মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন যেন সাধারণ কবিতাও নয়

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঔপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কবিতাও লিখতেন। সেই সাক্ষ্য দেয় অপ্রকাশিত দুটি কবিতার খাতা। কবিতা তাঁর গদ্যের চেয়ে প্রাচীন। বিভিন্ন উপন্যাসে এঁকেছেন কবি-চরিত্র। প্রকৃত অর্থে তিনি ছিলেন কবিতাপ্রাণ। ১৯ মে ছিল জন্মদিন। তাঁকে স্মরণ করলেন ঋত্বিক মল্লিক

Must read

‘দিবারাত্রির কাব্য’ প্রসঙ্গে বুদ্ধদেব বসুর মনে হয়েছিল, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলনায় ‘‘কম পাকা লেখা’’, আবার ওই একই লেখা প্রসঙ্গে তাঁর মনে হয় ‘‘তাকে একটি দীর্ঘ কবিতা বললে অত্যুক্তি হয় না’’। বুদ্ধদেব বসুর ভাবনার এমন বৈপরীত্য এবং দ্বিধা স্বাভাবিক, কারণ ফর্মের বেড়াগুলোকে অস্পষ্ট করে তোলার এমন নজির তখন খুব বেশি ছিল না। উপন্যাসের নামের মধ্যেই ‘কবিতা’ বা ‘কাব্য’ শব্দের ব্যবহার দেখেছি, বেশ কাছাকাছি সময়ে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’ এবং মানিকের এই ‘দিবারাত্রির কাব্য’র ক্ষেত্রে। ‘বঙ্গশ্রী’ পত্রিকায় যখন প্রকাশিত হচ্ছিল তখন এর শিরোনাম ছিল ‘একটি দিন’, পরে সে শিরোনাম বদলে হল ‘দিবারাত্রির কাব্য’। পত্রিকাপাঠে ছিল না কোনও কবিতা।

আরও পড়ুন-জামাই-বন্দনা

১৯৩৫ সালে উপন্যাসটির ডি এম লাইব্রেরি-র সংস্করণে তিনটি ভাগের ভূমিকায় তিনটি কবিতা যুক্ত হল। এ-ছাড়াও বিভিন্ন অনুষঙ্গে এসেছে এই কবিতা আর বাস্তবের সংঘাত আর মিলনের কথা। ‘দিবারাত্রির কাব্য’য় হেরম্বকে আনন্দ বলেছিল, ‘‘তুমি আমার কবি। কবি না হলে কেউ এমন ঠাণ্ডা হয়?’’ হেরম্ব-প্রসঙ্গে এই উপন্যাসের কথক এক জায়গায় বলেছে, ‘‘আজ পর্যন্ত হৃদয়ের কাব্যপিপাসা অব্যাহত রয়ে গেছে’’। কাব্যপিপাসার কথা আবার আসছে ব্যাধির সঙ্গে মিলিয়ে, আনন্দের সংস্পর্শে এসে হেরম্ব অনুভব করে ‘‘কাব্যকে অসুস্থ নার্ভের টঙ্কার জেনেও আজ পর্যন্ত তার কাব্যপিপাসা অব্যাহত রয়ে গেছে।’’ একটি কবিতার জন্মকে হেরম্ব সন্তানপ্রসবের সঙ্গে তুলনা করে। হেরম্ব যখন জানায় সে তার স্ত্রীকে সুপ্রিয়ার কথা জানায়নি, তখন সুপ্রিয়ার মনে হয়, ‘‘যে জীবনকে সে মহাকাব্য বলে জেনে রেখেছিল সে একটা সাধারণ কবিতাও নয়’’।

