সিনেমা হোক বা সিরিজ, গোয়েন্দা কাহিনিকে দর্শকের দরবারে হাজির করতে বর্তমানে টালিগঞ্জে প্রযোজকদের সবচেয়ে ভরসার পাত্র বোধহয় পরিচালক অরিন্দম শীল! যশ্বস্বী গোয়েন্দাকুল শুধু নয় আনকোরা, বইয়ের পাতায় বন্দি থাকা গোয়েন্দাদের পর্দায় উপস্থাপিত করার যে আত্মবিশ্বাস অরিন্দম দেখিয়েছিলেন, সেই সাফল্যের স্বাদ চেটেপুটে উপভোগ করেছে বাংলা সিনে ইন্ডাস্ট্রি। আর লাভবান হয়েছে বাংলা সাহিত্য। ফেলু মিত্তির বা ব্যোমকেশের পরিচিতি শবর বা মিতিন মাসির ছিল না। একনিষ্ঠ পাঠককুলের কাছেই তাঁরা ছিলেন পরিচিত। ছবির মাধ্যমে তাঁদের জনপ্রিয় করেছেন অরিন্দম। ‘শবর’-এর মতোই প্রথম ছবিতেই ‘মিতিন মাসি’কে পছন্দ করেছিলেন গোয়েন্দা-ছবির দর্শক। মিতিন মাসি হিসেবে পছন্দ করেছিলেন কোয়েল মল্লিককেও। কিন্তু এ-সব সত্ত্বেও ২০১৯-এর পুজোয় ‘মিতিন মাসি’ রিলিজের পর দীর্ঘ ব্যবধানে ২০২৩-এর পুজোয় ফের আসবে মিতিন মাসি তার নতুন অভিযান নিয়ে। কারণ, কোভিড ও কোয়েলের মাতৃত্ব। ছেলে কবীর একটু বড় হতেই ফের ‘জঙ্গলে মিতিন মাসি’কেই নিজের কামব্যাক ছবি হিসেবে বেছে নিয়েছেন কোয়েল।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
প্রয়াত সাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্যের ‘সারান্ডায় শয়তান’ গল্প অবলম্বনে তৈরি হচ্ছে ‘জঙ্গলে মিতিন মাসি’। ভাবা হয়েছিল মিতিন মাসির দ্বিতীয় ছবি হিসেবে করা হবে ‘কেরালায় কিস্তিমাত’ গল্পটি। কিন্তু আসন্ন বর্ষা ও সেই সময় কেরলের পরিস্থিতির কথা ভেবে পরিকল্পনা চেঞ্জ করে বেছে নেওয়া হয় ‘সারান্ডায় শয়তান’কে। ঝাড়খণ্ডের দলমা পাহাড়ের ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারিতে টানা ঊনত্রিশ দিনের শ্যুট শেষ হল সম্প্রতি। ছবির বেশিরভাগ অংশের শ্যুটিং হবে ঝাড়খণ্ডেই। অরিন্দম প্রথমে সারান্ডাতেই পুরো শ্যুটিং-এর কথা ভাবলেও নানা সমস্যায় তা স্থগিত রেখে ঝাড়খণ্ডকে বেছে নিয়েছিলেন। তবে ক্লাইম্যাক্স শ্যুট করতে যাবেন সারান্ডাতেই। তেমনই পরিকল্পনা।
আরও পড়ুন-বায়রনকে সংবর্ধনা
জঙ্গলে বন্যপ্রাণীরা ঘোর সংকটে। তাদের সংরক্ষণ নিয়ে যখন সর্বস্তরে চেষ্টা চলছে তখন কিছু দুষ্কৃতী বন্যপ্রাণী ও জঙ্গলের মূল্যবান সম্পদ পাচারের কাজে ব্যস্ত। সেই চোরাচালানের চক্র ভাঙতেই সারান্ডায় ডাক পড়েছে মিতিন মাসির। কিন্তু বাড়ির কাউকে সেকথা জানাননি তিনি। ফলে তাঁরাও পরিকল্পনা করে ওঁকে চমকে দিতে উপস্থিত হয়ে পড়েন সারান্ডায় এবং নিজেদের অজান্তেই জড়িয়ে যান রহস্যের জালে। অবশ্যই জাল কেটে বের করার দায়িত্ব মিতিন মাসিই নেবেন।
আরও পড়ুন-স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স
