প্রতিবেদন : রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, প্রকাশ্যে হিংসা চলছে। বুধবার নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এভাবেই বিজেপিকে ধুয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, তৃণমূল কংগ্রেস পরিবারকে অপমান করা হলে ছেড়ে কথা বলব না। আমার পরিবারের সম্পত্তি নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, মুখ্যসচিবকে দায়িত্ব দিয়ে বলেছি তদন্ত করে দেখুন, কোনও বেআইনি কিছু থাকলে বলেছি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিন। আমাকে জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বিধ্বংসী মেজাজে। একাধিক বিষয় তুলে ধরে এদিন বিজেপিকে তুলোধোনা করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন-ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানিয়ে শহর নামবে রাজপথে, আজ মহামিছিল
প্রকাশ্যে হিংসা : আমি রাজনীতিতে এসেছি সমাজসেবা করার জন্য, আমি এই নোংরা রাজনীতি পছন্দ করি না, ব্ল্যাকমেলিংয়ের রাজনীতি শুরু হয়েছে এখন। প্রতিহিংসা নয়, প্রকাশ্যে হিংসা চলছে। সাফ কথা নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর কথায়, ওরা বলছে সব কয়লার টাকা কালীঘাটে যাচ্ছে। ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, কার কাছে? মা কালীর কাছে? নামটা বলুন না একবার। কয়লা কার দায়িত্বে? সীমান্ত কার দায়িত্বে? উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার হয়ে গরু আসছে।
১১ বছর আগে কী হয়েছে? আগের খোঁজ নিন। ক্ষোভের সঙ্গে বলেন তিনি। তাঁর সংযোজন, এখন এসব অনেক কমে গেছে। মনে রাখবেন, সব মানুষকে ওরা কিছুক্ষণের জন্য বোকা বানাতে পারবে, সবসময়ের জন্য পারবে না। বিএসএফ, সিআইএসএফ দায়িত্বে রয়েছে। সব টাকা দিল্লিতে নিয়ে যাবে ট্রাঙ্কে করে আর দোষ হবে আমাদের?
আরও পড়ুন-ইউনেস্কোর স্বীকৃতিতে বাড়তি উৎসাহ মেক্সিকোতে
সম্মানহানি করবেন না : অসত্য-কুকথা বলে চলেছে সংবাদমাধ্যম। কয়েকজন লোককে ডেকে এনে টাকা দিয়ে আপনাদের মন্তব্যকে সমর্থন করানো হয়। সব কিছু সূত্রে জানা গিয়েছে? কীসের সূত্র? প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর। যখন তখন অর্ধসত্য বলছেন। যাকে-তাঁকে বোকা বানাচ্ছেন। মনে রাখবেন আপনার যেমন সম্মান আছে, তারও আছে। এরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দেন, তৃণমূল পরিবারকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করলে আমরা ছেড়ে কথা বলব না। মানুষকে ভালবাসি বলে এত কাদা সত্ত্বেও লড়াই করছি।
আরও পড়ুন-গরিব প্রকল্পে কোপ
বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিন : আমরা নির্বাচন কমিশনকে আমাদের সব সম্পত্তির হিসেব দিই। আমি তো কখনও সরকারের থেকে আমার প্রাপ্য টাকাটাও নিইনি। তারপরও আমাকে আপনাদের হিসেব দিতে হবে? যাঁদের রং ময়লা তারা কয়লা কয়লা করে। সাফ কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এরপরই ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সব সংবাদমাধ্যমে বিজেপির লোক বসে আছে। তারা ঠিক করে দেয় কোন দিন কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আপনারা বলছেন মমতার পরিবারের লোকজন সরকারি জায়গা দখল করেছে। মুখ্যসচিবকে দায়িত্ব দিলাম, তদন্ত করে দেখুন, যদি কেউ জায়গা দখল করে বসে থাকে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিন। আমার অনুমতির দরকার নেই। স্পষ্ট বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর সংযোজন, আমি যেখানে থাকি সেটা রানি রাসমণির জায়গা, ঠিকা জায়গা। নিজস্ব জায়গা নয়।
আরও পড়ুন-বদলাচ্ছে ভারতীয় নৌবাহিনীর পতাকা
আমি সেটিং করি না : সিপিএমের ৩৪ বছরের একটা আলমারি দেখান যেখানে তথ্য দেখা যাবে। বিকাশবাবু তাঁর আমলে বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে ডিটেল জানাবেন। কলকাতায় জল জমলে উনি কলকাতায় থাকতেন না। তীব্র কটাক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি বলেন, আজ আপনি আমার পরিবারকে টার্গেট করলে আমি আইনিভাবে লড়ব যদিও এখন আইনি লড়াটাও কঠিন। তবে আইনের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। আমি সেটিং করি না, আমাকে সেটিং করার জন্য অনেকে বসে থাকে। অনেক কংগ্রেস নেতা সেটিং করেছে, একাজে আমি ফিট নই। মানুষ যেদিন চাইবে আমি সরে যাব সাধারণ মানুষ যেদিন চাইবে না আমি থাকব না। আমি ১ ঘণ্টায় রেলমন্ত্রীর পদ ছেড়েছি, ক্রীড়ামন্ত্রক ছেড়েছি। স্পষ্ট বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর কথায়, আমি এখনও শিক্ষানবিশ, প্রতিদিন শিখি।
আরও পড়ুন-সাবেক সোভিয়েতের শেষ প্রেসিডেন্ট গর্বাচেভ প্রয়াত
আমার লেখা নিয়ে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে। মনে রাখবেন, ছোটদের জন্য লিখতে গেলে ছোট হতে হয়, এরজন্য আমি পয়সা নিই না। আমি গান লিখলে ব্যঙ্গ করা হয়, আপনিও লিখুন, আপনাকে কে লিখতে বারণ করেছে। সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপিকে কটাক্ষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
বিষয় চাকরি : এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা আমার আছে। আমাদের মন্ত্রীদেরও আছে। বগটুইতে ১১ জনকে চাকরি দিয়েছি। অসহায় অবস্থায় পড়া মানুষকে সাহায্য করতে পারলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি।
আরও পড়ুন-অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে ঠেলাগাড়িতে অন্তঃসত্ত্বা, স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন স্বামী
এদিন কলকাতা টিভির অফিসে ইডির রেইড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আমি জানি না কৌস্তুভের কী আছে৷ তবে যতদূর জানি ও যথেষ্ট লড়াকু। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের সময় ওরা একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে। অনেকে মাথা বিকিয়ে দেয়, অনেকে দেয় না। সবাইকেই থ্রেট করছে ওরা৷ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকা উচিত, স্পষ্ট বক্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
নতুন প্রজন্ম : চিরদিন কেউ থাকে না। তাই নতুন প্রজন্ম তৈরি করে দিয়ে যাচ্ছি। মানুষ না চাইলে সরে যাব।