আরও পড়ুন-অসাধারণ বর্ণনার পাশাপাশি সংলাপ রচনাতেও পারদর্শী

মোটামুটি যে সময় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখছেন ‘দিবারাত্রির কাব্য’র আদি পাণ্ডুলিপি, তার কিছু আগেই একটি খাতায় লিখে ফেলেছিলেন বেশ কিছু কবিতা। সেদিক থেকে, তাঁর কবিতা তাঁর গদ্যের চেয়ে প্রাচীন, যদিও বেশি সংখ্যক কবিতাই অপ্রকাশিত।
মানিকের মৃত্যুর এক যুগেরও বেশি সময় কেটে যাওয়ার পর ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয় ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা’, যুগান্তর চক্রবর্তীর সম্পাদনায়। হেরম্ব-প্রসঙ্গে যে ‘কাব্যপিপাসা’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছিল, সেই কাব্যপিপাসারই একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায় তাঁর কবিতায় এইভাবে :
এই পিপাসাতেই কি পড়ি নি বিজ্ঞান
জীবনের মানে খুঁজি নি টেস্ট টিউবে
বস্তু মিশ্রণের প্রতিক্রিয়ায়,
অঙ্কে ছকি নি জীবন, আলোর গতিবেগ,
চতুর্থ বিশ্ব খুঁজি নি মনের বিশ্লেষণে?
মনের মতো মানের মায়ায় আজও খোঁজার ভান করা,
কবিতা লেখা স্থগিত রাখা,
আর কি সাজে?

আরও পড়ুন-পরা যাবে না জিন্স, টিশার্ট, লেগিংস: অসমে ফতোয়া জারি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের

এই বস্তুতান্ত্রিক শিক্ষা থেকে মনের ছকে তাকে মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা থেকেই উপন্যাসের চরিত্রের মতো নিঃসঙ্গ হতে থাকে মানিক। কৈশোরে মাকে হারানো তাঁর জীবন ছিল আনেকটাই যাযাবরের মতো। বাবার বদলি চাকরির কারণে ছোটবেলায় থিতু হতে পারেননি। কিন্তু পিতা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অন্যান্য ভাইয়ের সাফল্যর ভিতরে মধ্যবিত্ত জীবনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর তার ক্ষয় ও শূন্যতার বোধ চারিয়ে যায় মানিকের ভিতর। বাস্তব জীবনের এইসব অভিজ্ঞতা তাঁকে নিঃসঙ্গ জীবনের দিকে ঠেলে দেয়। এই নিঃসঙ্গতাবোধ থেকেই তৈরি হতে থাকে তাঁর কবিতা, উপন্যাসে যার ছায়া পড়েছিল আখ্যানের আড়ালে। এই সময়েই গোটা চরিত্র নয়, মানিকের ভাষায়, চরিত্রের এক-একটা প্রোজেকশান তৈরি হতে থাকে। ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’য় শশী কবিতা লেখে না বটে কিন্তু কুমুদ লেখে। শশী প্রশ্ন করে কুমুদকে, “কবিতা লিখিস, অ্যাঁ?” কুমুদ বলে, “না, ঠিক মতো বাঁচতেই জানি না, কবিতা লিখব! লিখতে লজ্জা করে।”

