প্রতিবেদন : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাধের ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান বর্জন করলেন মণিপুরের সাধারণ মানুষ। শুধু অনুষ্ঠান বয়কট করাই নয়, রবিবার ইম্ফল-মায়ানমার সড়কে বিক্ষোভ দেখিয়ে বহু রেডিও ভেঙে ফেলেন প্রতিবাদকারীরা। গত ৪৫ দিন ধরে জাতিগত সংঘর্ষে বিধ্বস্ত মণিপুর। প্রায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে সংঘর্ষে, আহত অসংখ্য। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন, উদ্বাস্তু হয়ে আশ্রয়শিবিরে দিনযাপন করছেন।
আরও পড়ুন-অশান্ত মণিপুরে এবার সেনাকে গুলি দুষ্কৃতীদের, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, বলল আরএসএস
রাজ্যের মন্ত্রী, বিধায়ক, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাসভবন ভস্মীভূত হয়েছে ক্রুদ্ধ জনতার লাগানো আগুনে। গত দেড় মাস ধরে সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত মণিপুর সম্পর্কে একটি শব্দও খরচ করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই অবস্থায় রবিবার মণিপুর-সহ দেশের মানুষ আশা করেছিলেন ১০২ তম মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মণিপুরে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আবেদন জানাবেন। কিন্তু মোদি ১৯৭৫-এর জরুরি অবস্থা, সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’-এর তাণ্ডবের কথা, ২১ জুন আন্তর্জাতিক যোগদিবস, ক্রীড়াক্ষেত্রে ভারতীয় খেলোয়াড়দের সাফল্যের কথা নিয়ে বহু কথা বললেও একটি শব্দও বলেননি মণিপুরের লাগাতার সংঘর্ষ, ধ্বংসলীলা আর প্রাণহানির ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে।
আরও পড়ুন-আবার জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব
প্রধানমন্ত্রীর আচরণে ক্ষিপ্ত মণিপুরের মানুষ রবিবার পথে নেমেছিলেন ‘আমরা মন কি বাত চাই না— আমরা চাই মণিপুর কি বাত’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে। আন্দোলনকারীদের নেতা খমদাম সুরেন্দ্র বলেছেন, ভোটের সময় হাতজোড় করে ভোট চাইতে মণিপুরে আসেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ, রাজ্যের সমস্যা সমাধানে সদিচ্ছা নেই তাঁর। এতদিন হয়ে গেল অরাজকতা চলছে, অথচ কোনও কথাই নেই তাঁর মুখে। মনে হচ্ছে যেন এই রাজ্য ভারতের বাইরে, তাই তাঁর মাথাব্যথা নেই।
আরও পড়ুন-মাননীয় রাজ্যপাল কি গোঘাটের এই ঘটনা দেখতে পাচ্ছেন, মনোনয়ন তুলতে তৃণমূলপ্রার্থীকে মার
সোমবার মণিপুর থেকে ৭৫ জন মহিলা দিল্লিতে এসে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মণিপুরে যাওয়ার সময় নেই এবং এমনকী একটি কথাও তিনি বলেননি। যেহেতু তাঁর মণিপুরে আসার সময় নেই, তাই আমরা শান্তির জন্য জয়েন্ট কো-অর্ডিনেটিং কমিটির ৭৫ জন মহিলা প্রতিনিধি দিল্লিতে এসেছি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। তাঁরা দাবি জানিয়েছেন, ভারত সরকার মণিপুরে বিভেদমূলক রাজনীতি এবং সম্প্রদায়ের লাইনে মানুষকে বিভক্ত করা বন্ধ করুক।
আরও পড়ুন-বিজেপি-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বোমা ফেটে আহত ৫ শিশু
অন্যদিকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-এর শরিক দলমিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ)-এর রাজ্যসভা সদস্যকে ভ্যানলালভেনা মণিপুরে শান্তি স্থাপনের জন্যে কেন্দ্রের কাছে দুটি পদক্ষেপ করার আবেদন জানিয়েছেন। এক, মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং সরকারকে অপসারণের সময় এসেছে। কেন্দ্রের উচিত মণিপুর রাজ্যকে রাষ্ট্রপতি শাসনের আওতায় রাখা। দুই, মণিপুরের মেইতেই এবং উপজাতি কুকি, উভয় সম্প্রদায়ের জন্য একটি পৃথক প্রশাসন তৈরি করা। মণিপুরে জাতিগত সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর কয়েক হাজার কুকি জনগোষ্ঠীর মানুষ ইতিমধ্যে মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছেন।