Children’s Day: হাত বাড়ালেই মা

এরপর ৫ থেকে ১২ এই সাত বছর, যখন সন্তান নার্সারি স্টেজ থেকে জুনিয়র স্কুলে যায়, সেই ফেজটা হল ‘ইন্টারপ্রেটেটিং ফেজ’।

Must read

আগামিকাল শিশুদিবস। তারই প্রাক্কালে শিশুর সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক নিয়ে খানিক আন্তরিক আলোচনা। আর আলোকপাত পারস্পরিক সম্পর্কের সাম্প্রতিক প্রেক্ষিতে। ভাবনাটি প্রাসঙ্গিক কারণ বিবর্তনের প্রভাব থেকে আবেগও মুক্ত নয়। প্রথাগত ধারণা থেকে বেরিয়ে চিরকালীন সম্পর্কেরও তাই নতুন লালন প্রয়োজন। বিষয়টিতে আলোকপাত করেছেন প্রীতিকণা পালরায়

আরও পড়ুন-Leander Paes: মাছের বাজার থেকে ফুটবল মাঠ, গোয়া মাতাচ্ছেন লিয়েন্ডার

মা ও সন্তানের সম্পর্ক সরাসরি সমাজ তৈরি করে, একথা বললে খুব ভুল কিছু কি বলা হয়? ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় ভুলও নেই, বাড়াবাড়িও নেই। নতুন প্রজন্মের সঙ্গে সমাজের প্রথম পরিচয় ঘটায় একজন মা। তাকে সামাজিকতার পাঠ দেয় একজন মা। তাকে সুনাগরিক গড়ে তোলার প্রাথমিক ধাপগুলোয় সবচেয়ে দায়িত্ববান হতে হয় একজন মা’কেই।

আরও পড়ুন-South East Railway: দক্ষিণ-পূর্ব রেল বাড়়াচ্ছে ট্রেন

এসবের কারণেই একজন নতুন প্রাণকে সোহাগে-শাসনে-আবেগে-আদরে কিংবা হরষে-বিষাদে একজন মাকে যে পরিমাণ দায়িত্ব নিতে হয় আর সতর্ক সান্ত্রীর ভূমিকা পালন করতে হয় তা হয়তো বাবাকেও ছাপিয়ে যায়। এটা শুধু আবেগ নয় কিন্তু এটা বিজ্ঞান। শুধু এই বিজ্ঞানে মিলেমিশে যায় জীব বিজ্ঞানের সঙ্গে সমাজ বিজ্ঞানও। সময়ের সঙ্গে পরিবর্তনশীল সামাজিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয় মাকেও। শাসনের সহজাত যে বিধিগুলোয় সে নিজে তার মেয়েবেলায় মুখোমুখি হয়েছে কিংবা স্নেহ-আদরের যে মধুর আবেগগুলো সে ভুলক্রমেও কখনও প্রশ্রয় ভাবেনি, ভাবনার হালখাতার সেই হিসেব-নিকেশগুলোর প্রতিনিয়ত পরিমার্জন না করলেই গোলমালের শুরু, শেষ কোথায় তা কেউ জানে না। কিছু কমন ফ্যাক্টর আছে যা যা প্রতি প্রজন্মে এসে কড়া নাড়ে। ধরন পাল্টালেও ধারা এক থাকে। সেগুলোর দিকে সামান্য আলোকপাত করলে বিষয়টা বোঝা বা তার প্রতিকারের উপায় পাওয়াও সহজ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন-নির্বিঘ্নে ভোট করতে তৎপর কমিশন

কেউ কথা রাখে না
অবোধ শিশু কিছু বোঝে না কিংবা কিছু মনে রাখে না, এ ধারণা আমাদের সবার। কিন্তু অবোধ শিশু ঠিক কোন সময়টা থেকে বোধ সম্পন্ন হয়ে ওঠে সে সম্পর্কেও কোনও সঠিক ধারণা আমাদের বেশির ভাগেরই থাকে না। ফলত ‘শিশু বলিয়া’ আমরা যে ছোট ছোট কথার খেলাপগুলো করে থাকি তার সঙ্গে কিংবা ব্যস্ততাজনিত উপেক্ষা অথবা প্রতিশ্রুতিভঙ্গ সবকিছুই সে তার মতো করে পরিলক্ষণ করতে থাকে। প্রকাশ করা বা বুঝিয়ে বলার ক্ষমতা না ধরলেও অনুধাবন বিলক্ষণ করতে পারে। মনে জমিয়েও রাখতে পারে। স্পর্শকাতরতার বিচারে যে যার মতো মনে জমাও করতে থাকে বড়দের এই ‘কথা না রাখা’র কাহিনি। আর সময় ও সুযোগমতো তা ফিরিয়ে দিতেও পিছ পা হয় না! উদাহরণ হিসেবে আঙুল তুলে দেখিয়েও দেয় ঠিক এমনটা তার সঙ্গেও কতবার হয়েছে।

