ডাঃ কাকলি ঘোষদস্তিদার: কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার (Siddaramaiah- Mamata Banerjee) শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধি হয়ে গিয়েছিলাম আমি। দলনেত্রী ওখানে আমাকে না পাঠালে বুঝতে পারতাম না বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভের বিস্ফোরণ কীভাবে জনজোয়ার হয়ে আছড়ে পড়েছে দক্ষিণ ভারতেও। বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের নমুনা আমরা ২০২১-এর নির্বাচনেই প্রত্যক্ষ করেছি। তৃণমূলের প্রতি মানুষের সমর্থনের ঝড়ে বিজেপি উড়ে গিয়েছে। এবার কর্নাটকেও বিজেপিকে বিদায় করে মানুষ বুঝিয়েছেন তাঁরা আগামিদিনে কী চান। ‘জাগোবাংলা’র পাঠকদের কাছে নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা তুলে ধরতেই তাই কলম ধরলাম।
কর্নাটকের মানুষ গণতান্ত্রিকভাবে মোদি বাহিনীর বিরুদ্ধে রায় দিয়ে গোটা দক্ষিণ ভারতকে বিজেপিমুক্ত করেছে। কর্নাটকে নির্বাচনের আগে আমাদের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Siddaramaiah- Mamata Banerjee) প্রকাশ্যে আবেদন রেখেছিলেন ‘নো ভোট টু বিজেপি’। ভোটের ফলেও তাই হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির দলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ ভারতের মানুষের ক্ষোভ এই জনরায়ে প্রতিফলিত। কর্নাটকে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার শপথে আমন্ত্রিত ছিলেন আমাদের দলনেত্রী। কিন্তু ওইদিন তাঁর পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি থাকায় অতি অল্প সময়ের নোটিশে তাঁর পক্ষে অনুষ্ঠানে থাকা সম্ভব হয়নি। সেজন্য তিনি আমাকে তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে বেঙ্গালুরু পাঠিয়েছিলেন। আমি কর্নাটকে পৌঁছেই অনুভব করলাম ভারতীয় জনতা পার্টির ধারাবাহিক অন্যায়-অত্যাচার-অপশাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত জনজোয়ার। যে জনজোয়ার আমরা বাংলায় একুশের নির্বাচনের আগে দেখেছিলাম, ঠিক একই চিত্র আমি দেখলাম দক্ষিণের ওই রাজ্যেও। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের স্টেডিয়াম জনসমুদ্রের চেহারা নিয়েছিল। মনে হচ্ছিল বিজেপির হাত থেকে মুক্তি পেয়ে মানুষ যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ততা দেখেই অনুভব করলাম দেশ থেকে বিজেপি বিদায়ের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন-২ হাজারের নোট নিয়ে চরম বিভ্রান্তি, ফর্ম ফিলাপ, পরিচয়পত্র কেন?
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধি হিসাবে যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে আয়োজকরা আমাকে নিয়ে যান। নিরাপত্তারক্ষী ছাড়াও একজন আইএএস অফিসার আমার সঙ্গে ছিলেন সবসময়। মঞ্চে অন্য আমন্ত্রিত বিশিষ্ট অতিথিরা ছিলেন, রাহুল-প্রিয়াঙ্কা সহ কর্নাটকের নবনির্বাচিত প্রতিনিধি ও অন্যান্য দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মঞ্চে নতুন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারকে আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঠানো উপহার তুলে দিলাম। সিল্কের উপর কাঁথার কাজ করা শাল পাঠিয়েছিলেন দলনেত্রী। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা জানালাম কর্নাটকের নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে। আমি তাঁকে বললাম, অতি অল্প সময়ের নোটিশের কারণে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করে আসতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া বাংলায় ঝড়বৃষ্টির কারণে সাধারণ মানুষের যদি কোনও সমস্যা হয়, তাই তিনি রাজ্য ছেড়ে আসেননি। তাঁর বার্তা নিয়ে আমি এসেছি। সিদ্দারামাইয়াকে বললাম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং আপনার সাফল্য এবং সুস্বাস্থ্য কামনা করেছেন। একথা শুনে কর্নাটকের নতুন মুখ্যমন্ত্রী বললেন, শুক্রবার রাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়েছে। তিনি নিজেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। নিজে না আসতে পারলেও আপনাকে যে পাঠাচ্ছেন সে কথাও আমাকে জানিয়েছেন। আমি তখন সিদ্দারামাইয়াকে বললাম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিশ্চয়ই পরে আসবেন কর্নাটকে।
আমার এই কয়েক ঘণ্টার সফরে ওখানে আমি খুব আন্তরিক আপ্যায়ন পেয়েছি। দক্ষিণ ভারতের ওই রাজ্যে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আমার প্রত্যক্ষ উপলব্ধি : বিজেপির অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে রায় দিয়েছেন জনগণ। আর কর্নাটকে পৌঁছে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমি অনুভব করলাম, ভারতবর্ষের সর্বত্র মমতা’দির জন্য অসম্ভব সমীহ এবং সম্মান রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সবাই গ্রহণ করেছেন। এর আগেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূত হয়ে আমি বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। সব জায়গাতেই আমি অনুভব করেছি ওঁর রাজনৈতিক সংগ্রাম আর মানুষের পাশে থাকার মানসিকতার জন্য মানুষের কী শ্রদ্ধা আর সম্ভ্রম রয়েছে আমাদের নেত্রীর প্রতি।