প্রতিবেদন : দেশের সমস্ত স্বশাসিত সংস্থাকে কুক্ষিগত করতে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে মোদি সরকার। ব্যতিক্রম নয় দেশের শীর্ষ আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিজার্ভ ব্যাঙ্কও। কেন্দ্রের এই হস্তক্ষেপের কারণে কীভাবে তিতিবিরক্ত হয়ে মোদির নিয়োগ করা গভর্নর উর্জিত প্যাটেল, ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্যের মতো শীর্ষ আধিকারিকরা মাঝপথে দায়িত্ব ছেড়েছিলেন সেই বিস্ফোরক তথ্য সামনে এল এবার।
আরও পড়ুন-মুসলিম পড়ুয়া নিগ্রহ-কাণ্ড, তদন্তে ঢিলেমির জন্য যোগী সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা সুপ্রিম কোর্টের
মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার দু’জন গভর্নরের সঙ্গে সাপে-নেউলে সম্পর্ক তৈরি হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় যে প্রথমে আরবিআই গভর্নর রঘুরাম রাজন এবং পরবর্তীকালে উর্জিত প্যাটেল দায়িত্ব থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। মোদির সঙ্গে দুই গর্ভনরের সংঘাত নিয়ে রাজন বা প্যাটেল কেউই প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। অবশেষে ৫ বছর পর সেই সংঘাতের ছবি স্পষ্ট হল প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গের সদ্য প্রকাশিত বই ‘উই অলসো মেক পলিসি’র সূত্রে। মিডিয়ার প্রতিবেদন সূত্রে প্রকাশ, গর্গ লিখেছেন, একটি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদি উর্জিতকে কুণ্ডলী পাকানো সাপের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। বলেছিলেন, এই ব্যক্তি টাকার থলির উপর সাপের মতো পাহারা দিয়ে বসে আছেন।
আরও পড়ুন-মুডিজ সংস্থার বিস্ফোরক রিপোর্ট, আধারে বাড়ছে তথ্য জালিয়াতি, সুরক্ষা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন
প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ তাঁর বইতে বছর পাঁচেক আগের সেই সংঘাতের কারণ ব্যাখ্যা করে লিখেছেন, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারত সরকার আরবিআইয়ের কাছে দুই থেকে তিন লক্ষ কোটি টাকা চেয়েছিল। নির্বাচনের আগে নানা প্রকল্পে ওই টাকা খরচ করার পরিকল্পনা ছিল কেন্দ্রের। কিন্তু আরবিআইয়ের তৎকালীন গভর্নর প্যাটেল সেই অর্থ দিতে রাজি হননি। শীর্ষ ব্যাঙ্কের অন্য কর্তারাও এই ব্যাপারে গভর্নরের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। নির্বাচনের আগে এই পরিস্থিতিতে চাপে পড়ে যায় মোদি সরকার। ২০১৮ সালে আরবিআই গর্ভনর ও প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক একেবারে তলানিতে এসে পৌঁছয়। এর মাঝে উর্জিত সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় তিক্ততা আরও বেড়ে যায়। বিরোধের মূলে ছিল সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির উপর দখলদারির ইস্যু। আরবিআই-কে পাশ কাটিয়ে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ক্ষমতা খর্ব করতে চাইছে বলে অভিযোগ তোলেন উর্জিত।
আরও পড়ুন-আজও রাজরীতি মেনেই হয় পাহাড়ের প্রথম দুর্গাপুজো
বইতে প্রাক্তন অর্থসচিব গর্গ আরও লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রীর মতোই উর্জিতের উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে চারদফা দাওয়াইয়ের কথা বলেছিলেন উর্জিত। যেখানে দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভকর প্রত্যাহার, রাজকোষ ঘাটতি মেটাতে বিলগ্নীকরণের লক্ষ্য বাড়ানো, এআইআইবি এবং এনডিবি-র মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ভারত সরকারের বন্ড কিনতে উৎসাহ দেওয়া এবং ছোট শিল্পকে দ্রুত কেন্দ্রের টাকা মেটানোর ব্যবস্থা। যদিও এগুলিকে ‘অবাস্তব’ তকমা দেন জেটলি। এরই মাঝে মোদি উর্জিত প্রসঙ্গে তোপ দেগে বলেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে বিপুল অর্থের ভাঁড়ার থাকলেও তা ভাগ না করে তার উপর সাপের মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে রয়েছেন গভর্নর। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছয় যে একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন প্রিন্সিপাল সচিব পি কে মিশ্র ছাড়া আর কারও সঙ্গে কথা বলতেন না উর্জিত। তখন উর্জিতকে দুষলেও পরে তাঁর বেশ কিছু প্রস্তাব গ্রহণ করতে বাধ্য হয় কেন্দ্র। উর্জিত পদত্যাগ করার পর নিজের পছন্দের শক্তিকান্ত দাসকে গর্ভরনর পদে বসান নরেন্দ্র মোদি।