আরও পড়ুন-Soumitra Chatterjee: সৌমিত্র স্মরণে মঞ্চে টাইপিস্ট

মাম্মা ডোন্ট প্রিচ
‘ওভার পোজেসিভ মাদার সিনড্রোম’ খুব চেনা বিশেষত ভারতীয় সমাজে। সন্তানরা সম্পত্তি এবং সে সম্পত্তির ব্যবহার বাবা-মায়েরা ইচ্ছেমতো করতে পারে এমন ভাবনা অনেক পরিবারেই থাকে। দিনের শুরু থেকে শেষ অবধি তাই প্রতিটি বিষয়ে টিকটিক চলতেই থাকে। একেবারে শিশু বয়সে মেনে নিলেও সামান্য বড় হতেই ব্যাপারটা বিরক্তির পর্যায়ে পৌঁছে যায় সন্তানদের কাছে। সে তার মতো করে কিছু হলেও স্পেস দাবি করে আর এ নিয়ে শুরু হয় সংঘাত। কর্মরতা মায়েদের চেয়েও হোম-মেকার মায়েদের ক্ষেত্রে এটি খুব কমন উপসর্গ। একটা সময়ে সন্তান তাই বিরুদ্ধাচরণ করে বলে ওঠে, প্লিজ মা, জ্ঞান দিও না সবসময়!

আরও পড়ুন-Fox Tragedy: বিধানসভায় আর্তি শিয়াল থেকে বাঁচান

কৃষ্ণ করলে লীলা
শৈশব, কৈশোর কাটতে না কাটতে প্রেমে পড়াটা এখন যত না বয়সের ধর্ম তার চেয়ে অনেক বেশি স্ট্যাটাস সিম্বল আর দেখনদারি। মুশকিল হল এক্ষেত্রে ওই আগের দিনের মতো চোখে চোখে রাখাটা খুব কাজে দেয় না। কারণ ফের সেই এক, যুগের সঙ্গে তাল মেলানো। আজকাল বেসিক নিডস-এর মধ্যে স্মার্ট ফোনটিও পড়ে। আর এর মাধ্যমেই মায়ের চোখের সামনেই মায়ের হাতের বাইরে বেরিয়ে যাবার সুযোগ সময়ই এনে দেয়। ভার্চুয়াল সম্পর্কের খুঁটিনাটির খোঁজ পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়লেও কিছু লক্ষণ মায়ের চোখ এড়ায় না। প্রেমে পড়ার বয়স তিনিও তো পেরিয়ে এসেছেন। খানিক ভয় আর অনেকটা সন্দেহ তাই দানা বাঁধে মায়ের মনে। খোলাখুলি কথা বলতে চাইলেই যে সন্তান তাতে সায় দেবে তা ঘটে না। কেউ মুখচোরা হলে কেউ আবার অ্যাগ্রেসিভও হয়। মুখের ওপর বলতে দ্বিধা করে না, কৃষ্ণ করলে লীলা আর আমরা করলে বিলা? এছাড়া বাবা-মায়ের প্রেমের বিয়ের কথাও আজকাল অনেক সহজ ও খোলামেলাভাবেই সন্তানদের গোচরে চলে আসে, তাই সেদিকে আঙুল দেখাতেও অনেকে পিছপা হয় না।