আরও পড়ুন-অভিষেককে বলেই রেশন পেলেন সমীর

আবার ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসে মাঝিপাড়ার সবার মধ্যে একমাত্র হোসেন মিয়াই পূর্ণ ও দীর্ঘ বাক্য ব্যবহার করে তার কারণ সে ব্যক্তিচরিত্র, অন্য চরিত্রগুলোর মতো শ্রেণিচরিত্র নয়। সে যখন গান বাঁধে তখনও সে গানের পঙ্‌ক্তি হয় দীর্ঘ এবং জটিল: ‘আঁধার রাইতে আসমান জমিন ফারাক কইরা থোও / বোনধু, মত ঘুমাইবা।’ হোসেন মিয়া খুশি হলে মুখে মুখে গান বাঁধতে পারে। এইখানে লক্ষ্য করুন ‘খুশি’ বা ‘খুশ’ শব্দটি। পদ্মানদীর ধারে বাস করা যে ক’জন মাঝির দেখা পেলাম উপন্যাসে— কুবের, রাসু, আমিনুদ্দি— এরা কখনও খুশি হয় না। এদের জীবনে তেমন আনন্দ নেই। জৈবিক আনন্দও হারিয়ে যায় জৈবিক তাড়নায়। তাই ‘খুশ’ শব্দ দিয়ে একদা পদ্মানদীর মাঝি হোসেন মিয়া নিজেকে আলাদা করেন অন্যান্য মাঝিদের থেকে। এই প্রসঙ্গে সরোজ দত্তর পর্যবেক্ষণ হল, “যে শব্দভাণ্ডার গানটিতে ব্যবহৃত, বোঝা শক্ত নয়, তার মধ্যে পূর্ব বাঙ্গলায় (এখন বাঙ্গলাদেশ) ব্যবহৃত শব্দসমষ্টি এবং সেখানকার কথনরীতিরই প্রাধান্য। কিন্তু পূর্ববাঙ্গলা বা এখনকার বাংলাদেশে অনেকগুলি আঞ্চলিক ভাষা আছে; মিলিয়ে দেখলে গানটির মধ্যে যশোহর, খুলনা, ফরিদপুর, ঢাকা, মৈমনসিংহ, শ্রীহট্ট, কুমিল্লা ইত্যাদি বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যবহৃত শব্দ ও কথনরীতির প্রয়োগ দেখা যায়।

আরও পড়ুন-উত্তর সিকিমে ধসে আটক পর্যটকদের উদ্ধার

ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে ব্যবহৃত শব্দসমূহ এভাবে মিলে মিশে যায় তখনই, যখন অত্যন্ত জনপ্রিয়তার সূত্রে গানটি নানা অঞ্চলে মানুষের মুখে মুখে ফিরতে থাকে। তাতে অবশ্য মূল রচনা অনেক সময় পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। হোসেনের মুখের এই গানটির সে সৌভাগ্য ঘটে থাকলে প্রাচীন লোকগীতি সংগ্রহের কোনও না কোনও সংকলনে গানটিকে পাওয়া যেত। অতএব বুঝে নিতে বাধা নেই গানটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজেরই রচনা। উপন্যাসে নিজের উদ্দেশ্যটিকে প্রয়োগ করবার জন্য যেমন ঔপন্যাসিকের এই গান রচনা, তেমনি হোসেন মিয়ার চরিত্র সৃষ্টি।” মাঝিপাড়ায় অবশ্য আর-একজন আছে, যে পূর্ণ বাক্য ব্যবহার করে। তবে হোসেন মিয়ার মতো দীর্ঘ কথা, বেশি কথা সে বলে না। সে কপিলা। কপিলা হাসে, মজা পায় : তাহার আকস্মিক হাসির শব্দে কুবের ভয়ে আধমরা হইয়া যায়। …বলে, খাটাশের মতো হাসিস ক্যান কপিলা। আঁই? কপিলার কথাগুলো খুব দীর্ঘ নয় বটে, তবে হেঁয়ালিতে ভরা : কপিলা বলে, “ডরাইছিলা, হ? আরে পুরুষ!” উপন্যাসের কথক বলে, “বিকালে পদ্মার ঘাটে নৌকার তদবির করিতে গিয়া কুবেরের আরও মন-কেমন করিতে থাকে। কাব্যের মসৃণ মার্জিত মন-কেমন করা নয়, তার ভীরু প্রকৃতির সঙ্গে যতখানি খাপ খায় ততখানি দুরন্ত মানসিক অস্থিরতা।” মানিকের কবিতায় এই দুইয়ের মধ্যে চলাচলের প্রয়াস লক্ষণীয়।

আরও পড়ুন-সম্মুখসমরে কেজরি–কেন্দ্র, অধ্যাদেশের পর এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল দুই পক্ষ

