নীল নির্জনে

দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আছে কয়েকটি সুন্দর ও জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত। কোথাও সমুদ্র উত্তাল, কোথাও শান্ত। নীল নির্জনে নোনা ঢেউ ছুঁয়ে কয়েকদিন কাটিয়ে আসা যায়। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

কী নেই ভারতে? আছে জঙ্গল, সমুদ্র, পাহাড়, মরুভূমি। তার মধ্যে বহু মানুষ পছন্দ করেন সমুদ্র তীরে সময় কাটাতে। পুরী, দিঘা তো জলভাত হয়ে গিয়েছে বাঙালির। এই দুই সৈকতের (sea beach) পাশাপাশি আমাদের দেশে আছে আরও কিছু সুন্দর এবং জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত। প্রায় প্রতিটি সমুদ্র সৈকতেই সারা বছর দেখা যায় পর্যটকদের ভিড়। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। কোথাও সমুদ্র শান্ত, কোথাও উত্তাল। সাপের ফণার মতো ঢেউ তুলে তীরে আছড়ে পড়ে। কোথাও নামা যায় জলে, আদর নেওয়া যায় নোনা ঢেউয়ের। কোথাও সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হয় পাশে দাঁড়িয়ে। সমুদ্র তীরে কোথাও আছে জঙ্গল, পাহাড়। কোথাও চেনা-অচেনা গাছের সারি। বিক্ষিপ্ত মন শান্ত হয়ে যায় অশান্ত সমুদ্রের কাছে এসে। আবার কেউ কেউ বাঁচার মানে খুঁজে পান সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জনে। কোনও সমুদ্র সৈকতে দেখা যায় জনসমাগম, কোনও সমুদ্র সৈকত নির্জন, নিরিবিলি। দেশের কয়েকটি জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকতের তালিকা দেওয়া হল। পছন্দমতো ঘুরে আসতে পারেন।

মেরিনা সমুদ্র সৈকত, তামিলনাড়ু : মেরিনা সমুদ্র সৈকত (sea beach) তামিলনাড়ু রাজ্যের চেন্নাই শহরের একটি প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত। বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত। উত্তরের সেন্ট জর্জ দুর্গ থেকে দক্ষিণে ফোরশোর এস্টেট পর্যন্ত বিস্তৃত। এর মোট দৈর্ঘ্য ৬ কিলোমিটার। এটাই দেশের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক শহরকেন্দ্রিক সমুদ্র সৈকত। মেরিনা সৈকত মূলত বালুকাময়। এখানে সমুদ্র দারুণ উত্তাল। তাই এই সৈকতে স্নান এবং সাঁতার কাটা বিপজ্জনক এবং আইনত নিষিদ্ধ। দেশের অন্যতম জনবহুল এই সমুদ্র সৈকতে সপ্তাহের দিনগুলিতে প্রতিদিন প্রায় ৩০,০০০ পর্যটক আসেন। গরমে ও বর্ষায় দেখা যায় বেশি লোকসমাগম।
রাধানগর সৈকত, হ্যাভলক দ্বীপ : আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের হ্যাভলক দ্বীপে অবস্থিত রাধানগর সমুদ্র সৈকত। ভারতের সবচেয়ে সুন্দর সৈকতগুলির মধ্যে একটি। শুধুমাত্র সমুদ্র দেখার জন্যই বিখ্যাত নয়, এই সৈকত সবুজ বনে ঘেরা। রাধানগর সৈকতটিকে সাধারণত সৈকত নম্বর ৭ বলা হয়। আন্দামান ঘুরতে গেলে হ্যাভলক দ্বীপে যেতে হবেই। সেইসঙ্গে ঘুরে দেখতে হবে রাধানগর সমুদ্র সৈকত।

ওম বিচ, কর্নাটক : দেশের অন্যতম জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত (sea beach) হল কর্নাটকের ওম বিচ। সমুদ্র সৈকতটি দেখতে অনেকটা ওম চিহ্নের মতো। তাই হয়তো এইরকম নামকরণ। সারা বছর বহু পর্যটক ভিড় জমান, বন্ধুতা পাতান ছোট-বড় ঢেউয়ের সঙ্গে। এই সমুদ্র সৈকতে একবার এলে বারবার আসতে ইচ্ছে করবে। সৈকতে বেড়ানোর পাশাপাশি ওম বিচ ভিউ পয়েন্টে হাইকও করা যায়।