আরও পড়ুন-Jagadhatri Puja: তিন জগদ্ধাত্রী মা আজও চলমান ইতিহাস

এক টানেতে যেমন তেমন
একশোভাগ ক্ষেত্রে কৌতূহল দিয়েই শুরু হয় নেশা, স্কুলের শেষ ধাপে কিংবা হাই স্কুলের গোড়ায়। বিড়ি-সিগারেট-অ্যালকোহল এখন অতীত, গাঁজা কিংবা ড্রাগ হল ট্রেন্ড। প্রথম প্রথম হাতখরচের টাকা বাঁচিয়ে তারপর বন্ধুদের সঙ্গে মিলিজুলি সমঝোতা, আসক্তি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে শুরু হয় হাতটান। এই বয়সে প্রাথমিক কৌতূহল কমন। আর আজকাল ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মেয়েরাও এই কৌতূহলে দারুণভাবে এগিয়ে। নেশা করলে তা যত লুকানোর চেষ্টাই করা হোক না কেন, মায়েদের চোখ এড়ানো মুশকিলের। কিন্তু তার চেয়েও মুশকিলের মায়েদের রিঅ্যাকশন। হয় হতাশায় ভেঙে পড়া, নয় তীব্র অশান্তি। কৌতূহল যদি ইতিমধ্যে আসক্তিতে পৌঁছে যায়, এবার তা পরিণত হয় জেদে। নিজেকে রাজা-উজির ভেবে মা-বাবার সঙ্গে সংঘাতে যেতেও দ্বিধা করে না তারা। এতে সমস্যা বাড়ে বই কমে না।

আরও পড়ুন-Parking Plaza: কলকাতায় পাঁচ বহুতল পার্কিং প্লাজা

শরীর শুধু শরীর
সেক্স এডুকেশন নিয়ে আজকাল অনেক হইচই হয় চারদিকে। বিষয়টাকে স্কুলস্তরে নিয়ে যাওয়ার প্রশাসনিক উদ্যোগও চালু হয়েছে অনেকদিন কিন্তু তবু বিপদ সামলানো যায়নি। আর এই বিপদের শুরুও ওই কৌতূহল থেকেই। মুশকিল হচ্ছে শরীর সম্পর্কে কৌতূহল যুগে যুগে ছিল, আজও আছে, আগামীতেও থাকবে। কিন্তু যেটা ছিল অতীতে, বর্তমানে ক্রমশ উধাও হয়ে যাচ্ছে, তা হল ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর’। আজকাল শিশু-কিশোররা অনেক কম ভয় পায়। বাবা-মাকেও তারা টেকেন ফর গ্রান্টেড ভাবতে ভালবাসে। এর জন্য একতরফা তাদের দোষ দেওয়াও যায় না। কারণ স্ট্যাটাস-এ পিছিয়ে পড়তে বাবা-মায়েরাও আজকাল চান না।

তাই সন্তানকে খোলামেলা পোশাক পরার অনুমতি দেওয়া বা ফ্রি-মিক্সিং কিংবা নাইট আউটকে অ্যালাউ করা তাদের দিক থেকেও আকচার ঘটে থাকে। ফলত কোথায় থামতে হয় কিংবা কতটা এগোতে হয় কিছু সম্পর্কেই সম্যক ধারণা গড়ে ওঠার আগেই অনেক সুযোগ তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। এর সঙ্গে আছে আজকের ইন্টারনেট যুগের অবদান। যাবতীয় রসদ তাই মজুত হাতের কাছেই।

আরও পড়ুন-Pension Policy: পেনশন নীতির প্রতিবাদে ধরনা

শৈশব থেকে কৈশোর বা কৈশোর থেকে টিন-এজ-এ, উল্লেখিত এই অতি চেনা সমস্যাগুলো ছাড়াও আছে আরও নানাবিধ ফ্যাক্টর যেগুলিকে সমস্যা অবধি যাওয়ার আগেই সামাল দেওয়া যায়, অন্তত চেষ্টা করা যায়। আর এখানেই অগ্রণী ভূমিকায় থাকে মায়েরা। ভারসাম্যের চাবিকাঠিও তাদের হাতেই থাকে বেশিটা। কতটা শাসন আর কতটুকু সোহাগ তার অনুপাত পরিস্থিতি ও সন্তানের স্বভাব-চরিত্র- ধাতের ওপর নির্ভর করে তাই মাকেই ঠিক করতে হয় সন্তানের বেড়ে ওঠায় কীভাবে তিনি পাশে থাকবেন। একই ভাবে আধুনিকতা ও ট্র্যাডিশনের ব্যালান্সিং ফ্যাক্টরের ব্যাপারে তাঁকে নিজেকেও সচেতন থাকতে হয়।