তবে শুধু হেরম্ব নয়, মানিকের উপন্যাসে অনেক চরিত্রই কবি। প্রথম দিকের এই উপন্যাসগুলির প্রকাশের দীর্ঘদিন বাদে, প্রায় শেষ জীবনের একাধিক উপন্যাসে এই রকম চরিত্রের দেখা মেলে। ১৯৫১ সালের জুন মাসে প্রকাশিত ‘স্বাধীনতার স্বাদ’ উপন্যাসে দুটি কবি চরিত্র আছে— মনসুর ও গোকুল। মনসুর যেন নজরুলের আধুনিক সংস্করণ, কিন্তু সারল্য আর জটিলতার মেলবন্ধন করতে গিয়ে কবিতা উতরোয় না। গোকুলের একটা কবিতা আছে যেটা লেখা হয়েছে কারখানায় ধর্মঘট আর গুলি চলা নিয়ে। নিজের কবিতা সম্পর্কে গোকুল বলে, “প্রাণে আমার আগুন ধরে গেল। রাত্রে কবিতা লিখতে বসলাম, প্রাণের সেই আগুনকে একটি কবিতায় পরিণত করব … অনেক বেলায় উঠে চা-টা খেয়ে কবিতাটা পড়ে নিজেকে চাবকাতে ইচ্ছে হল … কি উপমা, কল্পনার কি তেরচা গতি”। আসলে এই যে গোকুলের কবিতার মধ্যে মতবাদের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, তা যেন ছায়া ফেলল মানিকের নিজের কবিতাতেও। ‘ছন্দপতন’ উপন্যাস তো যেন পৃথিবীতে কবির অস্তিত্ব আর কবিতা লেখা নিয়ে এক নিবন্ধ। এই উপন্যাসের দুটো কবিতা স্থান পেয়েছে ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা’য়।
তাঁর কবিতার খাতায় দুটি কবিতার কথা বলব আলাদা করে। এই দুটি কবিতা মধ্যে রয়েছে দুই মহাকাব্যের অনুষঙ্গ অথচ সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি অ্যাপ্রোচ, কবিতার অবস্থিতিও ভিন্ন সময়ের প্রেক্ষিতে।

আরও পড়ুন-শ্রমিকদের দেওয়া হবে পুনর্বাসন

১.
কবিতার সঙ্গে মজুরের অমিল।
কবিতা অবসরের জ্বর ব্যারাম,
না-খেটে যার চলে তার সখের খাটুনি।
বনের উইপোকা বাল্মীকিকে খায়নি,
উই কাঠ খায়,
উই, কোটি কোটি উই,
গাছের গুঁড়ির মতো নকল রক্তমাংসের তপস্বী দেখেই
টের পেল,
চারদিকে গড়ল মাটির দুর্গ।
এখনো তাই,
বেঁচে আছে বাল্মীকি!

আরও পড়ুন-শ্রমিকদের দেওয়া হবে পুনর্বাসন

২.
… সাঁঝে দীপ জ্বলেনি ওই ভাগাড়ে,
ওই সারি সারি কুঁড়েতে,
ছ’টা আটটা বর ঘেঁষাঘেঁষি শুয়েছে,
একটি কনে নিয়ে,
কে জানে সে কার বৌ, জননী কার সন্তানের!
ওখানে পাণ্ডবের পরাজয়,
পরাজয় দ্রৌপদীর বাস্তব আপোসেরও …

