বলতে পারি কপাল খুলে গেল হাঁ হয়ে।
রঘু আর কথা বাড়ায় না। বোকার মতো ঘাড় নাড়ে সে।
আরও পড়ুন-শিশুকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরাল পিজি
[৩]
কাল মন্ত্রীর খেতে আসার কথা। ঘরে খাবারদাবার জিনিসপত্র বোঝাই। দেখে মনে হচ্ছে মানিকপুরের সবজির বাজার ঘরে ঘাঁটি গেড়েছে। তারও বেশ কিছু ধার হয়ে গেছে রঘুর বিভিন্ন খরচে। ধারে কেউ না করেনি। ঘরের সামনে লোক গমগম করছে। এমন সময় ফোন এল পার্টি অফিস থেকে। কে একজন বললেন, তোর ঘরে মন্ত্রীর খাবার প্রোগ্রাম ক্যানসেল হয়ে গেছে রঘু। সম্বোধনে আপনি থেকে এক ঝটকায় তুই-এ নেমে এসেছে। বিস্ফারিত চোখে ঢোঁক গিলল রঘু। মাথায় বাজ পড়ল রঘুর। বউ মুষড়ে পড়ল তা শুনে। আমতা আমতা করে রঘু ফোনে জিজ্ঞাসা করে, ঠিক বুঝলুম না। ও-প্রান্ত থেকে বিরক্তির সুরে উত্তর এল, তোর ঘর মন্ত্রী খাবে মেসেজটা ভুলবশত তোর ঘরে গিয়েছিল। আসলে মন্ত্রী তোদের পাশের আদিবাসী পাড়ার রঘু মাণ্ডির ঘর যাবেন। ইংরেজিতে মাণ্ডির এম’টা ভুল করে এন হয়ে তোর নাম রঘু নন্দী হয়ে যায়। নন্দী আর মাণ্ডির সব অক্ষরই একই, শুধু ওই এম এন ছাড়া। আবার টানা লেখায় এম এন গুলিয়ে যায়, বোঝা যায় না। তাই রঘু মাণ্ডির চিঠি ভুল করে রঘু নন্দী ভেবে তোর ঘরে সব আয়োজন শুরু হয়। আমরাও বুঝতে পারিনি অতটা। শেষ মুহূর্তের রিভিউয়ে অবশ্য তা ধরা পড়েছে। উনি আদিবাসী পাড়ায় মাণ্ডিবাবুর ঘরে কাল মধ্যাহ্ন ভোজন করবেন। আমাদের লোক গিয়ে আমাদের কেনা জিনিসপত্র তোর ঘর থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসবে। পুরো মাল ফেরত দিবি।
আরও পড়ুন-ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ
রঘু বাক্রুদ্ধ হয়ে গেল। খবরটা চাউর হয়ে গেল নিমেষে। দেখতে দেখতে ঘরের সামনের ভিড় খালি হয়ে গেল। ক’টা কাক, কুকুর রোজ ঘুরঘুর করে এ-সময়। তারাও কিছু টের পেয়ে উধাও। রঘুর মনে হল সোনার একটা সিংহাসন হঠাৎ যেন মরচে ধরা লোহার হয়ে গেল। হিরো থেকে রঘু নিমেষে নামল জিরোর নিচে। ওদিকে সে-খবর বা সুখবর টিভিতে দেখে পাশের বউয়েরা আনন্দে নাচতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে সেলুন থেকে, খাবারের দোকান থেকে, সবজির দোকান থেকে বারবার মেজাজি ফোন আসতে লাগল রঘুর কাছে তাদের টাকা-পয়সা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য। একেবারে ল্যাজে-গোবরে অবস্থা। সুরাহা পেতে সে ফোন করল পার্টি অফিসে। ওরা রঘুকে চিনতেই পারল না। এক ছোট নেতা ধমকে বলল, মন্ত্রী আসবে সেই ঝামেলায় মরছি, রাখ দেখি ওসব কান্না। নিরুপায় হয়ে শালা, ভাগনেকে ফোন করল রঘু। কেউ ফোন আর ওঠাল না। কোনও ফোনই রঘুকে চিনতে পারছে না। রঘু মাথায় হাত দিয়ে মেঝেতে বসে পড়ল।