আরও পড়ুন-Raw Jute: অমিল কাঁচা পাট, অভিযানে রাজ্য

ইদানীং সন্তানের সঙ্গে মায়ের বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে ব্যপক চর্চা হয়। এই চর্চা আরও প্রাসংগিক হয়েছে কোভিড-কালে। শুধু শিশু নয় সব বয়সি ছেলেমেয়েরাই দীর্ঘ সময় যাবৎ বন্ধুত্বহীনতায় ভুগছে। বয়সোচিত যে হাসি-ঠাট্টা-মজা-আমোদ তার দরজা বন্ধ আজ প্রায় দু’বছর। ভার্চুয়াল দুনিয়া আর আনন্দ দিচ্ছে না, ভার্চুয়াল বন্ধুত্বেও নেই সেই জোর। হাত বাড়ালে একজনকেই সবচেয়ে কাছে পাওয়া যায়, সে হল মা। কিন্তু সন্তান ও মায়ের সম্পর্ক কি সত্যই বন্ধুত্বের শেষ কথা হতে পারে? মা বন্ধু হয়ে উঠলেই উদ্ভূত সমস্যাগুলোর সহজ সমাধান পেয়ে যাওয়া সম্ভব? নাকি এও আর এক আবছায়া রাস্তা যেখানে আলো থাকলেও অন্ধকার রয়েই যায়?

পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট
পায়েল ঘোষ–এর সঙ্গে আলোচনায় অতি গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো উঠে এল তা এখানে তুলে ধরা হল। শিশু জন্মানোর পর, প্রতিটি ধাপে মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক ও সন্তানের লালন সম্পর্কে অতি সহজ কথায় অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পায়েল দিলেন যা মায়েদের যাত্রাপথ অবধারিত সহজ করে তুলবে।

মাতৃত্ব বা মাদারহুডের অনেকগুলো ধাপ আছে। সেই ধাপগুলোর মধ্যে প্রথম যে ফেজটা আসে তা হল ‘নারচারিং ফেজ’। ভূমিষ্ঠ হওয়া থেকে দু’বছর অবধি চলে এই ফেজ। এই সময়টায় মাকে শুধু ও শুধুমাত্র ফোকাস করতে হবে সন্তানের পুষ্টি বা অন্য গঠনমূলক দিকগুলোয়। এই ফেজ-এ ইমোশনাল এরিয়াগুলো নিয়ে কিছু মাত্র না ভাবলেও চলবে। সন্তানের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার দিকে খেয়াল রাখলেই হবে।

এরপর ২ থেকে ৫ বছরের যে সময়টা তা হল সবচেয়ে কঠিন ফেজ কারণ এই সময় থেকেই ধীরেধীরে মায়েদের মধ্যে অথরিটি ফ্যাক্টরটা আনতে হয়। কারণ এই বয়স থেকেই মা তার সন্তানকে ধীরে ধীরে সোশ্যাল স্কিলগুলো শেখাতে শুরু করে। বাচ্চা এই সময় থেকে স্কুল যেতেও শুরু করে। তাই সমস্ত খুঁটিনাটি দিকে নজর দেওয়ার সঙ্গে জীবনের বেসিক ভ্যালুগুলো সম্পর্কেও সন্তানকে অবগত করতে হয় মাকে। পারিবারিক নিয়ম-নীতি, ডিসিপ্লিন এগুলো মাকে সবসময় আদর কিংবা স্নেহ দিয়ে শেখালে হয় না, শাসন করেও শেখাতে হয়। তবে সন্তানের দুষ্টুমিকে সামলাতে সবসময় যে শাস্তিই জরুরি তা নয়, সংশোধন করাই আসল উদ্দেশ্য।