আরও পড়ুন-ধনকুবেরদের ভারত ছাড়ার হিড়িক অব্যাহত, বলছে সমীক্ষা

অস্তরঙ্গ সমুদ্র সৈকত, ওড়িশা : ওড়িশার অন্যতম সুন্দর সমুদ্র সৈকত অস্তরঙ্গ সমুদ্র সৈকত। অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের উপকূলে। এই সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখতে দারুণ লাগে। তীরে উড়ে বেড়ায় নানা ধরনের পাখি। শুধু পর্যটকদেরই নয়, অস্তরঙ্গ সমুদ্র সৈকত ফোটোগ্রাফার এবং বার্ড ওয়াচারদের খুব পছন্দের জায়গা।

বাটারফ্লাই বিচ, গোয়া : পালোলেম সৈকতের উত্তরে অবস্থিত গোয়ার বাটারফ্লাই বিচ। এই বিচকে হিডেন জেম বা লুকানো রত্ন বলা হয়। বাটারফ্লাই বিচ নামকরণ কেন হয়েছে? কারণ এখানে বেশ কয়েকটি বিদেশি প্রজাতির অপরূপ সুন্দর প্রজাপতি উড়তে দেখা যায়। সমুদ্র সৈকতটি অর্ধবৃত্তাকার। এখানে ডলফিন দেখার সুযোগ রয়েছে। চাইলে নৌকা বা ট্রলারের মাধ্যমে সমুদ্রের বেশ খানিকটা ভিতরে ঘুরেও আসা যায়।

সেরেনিটি বিচ, পুদুচেরি : পুদুচেরি বেড়াতে গেলে সেরেনিটি বিচ অবশ্যই দেখবেন। সেন্টার থেকে প্রায় ১০ কিমি দূরে অবস্থিত এই সৈকত। নির্জন, নিরিবিলি। বেশির ভাগ সময়েই এই বিচটি প্রায় জনশূন্য থাকে। সমুদ্র তীরে বসে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা পাম গাছের দিকে চোখ রাখা যায়। তখন মন চলে যায় অন্য কোথাও। সেরেনিটি বিচ থেকে পুদুচেরির ফ্রেঞ্চ কলোনি খুব বেশি দূরে নয়। চাইলেই ঘুরে আসা যায়।
মারারি বিচ, কেরল : কেরলের আলেপ্পির কাছে অবস্থিত মারারি বিচ। কেরলের ব্যাক ওয়াটার পর্যন্ত পৌঁছনোর জন্য অন্যতম সেরা জায়গা। ভিড়ভাট্টা খুব বেশি নেই। নির্জন নিরিবিলি শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে বিশ্রাম নিতে যেতে চাইলে এই বিচ আদর্শ জায়গা। কাছেই আছে মাছ ধরার গ্রাম। দেখা যায় নারকেল, খেজুর গাছের সারিবদ্ধ সৌন্দর্য। আছে অনেকগুলো আয়ুর্বেদিক ম্যাসাজ কেন্দ্র। চাইলে ঘুরে আসা যায়।

দাদনপাত্রবাড়, পশ্চিমবঙ্গ : দিঘা, বকখালি, গঙ্গাসাগর, মন্দারমণি, তাজপুরের নাম সবাই জানেন। তবে খুব বেশি মানুষ জানেন না দাদনপাত্রবাড়ের নাম। বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত এই সমুদ্র সৈকত। মন্দারমণির খুব কাছেই। বাসে চাউলখোলা নেমে যেতে হয়। কলকাতা থেকে আনুমানিক ১৮০ কিলোমিটার দূরে। এই জায়গার আছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব। একসময় এখানে ছিল লবণ কারখানা। এখন আছে মাছের বাজার। নির্জন নিরিবিলিতে সমুদ্রের সঙ্গে মেতে ওঠা যায় আলাপচারিতায়। ভেজানো যায় পা। কেউ কেউ স্নান করেন। তীরে আছে ঝাউবন, তালবন। আশপাশে গড়ে উঠেছে নানা আধুনিক রিসর্ট, হোটেল। চাইলে দিন দুই সময় কাটিয়ে আসা যায়।

Latest article