আরও পড়ুন-বিশ্বকাপ বয়কট করছে না পাকিস্তান

মানিক মোট দুটি খাতায় কবিতা লিখেছেন। একটি খাতা, আগেই বলেছি, লেখক-জীবনের একেবারে গোড়ায় লেখা, রচনাকাল ১৯২৪ থেকে ১৯২৯। আর-একটি খাতা অনেক পরে লেখা কবিতায় ভরা। বস্তুত পক্ষে এই খাতাটিকে পাণ্ডুলিপির এক খসড়া বলা যেতে পারে। নামপত্রে লেখা আছে: ‘ভাঁড়ার খাতা/১লা আষাঢ় ১৩৫৩ থেকে সঞ্চয় শুরু’। মানিকের জীবনের শেষ আট-দশ বছরে লেখা কবিতাগুলি।
ততদিনে ব্যাধি আক্রমণ করেছে, ১৯৩৭ সালে দাদাকে লেখা চিঠিতে জানাচ্ছেন “…মাথার অসুখে ভুগিতেছি, মাঝে মাঝে অজ্ঞান হইয়া যাই”, আবার মৃগীসংক্রান্ত নোটে লিখছেন যে এই ব্যাধি তাঁর সূক্ষ্মতম বিশ্লেষণের এবং অসাধারণ কল্পনাশক্তির দরজা খুলে দিচ্ছে। এর সঙ্গে মদ্যপানের দুর্মর আসক্তি আর চরম দারিদ্র্য। সন্তান মারা যাওয়ায় দুঃখের চেয়ে যেন স্বস্তি পাচ্ছেন বাড়তি অর্থনৈতিক বোঝা টানতে হবে না ভেবে। এর সঙ্গে দর্শন আর মতবাদের দ্বন্দ্ব।

আরও পড়ুন-টানা ৯ঘণ্টা ৪০মিনিট জিজ্ঞাসাবাদ, বেরিয়ে এসে অভিষেকের তোপে বিধ্বস্ত বিজেপির এজেন্সি রাজনীতি

১৯৪৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিলেও সাহিত্যের ক্ষেত্রে অন্তত ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তাঁর উপর কোনও আমলাতান্ত্রিক চাপ ছিল না। কিন্তু অসুখ, নেশা আর দারিদ্র্যের সঙ্গে যখন সৃষ্টিক্ষমতাহীন পার্টি-আমলারা সাহিত্য নিয়ে নির্দেশ দিতে লাগলেন, এই যুগপৎ আক্রমণে শেষ হয়ে গেলেন মানিক। সারা জীবনের বহুস্তরীয় দ্বন্দ্বের শিল্পগত প্রকাশ করতে চাওয়া থেকেই কবিতা লেখা। তিনি নিজে অবশ্য বলেছিলেন যে “ঔপন্যাসিক হওয়াটাই” তাঁর পক্ষে “হবে উচিত ও স্বাভাবিক”, কারণ উপন্যাসের বিরাট আয়তনে জীবনের নানা রং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। আর যখন অস্তিত্বের থেকেও বড় হয়ে উঠে মাথা চাড়া দেয় অস্তিত্বের গভীর সংকট, বাঁচতে চেয়ে মৃত্যুর স্পর্শই যখন টের পাওয়া যায় বেশি, তখন এই দুই বিপরীত অনুভূতির মধ্যে কবিতা অনিবার্য হয়ে ওঠে মানিকের কাছে।

আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন সিদ্দারামাইয়া

মানিকের সিদ্ধি নিঃসন্দেহে উপন্যাসে, গল্পে— কিন্তু এরই মধ্যে জীবনকে কবিতার রূপকে দেখতে চান তিনি আর তাঁর চরিত্রেরা। আবার হেরম্ব-র কথায় ফিরি, “কবির খাতা ছাড়া পৃথিবীর কোথাও যে কবিতা নেই, কবির জীবনে পর্যন্ত নয়, তার এই জ্ঞান পুরনো। কিন্তু এই জ্ঞান আজও যে তার অভ্যাস হয়ে যায়নি, আজ হঠাৎ সেটা বোঝা গেছে”। একই অবস্থা হেরম্ব-র স্রষ্টারও। প্রেসিডেন্সি কলেজের মেধাবী ছাত্র থেকে স্বেচ্ছায় বেছে নেওয়া এমন এক এলোমেলো জীবন যাকে কবিতার খাতা থেকে তুলে আনতে চেয়ে ফেলে গেলেন জীবদ্দশায় অপ্রকাশিত দুটি কবিতার খাতায়।

 

Latest article