এরপর ৫ থেকে ১২ এই সাত বছর, যখন সন্তান নার্সারি স্টেজ থেকে জুনিয়র স্কুলে যায়, সেই ফেজটা হল ‘ইন্টারপ্রেটেটিং ফেজ’। মায়ের সঙ্গে সন্তানের বোঝাপড়া শুরু হওয়ার প্রথম ধাপ। বাচ্চার মুখ দেখেই মা এই সময় বুঝতে শুরু করে তার মনে কী চলছে, সে কিছু লুকোচ্ছে কি না, তার কোথাও খারাপ লাগছে কি না। এই স্টেজে তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হল ‘মিসটেকস আর ওয়েলকাম’। অর্থাৎ ভুল করলে সন্তান যাতে নির্দ্বিধায় বলতে পারে মায়ের কাছে, এবং এই আশ্বাস পায় যে ভুল করলে শুধু বকুনি নয়, মা সংশোধনেও সাহায্য করবে তাহলে সন্তানের পক্ষে তা খুবই ভাল। এই ফেজটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে শুধু মা নয়, সন্তানের দিক থেকেও মায়ের প্রতি একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়। মায়ের মনে কী চলছে, মায়ের শরীর বা মন কোনও কারণে খারাপ কি না এটা বাচ্চাও যদি বুঝতে পারে তবে বুঝতে হবে, পেরেন্টিং ঠিক পথেই এগোচ্ছে। অর্থাৎ পারস্পরিক ইন্টারপ্রিটেশন গড়ে উঠছে।

আরও পড়ুন-Qatar Worldcup: কলম্বিয়াকে হারিয়ে মূলপর্বে ব্রাজিল

এর পরের ফেজটা হল ১২ থেকে ১৭ বছরের যেটাকে আমরা বলি ‘টিন এজার ফেজ’। এই সময়টা হল ‘ইন্টার ডিপেন্ডেন্ট ফেজ।‘ অর্থাৎ আমিও তোমার ওপর নির্ভরশীল, তুমিও আমার ওপর নির্ভরশীল। এই সময় বাড়ির কাজকর্ম থেকে আরও অনেক ব্যাপারেই সন্তান মায়ের পাশে এসে দাঁড়ায়। একইভাবে এই বয়সি ছেলেমেয়েদের মধ্যেও তৈরি হয় নানা জটিলতা, তাদের মানসিকতাতেও আসে অনেক পরিবর্তন, সে সময় তারাও যাতে মাকে পাশে পায়, মাকে সব বলতে পারে, মা তার শ্রোতা হতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হয় মাকে। তবে এই সময় থেকে মায়েদের সন্তানকে আগলে রাখার জায়গাটায় আলগা দিতে হয় অল্প অল্প করে। সন্তানকে দিতে হয় তার প্রয়োজনীয় স্পেস। এটা মায়ের তরফেই শুরু হওয়া প্রয়োজন।

পরের ধাপটা হল মাতৃত্বের ‘ডিপারচার ফেজ’। এটা মায়েদের জন্য আমাদের পরিভাষায়, ‘এম্পটি নেস্ট সিনড্রোম’ অর্থাৎ খাঁচা শূন্য হওয়ার সময়। সন্তানরা এই সময় থেকে বাইরে পড়তে যায় বা নিজ জগতে ব্যস্ত হতে শুরু করে। তাই মায়েদের একটা শূন্যতা তৈরি হয় মনে। কিন্তু তাকে সামাল দেওয়ার কাজটা মাকে নিজেকেই করতে হবে। সন্তানের ওপর এর প্রভাব পড়াটা ঠিক নয়।

এই প্রত্যেকটা ধাপেই মায়ের ভূমিকা জরুরি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে মায়ের সঙ্গে সন্তানের বন্ধুত্বের যে বিষয়টা নিয়ে ইদানীং আলোচনা হচ্ছে, তাতে আমার স্পষ্ট মতামত, বন্ধুত্ব ও মেন্টরশিপ দুইয়েরই মিশেল দরকার। শুধু বন্ধুত্ব মায়ের সঙ্গে হওয়া মুশকিল, হলেও মুশকিল, কারণ মায়ের গাইডেন্স সন্তানের জন্য সবার আগে জরুরি।

আর একজন মেন্টরই পারে গাইড করতে। বন্ধুত্ব সেই গাইডেন্সের একটা মাধ্যম হতে পারে, কিন্তু একমাত্র হলে তা সন্তানের জন্য খানিকটা বিপদের হতে পারে। অনেকেই এর সুযোগ নিতে পারে। তাই বন্ধুত্ব কখনওই মাতৃত্বকে কিংবা মাকে ছাপিয়ে যেতে পারে না। হাত বাড়ালে সন্তান যেন যে কোনও বয়সে সবার আগে মাকে ‘মা’ হিসেবেই পায়, সে বিষয়টা মাথায় রাখা ভীষণ দরকার।

Latest article