গল্পটি মূলত বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের ওপরেই লিখেছিলেন লেখিকা। অরিন্দম জানিয়েছেন, ‘‘এটি অবশ্যই একটি থ্রিলার গোত্রের ছবি। কিন্তু বিষয়ের কারণে একটা অন্য মাত্রা পেয়েছে। সারা পৃথিবী জুড়েই বন্যপ্রাণ রক্ষা, বনসম্পদ সংরক্ষণ এই মুহূর্তে আমাদের জন্য এত প্রাসঙ্গিক যে থ্রিলারের মাধ্যমেও মানুষকে সচেতনতার বার্তা দিতে পেরে ভাল লাগছে খুব। এ ধরনের বিষয় নিয়ে বাংলায় কোনও ছবি হয়নি এর আগে। মিতিন মাসির অ্যাডভেঞ্চার আট থেকে আশি সকলেরই পছন্দ। সুতরাং ছবির বার্তা সব বয়সি দর্শকের কাছেই পৌঁছবে এটা একটা ভাল দিক।’’ পরিচালক এ-ও জানিয়েছেন, শবরের চেয়েও মিতিন মাসির অভিযান দেখার আবেদন বেশি এসেছে তাঁর কাছে। কাজেই এ ছবি করতে পেরে বাড়তি ভাল লাগা।
কোয়েল নিজেও খুব উত্তেজিত ‘মিতিন মাসি’কে নিয়ে। ব্রেকে যাওয়ার আগে যে চরিত্র শেষ করেছেন, ব্রেক-ফেরত তার হাত ধরেই অবতীর্ণ হওয়া পর্দায় তাঁর কাছেও দারুণ থ্রিলিং। একই সঙ্গে পরিবেশ ও সংরক্ষণ নিয়ে সচেতনতা তাঁর নিজের মধ্যেও প্রবল। তাই ছবির গল্পের সঙ্গে একাত্ম হওয়াটা সহজ হয়েছে তাঁর। নিজের ফিটনেস ধরে রাখতে নায়িকা সর্বদাই সচেষ্ট। এ ছবিতে ফিটনেস জরুরি এ কারণেই যে মিতিন মাসি অ্যাকশনে পটু। কোয়েল জানেন সেটা। তাই সেইমতো প্রস্তুতিও নিয়েছেন।
আরও পড়ুন-মোবাইকে হাসপাতালে
মিতিন মাসির স্বামী পার্থ-র চরিত্রে আগেরবারের মতোই আছেন শুভ্রজিৎ দত্ত। মিতিনের দিদি ও জামাইবাবুর চরিত্রে কমলিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অসীম রায়চৌধুরী। টুপুর করছেন লেখা চট্টোপাধ্যায়। অরিন্দম মনে করেন এ ধরনের ছবিতে আবহ খুব জরুরি একটি বিষয়। ওঁর বেশিরভাগ ছবির ক্ষেত্রে যাঁর ওপর ভরসা করেন, এ ছবিতেও সেই বিক্রম ঘোষের ওপরেই মিউজিকের দায়িত্ব ছেড়েছেন। সেই সঙ্গে ছবির দুটি গানের সুরও বিক্রমের। একটি গেয়েছেন শুভা মুদ্গল ও অন্যটি ইমন চক্রবর্তী এবং স্যমন্তক। ছবিটি প্রযোজনার দায়িত্বে রয়েছেন ক্যামেলিয়া প্রোডাকশন প্রাইভেট লিমিটেড।
আরও পড়ুন-আবার কোপ! নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রম থেকে বাদ পর্যায় সারণি, ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা
এ বছর পুজোয় বেশ ক’টি বাংলা ছবির মুক্তির কথা আছে, যেগুলির বেশিরভাগই রহস্য-রোমাঞ্চ-অ্যাডভেঞ্চার গোত্রের। ‘জঙ্গলে মিতিন মাসি’ তাদের মধ্যেই একটি। সন্দেহ নেই লড়াই শুধু গোয়েন্দা ও ক্রিমিনালের মধ্যে নয়, গোয়েন্দাদের নিজেদের মধ্যেও লাগবে, দর্শক-মন জেতার লড়াই! মিতিন মাসি প্রস্তুত থাকবে জানিয়েছেন টিমের সবাই।